ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সশস্ত্র বাহিনী থাকবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর অধীন ॥ এরদোগান

তুরস্কে সামরিক একাডেমি বন্ধ

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১ আগস্ট ২০১৬

তুরস্কে সামরিক একাডেমি বন্ধ

সামরিক একাডেমিগুলো বন্ধ করে দেয়া এবং সশস্ত্র বাহিনীগুলোকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অধীনে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে তুরস্ক। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান শনিবার এ কথা বলেছেন। ১৫-১৬ জুলাই এরদোগান সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর অব্যাহত সরকারের দমনমূলক পদক্ষেপ হিসেবে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে সরকারের দমনাভিযানের ফলে ৬০ হাজারের বেশি লোক আটক বা বরখাস্ত হওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। খবর গার্ডিয়ানের। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিকরি ইসিক রাষ্ট্র পরিচালিত এনটিভিতে জানিয়েছেন, ‘সেনাবাহিনী ঢেলে সাজানোর কাজ এখনও শেষ হয়নি।’ তিনি আরও জানান, অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর সরকারের শুদ্ধি অভিযান এখন মিলিটারি একাডেমিগুলোতেও চলবে। এতে কি ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে তা রবিবারের সরকারী গেজেটে আসার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ১ হাজার ৭শ’য়ের বেশি সেনাসদস্য বরখাস্ত হতে পারেন। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ওই রাতের অভ্যুত্থান চেষ্টা থেকে এরদোগান একটুর জন্য বেঁচে গেছেন। এই এখন পুরোপুরি নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। উল্লেখ্য, তুরস্কের সেনাবাহিনী ন্যাটোর দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক অংশীদার। তুর্কী সেনাবাহিনীর প্রায় ৪০ শতাংশ এ্যাডমিরাল বা জেনারেল ইতোমধ্যেই চাকরিচ্যুত হয়েছেন। তুরস্ক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র তুর্কী ধর্মীয় নেতা ফেতহুল্লাহ গুলেনকে দায়ী করেছে। ওই অভ্যুত্থানে ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার ও ফাইটার জেট নিয়ে সেনাবাহিনীর একাংশ এরদোগান সরকার উৎখাত করতে পথে নেমেছিল। সরকারের বক্তব্য, এতে ২৩৭ ব্যক্তি নিহত ও ২ হাজার ১ শ’য়ের ওপর লোক আহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা গুলেন অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তুরস্কের পশ্চিমা মিত্ররা সরকার উৎখাতের চেষ্টার সমালোচনা করেছে। একই সঙ্গে তারা অভ্যুত্থান পরবর্তীতে এরদোগান সরকারের নেয়া দমনমূলক পদক্ষেপগুলোতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এদিকে সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট সরকারের নেয়া পদক্ষেপে সশস্ত্র বাহিনীগুলো আরও শক্তিশালী হয়েছে বলে দাবি করেছেন এরদোগানা। শনিবার বেসরকারী টিভি চ্যানেল এহাবেরকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘যেসব ডিক্রি আমরা জারি করেছি তার ফলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীগুলো আরও শক্তিশালী হয়েছে। সেনা কমান্ডাররা এখন থেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করবেন। মিলিটারি স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে ... আমরা একটি জাতীয় প্রতিরক্ষা ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করব।’ এরদোগান এটাও চান যে জাতীয় গোয়েন্দা এজেন্সি ও আর্মি চীফ অফ জেনারেল স্টাফ এখন থেকে সরাসরি প্রেসিডেন্টের কাছে রিপোর্ট করবে। গোয়েন্দা এজেন্সি ও আর্মি চীফ অফ স্টাফ ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তাদের প্রেসিডেন্ট অধীন আনতে হলে প্রয়োজন হবে সংবিধান। এর জন্য পার্লামেন্টে বিরোধী দলগুলোর সমর্থন দরকার হবে। প্রেসিডেন্টের হাতে আরও নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে এরদোগান যে সংবিধান সংশোধন করতে চান নতুন এই পদক্ষেপ তারই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। তুরস্কে সেনাবাহিনীকে ধর্ম নিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রের অভিভাবক হিসেবে দেখা হয়। দেশটির দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে কুর্দি বিদ্রোহী ও সিরিয়া সীমান্তের কাছে আইএসের সঙ্গে চলমান লড়াইে সম্প্রতি সেনাবাহিনী বেশ চাপের মুখে আছে। সেনা কর্মকর্তারা শনিবার দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় হাক্কারি প্রদেশে অভিযান চালিয়ে ৩৫ কুর্দি জঙ্গীকে হত্যার দাবি করেছেন। এদিকে কুর্দি সমর্থকবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ করেছে যে, কুর্দিদের সঙ্গে ভেঙ্গে পড়া শান্তি প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করার যে সুযোগ এসেছিল জাতীয়তাবাদী চেতনাকে নিজের ক্ষমতা সুসংহত করার কাজে লাগিয়ে এরদোগান তা হাতছাড়া করেছেন।
×