ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভেদরগঞ্জে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ১ আগস্ট ২০১৬

ভেদরগঞ্জে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর, ৩১ জুলাই ॥ ভেদরগঞ্জ উপজেলার ১২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিশেষ করে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উপ-বৃত্তির টাকা সহকারী শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষকরা মিলে ভাগ-বাটোয়ারা করছে। শিক্ষার্থীদের নামের বিপরীতে ভূয়া মাস্টাররোল দেখিয়ে ব্যাংকে জমা দিয়ে অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষা অফিসার ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্মসাত করছে। শনিবার দুপুরে ভেদরগঞ্জ উপজেলার ১০৬ নং ছুরিরচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপ-বৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানান, ভেদরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে অবস্থিত ১০৬ নং ছুরিরচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩২২ শিক্ষার্থী পড়ছে। সুবিধা বঞ্চিত এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপ-বৃত্তির টাকা বন্টন করার সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম আলী আহাম্মদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা করে রেখে দিয়েছেন। শিক্ষার্থী সুমা খাতুনের পিতা আব্দুল খালেক, সাইফুল ইসলামের মা জহুরা বেগমসহ অভিভাবকরা জানান, তাদের সন্তানদের প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে ১২ মাসে ১ হাজার ২শ’ টাকা করে উপ-বৃত্তির টাকা প্রদান করার কথা থাকলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম আলী আহাম্মদ তাদের টাকা না দিয়ে আত্মসাত করেছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, কোন কোন শিক্ষার্থীকে প্রাপ্য উপ-বৃত্তির টাকা সম্পূর্ণ না দিয়ে অর্ধেক আবার কোন কোন শিক্ষার্থীকে এক-তৃতীয়াংশ টাকা দিয়েছেন। এছাড়াও বিদ্যালয় পড়াশোনা করে না এমন শিক্ষার্থীদের ভূয়া নাম লিখিয়ে উপ-বৃত্তির টাকা উত্তোলন করে তা আত্মসাত করছে প্রধান শিক্ষক। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক এসএম আলী আহাম্মদ বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের উপ-বৃত্তির কোন টাকা আত্মসাত করিনি। নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী একটি গ্রুপ আমার বিরুদ্ধে অপ-প্রচার চালাচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে জানান. উপবৃত্তির কার্ড তৈরির বাণিজ্যে নেমেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শ্রেণীর শিক্ষক। তারা সিন্ডিকেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কয়েক সপ্তাহে প্রায় কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে বলে জানা গেছে। যদিও সরকারী নির্দেশনা রয়েছে কোন টাকা বা চাঁদা নেয়া যাবে না। সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে এবং পড়ালেখার মানোন্নয়নে উপবৃত্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্রছাত্রীদের তথ্য সংগ্রহ করে কার্ড করার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তির কার্ড তৈরির জন্য অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে প্রায় প্রতিটি স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরসহ পাঁচ উপজেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৭০। বিশেষ করে জেলা-উপজেলা হতে বিচ্ছিন্ন দুর্গম চরাঞ্চল ও বরেন্দ্র অঞ্চলের ইউনিয়নসমূহের প্রতিটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০ থেকে এক শ’ টাকা করে চাঁদা তুলছে উপবৃত্তির কার্ড তৈরির নামে। একই অভিযোগ রয়েছে প্রায় প্রতিটি উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষাবিষয়ক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এসব কর্মকর্তার মদদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অধিক উৎসাহ নিয়ে দেদার টাকা তুলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা জানান, উর্ধতন কর্মকর্তারা বাধ্য করেছে কিংবা তাদের কড়া নির্দেশেই যাতায়াত ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য তারা চাঁদা তুলছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×