ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানস ঘোষ

সাহসী যোদ্ধা মিতিল

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৩১ জুলাই ২০১৬

সাহসী যোদ্ধা মিতিল

আজকাল যখনই একাত্তরের কোন মুক্তিযোদ্ধার, বিশেষ করে যাদের সঙ্গে বিভিন্ন রণাঙ্গনে পরিচিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল, তাদের মৃত্যুর সংবাদ পেলে ভেতরটা যেন হু হু করে ওঠে। মনে হয় নিজের কোন পরমাত্মীয়কে হারালাম। আরও খারাপ লাগে এই কারণে যে, এভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। তাদের গোষ্ঠীটা সঙ্কুচিত হচ্ছে। মনোবলহীন হয়ে পড়ছে। তাদের জায়গা নেয়ার মতো বাংলাদেশে যোগ্য লোক নেই। গত শনিবার শাহরিয়ার কবির যখন আমায় ফোন করে জানাল শিরিন বানু মিতিলের মৃত্যুর সংবাদ, তখন আমার হৃদয়ের অনুভূতি ছিল ঠিক যেন পরমাত্মীয় হারানোর মতো। যদিও একাত্তরে পাবনার কালেক্টরে তার সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টার মতো কথা বলার সুযোগ হয়েছিল মাত্র একবার। মুক্তিযুদ্ধের পর ফোর্ট উইলিয়ামে প্রায় চার দশক পর বিজয় দিবসের এক অনুষ্ঠানে অল্পক্ষণের জন্য দেখা ও কথা হয়। ব্যস, ওই শেষ দেখা ও কথা। তা সত্ত্বে¡ও শিরিন আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় এবং অসীম সাহসী বুদ্ধিমতী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে এই কারণে যে, প্রচলিত ধার্মিক ও সামাজিক রীতিনীতির বিপরীতে গিয়ে সে তার দেশমাতৃকাকে পাকিস্তানের শৃঙ্খলমুক্ত করতে গিয়ে নিজের জীবনকে বাজি ধরেছিল। আমি নিজে তার প্রত্যক্ষদর্শী। আমি তাকে প্রথম দেখি একাত্তরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। তাকে যখন দেখি আমার বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, মেয়েটি নিশ্চিত কোন বামপন্থী ঘরানার ভরৎবনৎধহফ দুহিতা। না হলে শিক্ষিত মুসলিম মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে নিজের চুলটাকে ইড়ু পঁঃ-এর মতো কেটে এবং খাকি শার্ট, ফুল প্যান্ট ও ক্যানভাসের জুতা পরে ছেলে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ওঠাবসা ও অপারেশনে গিয়ে পাবনা শহরকে পাক হানাদারমুক্ত করার লক্ষ্যে বন্দুক নিয়ে যুদ্ধ করার সাহস পেল কোত্থেকে। পাবনাকে শত্রুমুক্ত করে শিরিনের মতো মুক্তিযোদ্ধারা। পুলিশ বা ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের সাহায্য ছাড়াই। শিরিন লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে পেরেছিল তার পারস্পরিক ঐতিহ্যের কারণে। তার মা ছিলেন এক ভরৎবনৎধহফ মস্কোপন্থী মোজাফফর ন্যাপের সাহসী নেত্রী। তার মা সেলিনা বানুকে আমি বাহাত্তরের মার্চ মাসে ঈশ্বরদীতে বঙ্গবন্ধুর এক বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা মাঝপথে থামিয়ে তাকে বলেছিলেন ‘আপনি মুজিব বাহিনীকে সামলান তাদের কাজকর্ম আপনার বদনাম করছে।’ সে সময় বঙ্গবন্ধুর জনসভায় তাঁর বক্তৃতা থামিয়ে তাঁর কাছে তাঁর দলের ছেলেদের বিরুদ্ধে নালিস করার দুঃসাহস ছিল এক অকল্পনীয় ব্যাপার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সৌজন্যবোধ দেখিয়ে সেলিনার সব অভিযোগ মন দিয়ে শুনলেন এবং তাকে আশ্বস্ত করলেন এই বলে ‘সেলিনা আমার ওপর বিশ্বাস রাখো। এর বিহিত আমি করবই।’ ওই জনসভা শেষ হলে আমি সেলিনা বানু ও শিরিনের পিতা যিনি কমিউনিস্ট পার্টি করতেন, তাদের কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে বলি ‘এখন বুঝি বোন শিরিন কেন মুক্তিযোদ্ধা হয়েছিল। ভরৎবনৎধহফ মায়ের ভরৎবনৎধহফ মেয়ে তো হতেই হবে।’ শিরিনকে আমার অসামান্য লেগেছিল। কারণ আমি তখন যশোর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহীর বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের খবর যোগাড় করতে গিয়ে প্রচুর মুক্তিযোদ্ধাকে দেখেছি; কিন্তু কোন তরুণী মুক্তিযোদ্ধা নজরে পড়েনি। আমি তখন রোজ অফিসের গাড়ি করে দর্শনা হয়ে চুয়াডাঙ্গা যেতাম। চুয়াডাঙ্গা ছিল মুক্তিযুদ্ধের পশ্চিমাঞ্চলের সদর দফতর। কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী ছিলেন ওই অঞ্চলের প্রধান। একদিন সেখানে গিয়ে দেখা হলো পাবনার ডিসি বা ডেপুটি কমিশনার নুরুল কাদের খানের সঙ্গে, যিনি কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তানের (সিএসপি) এক দুঁদে আমলা। গিয়ে দেখি নুরুল কাদের তার ক্যান্টাব ধপপবহঃ-এ অনর্গল ইংরেজীতে কথা বলে চলেছেন। কলকাতার এক ভারতীয় সাংবাদিককে দেখে চমকে বলে উঠলেন ‘মড়ড়ফ ঃড় ংবব ধহ ওহফরধহ ৎবঢ়ড়ৎঃবৎ যবৎব’ তিনি বললেন, চুয়াডাঙ্গায় তিনি অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদ নিতে এসেছেন। কেননা পাক বাহিনী পাল্টা আক্রমণের ছক কষে পাবনা পুনর্দখল করতে চাইছে। হঠাৎ আমাকে উদ্দেশ করে বলে উঠলেন Ô He need lots of arms to take on the palace can you get this message across to delhi? Maû of my Cambridge classmates are in key positions in delhiÕs south and north block. But i am out of touch with them. Hence seek your help. c«Z¨yˇi Avwg ejjvg ÔCertainly I will do that with pleasure. But I have a request, can I accompaû you to pabna? Avgvi Aby‡iva ï‡b Zvi PURjw` DËi wQj Ôat your own riskÕ. তারপর একটা প্রায় অকেজো বাষ্পচালিত ইঞ্জিন যোগাড় করে তার সঙ্গে দুটো রেলের বগি জুড়ে দিয়ে তাতে স্তূপীকৃত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঈশ্বরদীর পথে পাড়ি দিলাম। সে ছিল এক রুদ্ধশ্বাস পরিক্রমা কাম অভিজ্ঞতা। ভোর পাঁচটায় যখন ঈশ্বরদী পৌঁছি স্টেশনে দেখি প্রচুর মুক্তিযোদ্ধা। ডিসি সাহেব শুধু অস্ত্রশস্ত্র নয় সঙ্গে করে ভারতীয় সাংবাদিকদের এনেছেন। এই খবর চাউড় হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের খুঁজতে শুরু করে। আমার কাগজের চিত্র সাংবাদিক শ্যামদাস বোস এবং এক সহযোগী সাংবাদিক চন্দ্র শেখর সরকার ও আমায় তারা ঘিরে ধরে। তখনই আমার চোখ পড়ে শিরিনের ওপর। শারীরিকভাবে রফিকুল ইসলাম বকুল বা ইকবালের মতো সে বলিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা নয়। বরং সে খুব শীর্ণ ও লাজুক প্রকৃতির। আমার কাছে এসে বলল, ‘নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত’। আমার হাত থেকে প্রায় জোর করে এয়ার ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে সে জিজ্ঞাসা করল ‘দামী কিছু নেই তো’? উত্তর দেয়ার আগেই সে বলে ওঠে ‘যুদ্ধের খবর করতে এতো ঝুঁকি নিয়ে আমাদের পাবনায় এসেছেন। আমাদের মেহমানদারি করতে দিন। ডিসি আমাদের বকুল, ইকবাল ও শিরিনের হাতে সঁপে দিয়ে কালেক্টরেটে