ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাইফুর রহমান সোহাগ

চোখে সোনার বাংলা হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৩১ জুলাই ২০১৬

চোখে সোনার বাংলা হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু

২৬ জুলাই, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এক বছর পূর্ণ হলো আমাদের। সর্বাগ্রে স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাঙালী জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা, বাঙালীর স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের মহান রূপকার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। হৃদয়স্ফুটিত ধন্যবাদ জানাই আমাদের প্রাণের নেত্রী, ছাত্রলীগের আদর্শিক অভিভাবক, দেশরতœ শেখ হাসিনাকে আমাদের ওপরে বঙ্গবন্ধুর নিজহাতে গড়া সংগঠন পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করার জন্য। এই এক বছর ছিল চোখে স্বপ্নের সোনার বাংলা, হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু আর প্রেরণায় দেশরতœকে নিয়ে ছাত্র রাজনীতির নতুন অধ্যায় সৃষ্টির। এই এক বছর ছিল আমাদের ভাল কিছু করার প্রচেষ্টার সময়। আমরা চেষ্টা করেছি প্রাণের সংগঠনকে আরও বেশি জনবহুল ও জনপ্রিয় করে গড়ে তুলতে। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের নেতাকর্মীরাই আমাদের প্রাণ, আমাদের স্পন্দন। তাদের গগনবিদারী সেøাগান আমাদের প্রেরণা দেয়, যোগায় সাহস। সংগঠনের প্রধান হিসেবে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমাদের অনেক সময় কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তবে সে অনুভূতিটা একেবারেই বাবা ও সন্তানের সম্পর্কের মতো। বাবা যেমন সন্তানকে তার ভুলের জন্য শাসন করলেও তার হৃদয় ব্যাকুল হয় পরম স্নেহে, আমাদের হৃদয়ও ঠিক তেমনি হয়। তবে সংগঠনের স্বার্থে সব সময় নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করতে পারি না। গত এক বছরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজপথে থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার বিষয়ে যেমন সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে ঠিক তেমনি জাতীয় স্বার্থে কাজ করেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিবেশ সুরক্ষায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার সাবেক ছিটমহল দাশিয়ারছড়ায় ৫০ হাজারেরও বেশি বৃক্ষরোপণ করেছে। আমরা এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ‘আমাদের সচেতনতাই সুরক্ষিত রাখবে আগামী প্রজন্মকে’ এই সেøাগানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পালন করেছি। সম্প্রতি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পার্শ্ববর্তী যেসব জেলা অপ্রত্যাশিতভাবে বন্যা আক্রান্ত হয়েছে সেই এলাকার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহের ছাত্রলীগ। নেতাকর্মীরা নিজেরা খিচুড়ি রান্না করে ওই এলাকায় বিতরণ করেছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতি বছরের মতো এবারও শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদান, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, আনুষ্ঠানিকভাবে সহস্রাধিক ব্যাগ রক্তদান করে সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশবিরোধী শক্তির বিষয়ে যেমন তৎপর ও আপোসহীন ঠিক তেমনি জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আঁধার সংহারি রণতূর্য। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী তার পাশের মানুষটির বিষয়ে সচেতন ও জ্ঞাত, যে কৌশল আমাদের দেশের প্রত্যেক সচেতন নাগরিক অবলম্বন করলেই জঙ্গীদের ঠাঁই এ দেশে হতো না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। জঙ্গী নির্মূলে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যত দিন এ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে লড়ে যাব জঙ্গীর বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রসারের এক ভ্রাম্যমাণ পাঠশালা। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং স্পৃহা তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে আমরা প্রাণান্ত চেষ্টা করছি। বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি দিবসে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা সভার আয়োজন করে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে মুজিব আদর্শের সৈনিক তৈরি করতে সুদক্ষ নেতাকর্মী সৃষ্টির লক্ষ্যে বর্ধিত সভা ও কর্মশালার আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের খাবারের মান, আবাসন, বেতন, যাতায়াত ব্যবস্থা, পরীক্ষার ফিস বহুমুখী অসুবিধা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে ফলপ্রসূ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে প্রভাবিত করেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলাদেশে ইতিহাস বিকৃতি রোধে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। বিকৃত ইতিহাসের প্রতিবাদে সঠিক ইতিহাস উপস্থাপন করে ও রাজপথে আন্দোলন করে জাতির কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। জানি না কতটুকু করতে পেরেছি। ব্যর্থতার সবটুকু দায়ভার আমাদের আর সফলতার সবটুকুর প্রশংসা দেশরতœ শেখ হাসিনার সার্বক্ষণিক নির্দেশনার। এক বছরের এই পথপরিক্রমায় শুধু এটুকুই বলব বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার সোনালি অতীতকে অনুসরণ করে আর বর্তমান প্রাণান্ত প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করে এক দিগন্ত প্লাবিত সাফল্যের সুউচ্চ শিখরে পৌঁছে যাবেই যাবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই তাদের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রেখে আমাদের কর্মতৎপরতাকে আরও সহজতর করার জন্য। পাশাপাশি আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি আগামী দিনগুলোয় আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের সাংগঠনিক মূল্যবোধ ও আদর্শিক অবস্থান অক্ষুণœ রেখে প্রতিটি পদক্ষেপ অতিক্রম করবেন যাতে আপনাদের কোন কর্মকা-ে আমাদের বিব্রত না হতে হয়, সর্বোপরি সংগঠনের শৌর্য ও সাফল্যে কোন বদনামের কালিমা না পড়ে। সবিশেষ, ‘রূপকল্প-২০২১’ ও ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নে প্রযুক্তি দক্ষ ছাত্রসমাজ তৈরিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করছে ও করবে। সম্প্রতি ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ১৯ দফা দাবি পেশ করেছে। ভবিষ্যতেও ছাত্রলীগ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ শিক্ষাসেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তাকল্পে কাজ করবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। নবীনদের মেধা দেশ গড়ার কাজে লাগুক, স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে বিধৌত হোক নতুন প্রজন্মের বিবেক ও চেতনা। অনাগত প্রজন্মের লড়াই হোক সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে, সব অশুভ শক্তিকে পেছনে ফেলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে, দেশ গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু! লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
×