ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাচ্ছেন আতিক

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৩১ জুলাই ২০১৬

অবশেষে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাচ্ছেন আতিক

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ ‘২০১০ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য আমাকে মনোনয়ন করা হয়েছিল। অথচ সেই পুরস্কারটা যে নিশ্চিতভাবেই পাচ্ছি, তা জানলাম দীর্ঘ ছয় বছর পরে! আজ (২৭ জুলাই, ২০১৬) এই একটু আগেই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে ফোন এল আমার কাছে। আমার ঠিকানা নিল ওরা। এই মাসের শেষে বা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে আমার হাতে পুরস্কারটা তুলে দেয়া হবে।’ ১৯৮৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শূটিংয়ে যিনি সর্বমোট ২৬টি পদক জেতেন, কথাগুলো সেই প্রখ্যাত আতিকুর রহমানের। তার সেরা সাফল্য ১৯৯০ কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণপদক জেতা যা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে যে কোন ক্রীড়াবিদের প্রথম কোন স্বর্ণজয়। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রাপ্তি প্রসঙ্গে এই শূটারের প্রতিক্রিয়া, ‘শুরুতে সংশয়ে ছিলাম পুরস্কারটা নিশ্চিত পাচ্ছি কি না। কেননা মনোনয়ন পাওয়া আর মনোনীত হওয়া তো এক জিনিস নয়। এটা ওদের বললামও। তারা বলেছে, ইনশাল্লাহ্ পাবেন।’ হতাশামাখা কণ্ঠে আতিক বলেন, ‘এই পুরস্কারটা তো আমার ১৯৯০ সালেই পাওয়ার কথা ছিল। পেতে পেতে দেরি হলো ২৬ বছর! অনেকে জীবিত অবস্থায় পুরস্কার পান না। ভেবেছিলাম হয়তো আমিও মরণোত্তর জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাব (যদি দেয়)! এজন্য আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। যাক, অবশেষে দেরি হলেও তো পাচ্ছি।’ আতিকের আফসোস, ‘আক্ষেপ একটাই এই পুরস্কারটা আমার অনেক জুনিয়র শূটারই আমার আগেই পেয়ে গেছে। এই যেমন সাবরিনা, রিংকি, আসিফ, রতœা ...। অথচ আমাকে সেই সময় বিবেচনাই করা হয়নি!’ মজা করে আতিক আরও যোগ করেন, ‘আমি ১৯৯৪ সালেই এর চেয়ে বড় পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছি। আমার সঙ্গে ড. মোঃ ইউনুসও পেয়েছেন। তারও আগে ১৯৯০ সালে পেয়েছিলাম জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার। এছাড়া ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির বর্ষসেরা পুরস্কারও পেয়েছি। বাকি ছিল জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারটাই।’ কেন? একুশে পদক ও রাষ্ট্রীয় পদক পাবার কোন যোগ্যতা নেই আপনার? ‘হয়তো নেই। যতদূর জানি খেলাধুলায় একুশে পদক মাত্র একজনই পেয়েছেন। ২০০৩ সালে আবদুল হামিদ, সেটা ক্রীড়া সাংবাদিকতায়।’ সবশেষে আতিকের আবেদন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার কমিটির সেসব ‘বিচক্ষণ’ ব্যক্তিবর্গের কাছে, ‘আমার বেলাতে এই যে এত দেরি হলো, এমন দেরি যেন আর কোন ক্রীড়াবিদের বেলায় না হয়। প্রাপ্যটা সঙ্গে সঙ্গে দিলে সেই ক্রীড়াবিদ আরও বেশি অনুপ্রাণিত হন এবং দেশের জন্য সাফল্য বয়ে আনতে আরও বেশি সচেষ্ট হন।’ একসময় প্রিন্টিং ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা আতিক এখন শূটিং ছাড়া আর কিছুই করেন না। এ নিয়ে মজাও করলেন, ‘বাড়ির মালিক হিসেবে এখন শুধু বসে বসে ভাড়া খাই। হা হা হা!’ উল্লেখ্য, দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অবদান রাখার জন্য ১৯৭৬ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রবর্তিত হয়। ছয় বছর নিয়মিত দেয়ার পর ১৯৮২ সাল থেকে বন্ধ হয়ে যায় এই পুরস্কার। ১৯৯৬ সালে আবার শুরু হয় পুরস্কার প্রদান। ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১৮৮ ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক পেয়েছেন এ পুরস্কার। এক ভরি ওজনের স্বর্ণপদক, সনদপত্র, নগদ ২০ হাজার টাকা ও একটি ব্লেজার দেয়া হয় পুরস্কারপ্রাপ্তদের। আতিক ছাড়া ২০১০ সালের জন্য অন্য মনোনীতরা হলেন : সাঁতারু মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার হারুন অর রশিদ ও নায়েক তকবির হোসেন (মরণোত্তর), এ্যাথলেট ফরিদউদ্দিন খান চৌধুরী, মাহমুদা বেগম ও নেলী জেসমিন, স্পেশাল অলিম্পিকের এ্যাথলেট নিপা বোস, জিমন্যাস্ট দেওয়ান নজরুল ইসলাম, সংগঠক মিজানুর রহমান মানু (সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন) ও এএসএম আলী কবির (সভাপতি, বাংলাদেশ এ্যাথলেটিক ফেডারেশন)।
×