ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শংকর লাল দাশ

অপার সম্ভাবনার ইলিশ

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৩১ জুলাই ২০১৬

অপার সম্ভাবনার ইলিশ

ইলিশ, নামেই যার পরিচয়।বিশ্বে যে পরিমাণ ইলিশ উৎপাদন হয় তার শতকরা ৬৫ ভাগ মেলে বাংলাদেশে। প্রতি বছর ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে প্রায় ১০ শতাংশ হারে।একটা সময় ছিল যখন ইলিশ প্রায় অধরা হয়ে উঠেছিল। অথচ পাঁচ-ছয় দশক আগে বাংলাদেশে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে টাকায় মিলত অন্তত এক কুড়ি মাছ। মূলত স্বাধীনতার পর থেকে ইলিশের সঙ্কট শুরু হয়, যা একপর্যায়ে তীব্র হয়ে ওঠে। সরকারের অব্যাহত নানামুখী প্রচেষ্টায় ধীরে হলেও ইলিশ ফিরে পাচ্ছে তার হারানো জৌলুস।আমিষের ঘাটতি পূরণ ছাড়াও ইলিশ নিয়ে রয়েছে অপার সম্ভাবনার সুযোগ। দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ইলিশের অবদান ১ শতাংশের বেশি। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের পরিমাণ শতকরা প্রায় ১৩ ভাগ। রফতানি খাতেও ইলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রতি বছর ইলিশ রফতানি করে দেড় শ’ কোটি টাকারও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। কর্মসংস্থানেও ইলিশ গুরুত্বপূর্ণ। ইলিশ আহরণে সরাসরি পাঁচ লাখ জেলে জড়িত। বিভিন্নভাবে ইলিশ আরও ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান করে থাকে।স্বাধীনতার পর ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মাত্র দেড় লাখ টন ইলিশ আহরিত হয়েছিল। এরপর থেকে আহরণ আরও কমতে থাকে। তবে ২০০১-০২ অর্থবছরে ইলিশের আহরণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ২০ হাজার ৫৯৩ মেট্রিক টনে। কিন্তু পরবর্তী অর্থবছর ২০০২-০৩ সালে আহরণের পরিমাণ কমে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩২ টনে দাঁড়ায়। এর দশ বছর পর ২০১২-১৩ সালে ইলিশ আহরিত হয় ৩ লাখ ৫১ হাজার টন এবং ২০১৩-১৪ সালে ৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন চার লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যেতে পারে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলগুলো থেকে। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির নেপথ্যে সবচেয়ে যে বিষয়টি কার্যকর হয়েছে তা হচ্ছে ইলিশ নিয়ে নানামুখী বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ও তার সফল বাস্তবায়ন। প্রজনন স্থলগুলো চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে জাটকা নিধন বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ। এর ফলে জাটকা নিধন অনেক কমে গেছে। বর্তমানে প্রতি বছর ১ নবেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকছে। গরিব জেলেদের দেয়া হচ্ছে খাদ্য সহায়তা। এছাড়া প্রজননস্থলগুলোসহ সারাদেশে প্রতি বছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমায় ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।প্রতি বছর প্রায় ৩৮ কোটি জাটকা ধরা পড়েছে। এর চার ভাগের এক ভাগ জাটকা এক কেজি ওজন পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা গেলে ইলিশের উৎপাদন বছরে আরও দু’লাখ টন বেড়ে যেত। গরিব জেলেদের শতভাগ খাদ্য সহায়তার আওতায় নেয়া হয়নি। আবার খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে মাত্র চার মাস। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণেই গরিব জেলেরা জাটকা শিকারে নামতে বাধ্য হচ্ছে। ইলিশের প্রজননকাল নিয়েও মাঠপর্যায়ে দ্বিমত রয়েছে। আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমা থেকে পরবর্তী আরেক পূর্ণিমা পর্যন্ত প্রজনন মৌসুম নির্ধারণের দাবি উঠেছে মাঠপর্যায় থেকে। নদীর মোহনাগুলোতে ব্যাপকহারে জাল পেতে রাখা এবং নদ-নদী, সাগরের যত্রতত্র নাব্য কমে চর জেগে ওঠায় ইলিশ স্বাভাবিক গতিতে ছুটতে পারছে না। ফলে প্রজনন কমে যাচ্ছে। এসব বিষয়ের প্রতি নজর দেয়া গেলে ইলিশ পাল্টে দিতে পারে বাংলাদেশ।
×