ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তৌফিক অপু

জীবনে রবীন্দ্রনাথ

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১ আগস্ট ২০১৬

জীবনে রবীন্দ্রনাথ

আমার নয়ন ভুলানো এলে আমি কি হেরিলাম হৃদয় মেলে শিউলিতলার পাশে পাশে ঝরা ফুলের রাশে রাশে শিশির ভেজা ঘাসে ঘাসে অরুণরাঙা চরণ ফেলে নয়ন ভুলানো এলে বাংলাভাষা এবং বাঙালী জাতিসত্তার সঙ্গে যে ব্যক্তিটির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য, তিনি হলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যার ছোঁয়ায় বাঙালী সংস্কৃতির আধুনিক রূপায়ণ ঘটেছে। পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য কবিদের মধ্যে তিনি একজন। তাঁর সব্যসাচী হাতের স্পর্শে প্রাণ পেয়েছে বাংলা ছোট গল্পের সীমাবদ্ধ অধ্যায়। উপন্যাস, কবিতা ও নাটকে এসেছে বৈচিত্র্য আর সঙ্গীত সৃষ্টির ক্ষেত্রে তো এখনও তাঁকে বলা হয় অতুলনীয় স্রষ্টা। এছাড়া তিনি ছিলেন একাধারে সমাজ ও রাষ্ট্র চিন্তাবিদ এবং ভাষাবিজ্ঞানী। তবে তাঁর প্রধান পরিচয় তিনি কবি। শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় সামান তালে বিচরণ করা লেখকের সংখ্যা এখন পর্যন্ত কম, যে কারণে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই উচ্চারিত হয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। যিনি বাংলা শিল্প সংস্কৃতিকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়। আসছে ২২ শ্রাবণ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণদিবস, বাঙালী জাতির জন্য একটি স্মরণীয় দিন। যে দিনটি কখনই ভোলার নয়। নানা ধরনের আয়োজনে পালন করা হয় বিশ্বকবির মৃত্যুবার্ষিকি। প্রতিবারের ন্যায় এবারও এর ব্যক্তিক্রম হবে না। তবে প্রতিবছরই একটু একটু করে বৃদ্ধি পায় আয়োজনের পরিধি। বাঙালীর প্রাণের মানুষের এই জন্মদিন কিংবা মৃত্যুদিন পালনে থাকে না কোন কার্পণ্য। রীতিমতো উদ্দীপনা নিয়ে পালিত হয়ে থাকে তাঁর । এসব পালনে থাকে না জাতি-ধর্ম ভেদাভেদ। শুধুুমাত্র তার অতুলীয় সৃষ্টিকে উপজীব্য করে সবাই মিলিত হয় প্রাণের মেলায়। একেকজন একেক আঙ্গিকে পালন করে থাকে দিবসটিকে। জীবনে রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবনে যেন ওতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে আছে। হর্ষ, উৎফুল্ল,ক্লান্তি কিংবা বিষাদে রবীন্দ্রনাথ যেন প্রেরনা যোগায়। তাঁর লেখা কবিতা ও গান জাগিয়ে তোলে ভেতরের মানুষটিকে। সাহস জোগায় এগিয়ে যাবার। এ কারনেই হয়তো তিনি লিখেছিলেন, “বিপদে মোরে রক্ষা কর, এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়”। এ রকম নানা উপমা আমাদের জীবনে কে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। আজকের এ গ্লোবালাইজেশনের যুগেও জীবনের প্রতিটি বাঁকেই খুজে পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথ কে। তাঁর লেখনি থেকে জীবন সাজিয়ে নেয়া কিংবা শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছু আছে। যা আজ অবধি পথ চলতে কাজে লাগে। এ তো গেল রস আহরনের কথা। যদি একটু অন্যদিকে তাকাতে চাই তাহলে চোখে পড়বে ঘরের চৌকোণে ঠাঁয় দাড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনাত। তাঁর প্রতিকৃতি সম্বলিত পোট্রেট এখন প্রায় প্রতিটি ঘরেই চোখে পড়ে। শো-পিস মগ কিংবা গিফট আইটেমও শোভা পাচ্ছে তাঁর প্রতিকৃতি। সোফা কর্ণার কিংবা কুশন কভার পর্যন্ত যেন এ তালিকা থেকে বাদ যায় না। যদিও অনেকেই এটাকে আদিক্ষেতা মনে করে। তার পরেও অনেকের মতে এ সব কিছুই ভালবাসার বহি:প্রকাশ। কখনই এসবের উদ্দেশ্য কবিগুরুকে খাটো করা নয়। বরং শ্রদ্ধা ভরে স্বরণ করা। ফ্যাশনে আধিপত্য এই ধারাবাহিকতায় পিছিয়ে নেই ফ্যাশন হাউসগুলো। তারাও বিশ্বকবির জন্মদিন পালনে পোশাকী ভাবধারা বজায় রেখেছে। অর্থাৎ পোশাক-আশাকে বিশ্বকবির ভাবধারা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে। এ ব্যাপারে ফ্যাশন হাউস নিত্যউপহার এবং শঙ্খবারের কর্ণধার বাহার রহমান জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বাঙালীর শিল্প- সংস্কৃতি যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বাংলা সাহিত্যকে তিনি অন্য এক আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন। আমরা চেষ্টা করেছি শুধুমাত্র তাঁর ভাবধারা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে আনতে। আমরা যে সেক্টর নিয়ে কাজ করছি সে সেক্টরেই চেষ্টা করছি বিশ্বকবির ভাবধারা তুলে আনতে। যেমন টি-শার্টে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উল্লেখযোগ্য কবিতার পঙক্তি কিংবা বাণী ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁর মুখাকৃতি দিয়েও টি-শার্ট প্রস্তুত করা হয়েছে। শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজেও এই আবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সত্যিকার অর্থেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালী সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। পোশাকে রবীন্দ্রনাথÑশুধু এই ব্যাপারটিই নয়, এখন ফ্যাশন ট্রেন্ডে উৎসব কিংবা উপলক্ষভিত্তিক পোশাকের প্রচুর জনপ্রিয়তা। তরুণরা আগ্রহ ভরে কিনছে পোশাক। বিশ্বকবির ভাবধারা পোশাকে তুলে আনতেও তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। পোশাকগুলো পাওয়া যাবে দেশীয় বুটিক হাউস ছাড়াও বিভিন্ন ফ্যাশন আউট লেটে। যেমন রঙ, আড়ং, দেশী দশ ও আজিজ সুপার মার্কেটের বিভিন্ন আউট লেটে। দামও খুব বেশি নয়। একেকটি টি-শার্ট ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শর্ট পাঞ্জাবি ৭৫০ থেকে ১৪৫০ টাকা। পাঞ্জাবি ৮০০-১৮০০ টাকা। ফতুয়া ৫০০-১২৫০ টাকা। শাড়ি ৮৫০-২২৫০ টাকা। সালোয়ার কামিজ ৭৫০-১৬০০ টাকা। পোশাকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ভাবধারা তুলে আনায় ফ্যাশন ট্রেন্ডে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ কে কোন উপমা দিয়েই হয়তো বিশ্লেষণ করা যাবে না। তাঁর ভাবধারা কিংবা আদর্শে নিজেকে শাণিত করার চেষ্টটুকু হাতছাড়া কেউ করতে চাননা। জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে তিনি এমনই ভাবে বিরাজমান।
×