ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ-ভারত

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১ আগস্ট ২০১৬

জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ-ভারত

ভারতের নয়াদিল্লীতে দু’দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকটি নানা দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী সন্ত্রাসীদের ভয়াবহ নৃশংস হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করে প্রয়োজনে সব রকম সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেছিলেন। এরপর দু’দেশের প্রধান স্থলসীমান্ত বেনাপোলে সর্ববৃহৎ টার্মিনাল করিডর উদ্বোধনকালেও দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে একই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। অনেকটা তারই সম্প্রসারিত পুনরুক্তি ঘটেছে দু’দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এর বাইরেও তার দিল্লী সফরকালে সে দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন। সে সব বৈঠকেও দু’দেশের সরকার এবং সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাক্সক্ষা-উন্নয়ন সর্বোপরি সাম্প্রতিককালে আশঙ্কাজনকভাবে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী ও জঙ্গী হামলা মোকাবেলায় দু’দেশের করণীয় ও সহায়তা বাড়ানোর বিষয়টি সবিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে। এরই চূড়ান্ত ফলশ্রুতি হলো সন্ত্রাস দমনে প্রশিক্ষণ, সামর্থ্য বৃদ্ধি ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ে পারস্পরিক সহযোগিতা। মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে ভারতের পরিপূর্ণ সমর্থন এবং সহযোগিতার বিষয়টি বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশ সরকারকে অনুরূপ আশ্বাস প্রদান করে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গীবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে যথেষ্ট অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসহ যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেক অগ্রসর। সেদিক বিবেচনায় বাংলাদেশ তাদের কাছ থেকে উন্নত প্রশিক্ষণ কর্মসূচীসহ সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি এবং গোয়েন্দা তথ্যের সহায়তা নিতে পারে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে অনুরূপ আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। ভারত যে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু ঐতিহাসিক এই সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই। ১৯৭১ সালের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সর্বদাই বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। সব রকম সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করেছে। সে দেশে অবস্থানরত এক কোটি শরণার্থীকে দীর্ঘ কয়েক মাস আশ্রয় দেয়াসহ মানবিক ত্রাণ দিয়েছে। বাংলাদেশ সর্বদাই তা স্মরণ করে থাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে। ইতোমধ্যে ১৯৭৪ সালে দু’দেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নও সম্পন্ন হয়েছে সুচারুভাবে। সন্ত্রাসবাদ ও অবৈধ মাদক পাচার প্রতিরোধে দু’দেশের মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। ২০১৩ সালে সম্পাদিত বন্দী বিনিময় চুক্তিতে নতুন কিছু বিষয় সংযোজিতও হয়েছে বর্তমান সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গী হামলা মোকাবেলায়। এতে দু’দেশের মধ্যে বন্দী বিনিময় অপেক্ষাকৃত সহজ করা হয়েছে। খবর রয়েছে যে, গুলশান-শোলাকিয়ায় সংঘটিত জঙ্গী সন্ত্রাসী হামলার পেছনে মূল পরিকল্পনাকারী বর্তমানে আত্মগোপনে অবস্থান করছে ভারতে। অন্যদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সে দেশে গ্রেফতার সন্দেহজনক জেএমবি সদস্য নুরুল হক ম-ল ওরফে নাইমকে বাংলাদেশ ফেরত দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বলেও খবর আছে। এটা সত্য যে, বাংলাদেশ ভূখ-ে অনেক সন্ত্রাসী ও জেএমবি সদস্য সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে পালিয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা ও অন্যত্র। তেমনিভাবে ভারত থেকেও অনেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। ফলে এক দেশের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অন্য দেশের সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিনিময় প্রত্যর্পণ চুক্তির বিষয়টি সন্ত্রাসী তৎপরতা দমনে সবিশেষ সহায়ক হতে পারে।
×