চলে গেলেন। পাবনা শহরের বিভিন্ন রণাঙ্গন দেখে কালেক্টরেটে পৌঁছেই দেখি ডিসি সাহেব উৎকণ্ঠায় তাঁর চেম্বারে পাঁয়চারি করছেন। ঢুকেই কিছু বলার আগে তিনি বলে ওঠেন, ঞযবংব ধৎব ফধহমবৎড়ঁং ঃরসবং. ও ধিং ড়িৎৎরবফ ধনড়ঁঃ ুড়ঁ ধষষ. আমি তাঁর উৎকণ্ঠা কাটাবার জন্য বলি ‘আমি বিভিন্ন রণাঙ্গনে গেছি; কিন্তু কোন তরুণী মুক্তিযোদ্ধার দর্শন পাইনি। তাই শিরিনকে আমি দেখে বিস্মিত। সত্যি একেই বলে ধন্যি মেয়ে। উত্তরে নুরুল বললেন, ডব যধাব সধহু ংযবৎরহং রহ ঠধৎরড়ঁং নধঃঃষবভরবষফং. ঘড়ঃ ধৎব ধষষ ারংরনষব. ইঁঃ ংযবৎরহং রং ধহ বীপবঢ়ঃরড়হ. ও ফড়হ’ঃ ধিহঃ যবৎ ফরৎবপঃষু মড়ঃ রহাড়ষাবফ রহ নধঃঃষবফ. ডিসি সাহেবের সঙ্গে কথা শেষ হতেই শিরিনকে জিজ্ঞাসা করি ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে কেন মুক্তিযুদ্ধে নামলো? তোমার মতো মেয়েরা এই বয়সে লেখাপড়া, বিয়ে-শাদীর কথা ভাবে।’ শিরিনের উত্তর শুনে আমি তাজ্জব বনে যাই। ‘এপার বাংলার মেয়েরা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও কল্পনা দত্তের উত্তরসূরি। তারা আমাদের যে পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন সেই পথেই আমরা চলতে অভ্যস্ত। তিন দশকের বেশি পাকিস্তানী শাসনের কারণে আমাদের অনেক মনমানসিকতা বদলেছে, যে কারণে চুলটাকে বয়কাট দিতে বাধ্য হয়েছি। আর শাড়ি ছেড়ে শার্ট, প্যান্ট পরতে হয়েছে। না হলে আমি শাড়ি পরেই যুদ্ধ করতাম। আমি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি। বঙ্গবন্ধু ঠিকই বলেছেন বাঙালীর জন্য পাকিস্তান হয়নি। সেইজন্য শুধু আমি নই, আমার পুরো পরিবার মুক্তিযুদ্ধে লড়াই করছে। শিরিন যে এক নির্ভীক সৈনিক ছিল তার প্রমাণ পেলাম হাতেনাতে। হঠাৎ কালেক্টরেটে ২০/২৫ জনের একটি সশস্ত্র দলের উদয় হলো। সকলের হাতে চীনা অটোমেটিক রাইফেল। তারস্বরে তারা চেঁচিয়ে বলছে ‘চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান। মাওসেতুং লাল সেলাম।’ তারা ডিসির চেম্বারের দিকে রাইফেল তাক করে বলছে ‘আমাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ডিসি তাদের দাবি-দাওয়া সম্বন্ধে কথা বলুক। ‘তাদের কয়েকজন আকাশে তাক করে কয়েক রাউন্ড গুলিও ছুড়ল। শিরিন একজনকে চিহ্নিত করে বলল, ‘ওই লোকটা হচ্ছে টিপু বিশ্বাস। এরা আপনাদের নক্সালদের মতো মাও-এর ভক্ত।’ হঠাৎ শিরিন ওদের উদ্দেশ করে বলে ওঠে ‘এটা কি এসব করার সময়? আপনারা বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা, বেইমানি করছেন। আপনাদের লজ্জা করে না? বাঙালীরা আপনাদের কোনদিন ক্ষমা করবে না। আপনাদের অভাব-অভিযোগ থাকলে ডিসি সাহেবকে স্মারকলিপি দিয়ে যান। কিন্তু ডিসি সাহেব মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খুবই ব্যস্ত তাঁকে অযথা ডিস্টার্ব করবেন না।’ কালেক্টরেটে টিপু বিশ্বাসদের উপস্থিতির খবর পেয়েই রফিকুলের মতো মুক্তিযোদ্ধারা বেশ কয়েকজন টয়োটা করে সেখানে উপস্থিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে টানটান উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। রফিকুল ও টিপুর লোকেরা একে অপরের দিকে রাইফেল তাক করে অবস্থান নেয়। আমার মনে হলো এই বুঝি দুই বিবাদী পক্ষ সম্মুখ সমরে নেমে পড়ে। দুই পক্ষই মারমুখী। তখন অন্য এক শিরিনকে দেখলাম। কালেক্টরেটের দোতলা থেকে নেমে