ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পোকেমনেই নতুন রং খুঁজছে সিরিয়ার শৈশব

প্রকাশিত: ১৮:৩৭, ৩১ জুলাই ২০১৬

পোকেমনেই নতুন রং খুঁজছে সিরিয়ার শৈশব

অনলাইন ডেস্ক ॥ টেম্পল রান বা ক্যান্ডি ক্রাশের দিন শেষ। ফেসবুকের চ্যাটবক্সও ইদানীং বেশ ফাঁকা। দুনিয়া এখন মজেছে নতুন রঙ্গে। ‘পোকেমন গো’। কার্টুন পাগল ছেলেবেলার অনেকটা জুড়ে থেকেছে এই ‘পকেট-মনস্টার’ তথা পোকেমনেরা। অলিগলি-রাস্তায় এ বার দেখা মিলবে ‘পিকাচু’, ‘চারমেলিয়ান’, ‘মিউটু’-দের মতো চরিত্রদের। শুধু প্লে-স্টোর থেকে নামিয়ে নিতে হবে এই বিশেষ গেম। তার পরই বেরিয়ে পড়া। কোন গলিতে, কোন বাঁকে দাঁড়িয়ে রয়েছে পোকেমনেরা তা কে-ই বা বলতে পারে! তবে এই পোকেমন পাগলামিতে বিপদও কিছু কম নেই।— ইতিমধ্যেই পোকেমন খুঁজতে বেরিয়ে গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে গুয়াতেমালার এক কিশোর। খোদ কলকাতার বুকে ন’বছরের একটি শিশু পোকেমন ধরার নেশায় মুম্বই যাবে বলে ট্রেনে চেপে বসে। ভিড় রাস্তায় গাড়িঘোড়া যানজটে পোকেমন ধরতে যাওয়াতেও রয়েছে হাজারটা ঝুঁকি ও দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও। তবে সব ঝুঁকি কিংবা বিপদের আশঙ্কা পেরিয়ে পোকেমনেই এ বার নতুন রং খুঁজে নিচ্ছে সিরিয়ার শৈশব। গুলিগোলা, রক্তে মাখা এক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আর রাতের অন্ধকারে বাসভূমি ছেড়ে পালিয়ে আসার স্মৃতি। সিরিয়ার গোটা শৈশব জুড়ে এখন কেবল তারই কালো ছায়া। সে দেশের প্রায় ৩৭ লক্ষ শিশু জন্মেছে এই অন্ধকার আবহে। কেউ বা আজন্ম অনাহারের শিকার, কেউ বা ছোট্ট চোখ মেলেই দেখেছে প্রিয়জনের লাশ। আর কারও জন্য ছিল আলান কুর্দির মতো তুরস্কের সমুদ্রসৈকতে বালিতে মুখ গুঁজে প্রাণহীন ঘুম। শরণার্থী সমস্যা নিয়ে অনেক আলোচনা-বৈঠক আর অঙ্গীকার মিললেও শেষমেশ থেকে গিয়েছে শুধু একরাশ হতাশা। জন্তুর মতো ভিড়ে ঠাসা শরণার্থী শিবিরগুলিতে এখনও একই রকম সঙ্কটে শৈশব। তবু সে সবের মধ্যেই যেন একটুকরো দমকা বাতাস এই ‘পোকেমন গো’। এ বার এই খেলা আঁকড়েই ফের নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে সিরিয়ার শিশুরা। কোথাও বা সেই সরল শৈশবেরই সমার্থক হয়ে উঠেছে পোকেমনেরা। আর তাকেই খুঁজতে চাইছে গোটা সিরিয়া। সম্প্রতি দ্য রেভলিউশনারি ফোর্স অব সিরিয়া মিডিয়া অফিসের (আইএফএস) তরফে টুইটারে বেশ কিছু ছবি পোস্ট করা হয়েছে। কোথাও দেখা গিয়েছে, পোকেমনের ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সিরিয়ার শিশুরা। আর সেই ছবিতে লেখা ‘আমাকে বাঁচাও’। কোথাও বা ধ্বংস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুর হাতে ধরা ‘সাইডাক’ পোকেমনের ছবি বলছে— ‘আমি সিরিয়ায়, বাঁচাও আমাকে’। কোথাও বা ভাঙা সিঁড়িতে বসে থাকা শিশুটির হাতে ধরা প্রিয় ‘পিকাচু’। ডেনমার্কের এক গ্রাফিক্স ডিজাইনার সইদ আলগিন একই রকম একটি গেম বানিয়েছেন, যার নাম ‘সিরিয়া গো’। ‘পোকেমন গো’ খেলাটিরই একটি সিরীয় রূপ বলা যেতে পারে এটিকে। সইদ জানাচ্ছেন, কোনও কাল্পনিক চরিত্র নয়, ঘরবাড়ি, ওষুধপত্রের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসই হয়ে উঠবে এখানে পোকেমন। তাঁদেরকে খুঁজে পেতে হবে খেলোয়ারদের। এই খেলার মাধ্যমে সইদ আসলে বোঝাতে চেয়েছেন, সিরিয়ার মানুষ আদতে কতটা অভাব এবং দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আসলে পোকেমন নয়, আরও একটু ভাল করে বাঁচতে চাওয়াটুকুকেই খুঁজে পেতে চান যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার মানুষ। ২৬ বছরের লুইস পার্ক ইরাকে স্থানীয় একটি দলের হয়ে আইএসের বিরুদ্ধে লড়ছেন। যুদ্ধের পাশাপাশি অবসরে সঙ্গী সেই পোকেমন গেম। কেবল ভাল থাকতে চাওয়াই নয়, পোকেমন গেম দিয়েই সন্ত্রাসের লাল চোখকেও প্রশ্ন করতে চাইছেন লুইস। মসুলে প্রথম পোকেমন ধরার পর ফেসবুকে গেমের একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করেছেন লুইস, বন্দুক ধরা হাতটিও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সেখানে। পাশাপাশি রয়েছে, আইএসের জন্য তাঁর সরাসরি বার্তা — ‘‘দায়েশ (আইএস), এসো, পারলে আমায় পোকেমন যুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করো!’’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×