ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বর্ণপদক জেতা সাবেক শূটার আতিকুর রহমানের

আন্তর্জাতিক মানের শূটার তৈরির চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৩১ জুলাই ২০১৬

আন্তর্জাতিক মানের শূটার তৈরির চ্যালেঞ্জ

রুমেল খান, চট্টগ্রাম থেকে ॥ আজ থেকে ৩২ বছর আগের কথা। চট্টগ্রামের দামপাড়ার পুলিশ লাইন্সে ১৯৮৪ সালে কয়েকজন উদ্যোগী শূটিংপ্রেমীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় মেট্রোপলিটন শূটিং ক্লাব। ৭ম-১০ম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা ছুটিরদিন ছাড়া অন্য যে কোন দিন বিকেল ৩টা থেকে ৬টার মধ্যে যোগাযোগ সাপেক্ষে এই ক্লাবে ভর্তি হতে পারে। ১৯৮৫ সালে এভাবেই এই ক্লাবে শূটার হিসেবে ভর্তি হয়েছিলেন আতিকুর রহমান। পরে তিনি হন দেশের সেরা শূটারদের একজন। স্বীয় নৈপুণ্যে প্রজ¦ালিত হয়ে খ্যাতি কুড়ান আন্তর্জাতিক পরিম-লেও। কালের পরিক্রমায় এই ক্লাবের কোচ এবং বর্তমানে আছেন ক্লাব কমিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে। চাটগাঁর কৃতী এই সন্তানের মন-প্রাণ জুড়ে আছে এই শূটিং ক্লাবটি। স্বপ্ন দেখেন এখান থেকে আগামীতে বের হবে আন্তর্জাতিক মানের শূটার, তারা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সফলতা অর্জন করে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করবে। ১৯৯০ সালে যখন আতিক আর আব্দুস সাত্তার নিনি কমনওয়েলথ গেমসে শূটিংয়ে স্বর্ণ জিতলেন (১০ মিটার এয়ার পিস্তলে, নিনির সঙ্গে দলীয়ভাবে), তখন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসেই সেটি ছিল প্রথম কোন আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক জয়ের ঘটনা। স্বভাবতই এটা দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল দেশজুড়ে। সেসব স্মৃতি আজও ভুলতে পারেন না আতিক। তার মানের শূটার এখন কোথায়? মেট্রোপলিটন শূটিং ক্লাবে গিয়ে দেখা গেল আতিক কিছু নবীন শূটারদের বিভিন্ন বিষযে পরামর্শ দিচ্ছেন। সেখানেই তার সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপন হয়। শুরুতেই জানান, ‘ফেডারেশন (বাংলাদেশ শূটিং স্পোর্ট ফেডারেশন) এখানে আমাদের একটি প্রোগ্রাম করতে দিয়েছে ‘এ্যানুয়াল পারফর্মেন্স এগ্রিমেন্ট’ (এপিএ প্রোগ্রাম)। ফেডারেশন থেকে এখানে নিয়মিত কোচ এসে এখানকার কোচ ও শূটারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যায়। সেটা তিন মাস পর পর দুইদিন করে। তারপর এই টার্গেটগুলো আমাদের ঢাকায় পাঠাতে হয়।’ বলতে গেলে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন শূটিং ক্লাবের শুরু থেকেই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন আতিক। এ প্রসঙ্গে তার স্মৃতিচারণ, ‘এটা স্থাপিত হয় ১৯৮৪ সালে। প্রথম তো এখানে কিছুই ছিল না। আমি এখানে যোগ দিই ১৯৮৫ সালে। এখানে আমাকে বালির ওপর দাঁড়িয়ে শূটিং করতে হতো! এখন যে পুলিগুলো দেখছেন, এগুলো সব আমার তৈরি। এপিএ প্রোগ্রামের শূটাররা ছাড়াও এই ক্লাবে ইন্টার ক্লাবের শূটাররাও এসে অনুশীলন করে থাকে। জাতীয় শূটাররাও করে। আগস্টে ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ের একটিশূটিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আমরা যাব।’ ক্লাবে ঢুকেই দেখলাম এই ক্লাবের যেসব শূটার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদক পেয়েছেন, তাদের সাফল্যের খতিয়ান দেয়া আছে (১৯৮৭-২০০৮ পর্যন্ত) একটি বড় আকারের বোর্ডে। মোট ৩৮টি সাফল্যের তালিকা। এর মধ্যে আতিকুরের নামই আছে সবচেয়ে বেশি, ২৬ বার (দ্বিতীয় স্থানে সাবরিনা সুলতানা, ৭ বার)! কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কেউই সাফল্য না পাওয়ায় বোর্ডের নিচের ঘরগুলো সব ফাঁকা পড়ে আছে (অবশ্য এই ক্লাবের শূটার সৈয়দা সাদিয়া সুলতানা ২০১০ এসএ গেমসে দলীয় স্বর্ণপদকসহ জাতীয় পর্যায়ে আরও কিছু পদক জেতেন, সেগুলো এখনও বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়নি)। এটা কেন? এই ক্লাব থেকে কেন প্রতিভাবান শূটার তৈরি হতে পারছে না? কেন পাচ্ছে না সাফল্য? চট্টগ্রামের ছেলে-মেয়েরা কেন শূটিংয়ে সেভাবে আসছে না? সমস্যাটা আসলে কোথায়? এই প্রশ্নের জবাবে আতিক রসিকতার ছলে যা বললেন, তাতে হাসির মধ্যেও লুকিয়ে ছিল একরাশ হতাশা, ‘আজকালকার ছেলেমেয়েরা তো অনেক সচেতন। শূটিংয়ে তারা মোটেও আগ্রহী নয়। এমনকি তাদের গার্জিয়ানরাও তো বলে, এগুলো করে কি হবে! আমাকে এও বলে, আপনি তো অনেক লেখাপড়া করেছেন। তাহলে চাকরি না করে এগুলো নিয়ে পড়ে আছেন কেন? সাদিয়া তো এই ক্লাবেরই শূটার। অথচ তাকে দেখেও অনুপ্রাণিত হন না তারা! এগুলো শুনে মাঝে মাঝে ভীষণ হতাশা লাগে। কিন্তু ভেঙ্গে পড়ি না। এই দেখুন, আমি অসুস্থ। তারপরও গত দুই মাস ধরে নিজেই আবারও প্র্যাকটিস শুরু করে দিয়েছি জেদ করে!’ এখানকার আন্দরকিল্লার রহমতগঞ্জে বাস করা আতিকের শেষ বাক্যটির সূত্র ধরে পাঠককে জানিয়ে দিচ্ছিÑ তিনি কিন্তু এখন আর শূটার বা শূটিং কোচ নন। এই ক্লাবে ১৯৯৭ সালে কোচ হিসেবে কাজ করেন আতিক। বর্তমানে তিনি ক্লাবটির সহকারী যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। শূটারদের টেকনোলজি দিকগুলো দেখিয়ে দেন। ক্লাবে এখন মানসম্পন্ন শূটার না থাকলেও আতিক প্রবল আশাবাদী, ‘এখনকার শূটাররা যারা আছে, তারা পড়াশুনা ও পরীক্ষা নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত যে শূটিংয়ের জন্য সেভাবে সময় দিতে পারে না। তারপরও আমি স্বপ্ন দেখছি এই ক্লাব থেকে আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের শূটার বের হবে। এটা আমার চ্যালেঞ্জ।’ ক্লাবটির কোন সমস্যা? ‘সমস্যা তো একটাই, ফান্ডের সমস্যা। একটা রাইফেল কিনতেই তো তিন-চার লাখ টাকা লাগে। এখানকার বেশিরভাগ পিস্তল-রাইফেলই ৫-১০ বছরের পুরনো। এজন্য দরকার প্রচুর স্পন্সর।’
×