সে সোজা দুই পক্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দুই পক্ষকে কালেক্টরেট ছেড়ে চলে যেতে বলল। কিন্তু কোন্ পক্ষ আগে যাবে তা নিয়ে গোল বাঁধল। পাবনার আকাশে হঠাৎ দুটি এক ইঞ্জিনের ছোট বিমানের আবির্ভাবে এক কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো। ডিসি সাহেব কালেক্টরেটের দোতলার বারান্দা থেকে রফিকুলদের উদ্দেশে বললেন, টিক্কা খান প্লেনগুলো পাঠিয়েছে ‘রেকি’ করতে। কারণ সে ঢাকা থেকে এক বিশাল বাহিনী সড়কপথে পাঠিয়েছে পাবনা পুনর্দখলের লক্ষ্যে। সঙ্গে সঙ্গে রফিকুল জানান, ‘আমরা তাহলে নগরবাড়ি ঘাটে গিয়ে হানাদার বাহিনীর মোকাবেলা করি। কারণ এই বাহিনী ফেরি করে নগরবাড়ি ঘাটেই নামবে। আমরা ঐ সময় সবাই ডিসির চেম্বারে ফিরে বসতে যাচ্ছি, তখন ঘরে হাঁপাতে হাঁপাতে ঢুকলেন ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা। বললেন, ‘পাক বাহিনী পাঁচটি ফেরি করে নগরবাড়িতে নেমেছে এবং পাবনা শহরের দিকে এগোচ্ছে। নগরবাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তারা ভারি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসেছে। আমরা অটোমেটিক রাইফেল ও মর্টার দিয়ে সামাল দিতে পারছি না।’ তা শুনেই নুরুল কাদেরের নির্দেশ, মালপত্র গুটান এবং কুষ্টিয়ার উদ্দেশে যাত্রা। তার পোর্টেবল ওয়ারলেস সেটে খবর আসছে পাক আর্মিরা দারুণ বেগে পাবনার দিকে এগোচ্ছে। আমাকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘অষষ ঃযৎবব ড়ভ ুড়ঁৎ ধপপড়সঢ়ধহু ঁং ঃড় কঁংযঃরধ ড়ৎ বষংব ুড়ঁ রিষষ মবঃ ংঃৎধহফবফ ধহফ ঃযব চধশরংঃধহরং রিষষ সধশব সরংপৎবধহঃ ড়ভ ুড়ঁ. শিরিনকে রফিকুল ও ইকবালদের মতো মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সঁপে দিয়ে পাবনা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। বললেন, তোমরা আলাদাভাবে এসো। পদ্মা পার হতে হবে। তোমাদের নৌকার ব্যবস্থা করে রাখছি।’ নুরুল কাদেরের সব নির্দেশ শুনে শিরিনকে ভীত আতঙ্কিত বা সন্ত্রস্ত বলে মনে হলো না। বরং বার বার বলতে শুনেছি ‘আপনারা এগোন, আমরা আসছি। এক সঙ্গে পদ্মা পার হওয়া সঠিক কাজ হবে না’ বলে সে মুক্তিযোদ্ধাদের দলে ভিড়ে গেল। এমন পরিস্থিতিতেও তাকে স্থির শান্ত দেখাচ্ছিল। শিরিনের মতো মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে আমি মর্মাহত। আর যারা ঞযব ংঃধঃবংসধহ-এ আমার লেখা শিরিনের বীরত্বের গাথা পড়ে তাকে কুর্নিশ জানিয়েছিল তারাও। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় সে এই মহাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে ছিল এক অতি গর্বের রোল মডেল। বাংলাদেশ সরকার ও সমাজের উচিত ছিল মুক্তিযুদ্ধে শিরিনের অবদানের কথা দেশের যুবসমাজের সামনে তুলে ধরা। কিন্তু তা করা হয়নি। আমি জানি না মৃত্যুর পর তাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছিল কিনা। যে মেয়েটি কয়েক প্রজন্মের তরুণ-তরুণীর কাছে আদর্শ ও অনুপ্রেরণা হতে পারত তাকে অবহেলা ও অগ্রাহ্যের শিকার হতে হয়েছে। ফলে ধর্ম ব্যবসায়ীরা ফাঁকা মাঠে গোল দেবে না তো কি করবে। এখন তরুণ প্রজন্মের মগজ ধোলাই করে তাদের বিপথে চালিত করার প্রয়াস চলছে। পরিশেষে আমি শিরিনের আত্মার শান্তি কামনা করি। লেখক : ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক
×