ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিপিও সামিটে ’২১ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলার আয়ের আশাবাদ

আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস হবে আউটসোর্সিং

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩১ জুলাই ২০১৬

আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস হবে আউটসোর্সিং

ফিরোজ মান্না ॥ ভিশন ২০২১ সালের মধ্যে বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) খাত থেকে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের আশা জাগিয়ে শুক্রবার রাতে শেষ হয়েছে ‘বিপিও সামিট বাংলাদেশ- ২০১৬’। এই সময়ের মধ্যে দেশে বিপিওতে এক লাখের বেশি তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। এ বছর বিপিও খাত থেকে ১৮ কোটি মার্কিন ডলার আয় হয়েছে। ২০১৫ সালে আয় ছিল ১৩ কোটি মার্কিন ডলার। আগামীতে এই খাত হবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় একটি উৎস। এজন্য সরকার আইসিটি খাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পরিকল্পনাগুলোর মাধ্যমে তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য করে গড়ে তোলা হচ্ছে। দ্বিতীয় বারের মতো দুই দিনের বিপিও সামিটে আউটসোর্সিংয়ের ওপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন ২৩ জন বিদেশী তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও দেশের ৪৪ জন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। সামিটে মোট ১২টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামিট উপলক্ষে বিপিও খাতে চাকরি প্রত্যাশীদের প্রায় ২১ হাজার বায়োডাটা জমা পড়েছে। এছাড়া দেশে বিপিও খাতে বিশেষ অবদান রাখায় একটি বিদেশী ও ৭টি দেশী প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এবারের সামিটে ২৫ হাজারের বেশি দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল। বিভিন্ন সেমিনারে বলা হয়, দেশের তরুণ-তরুণীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দু’দিনের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এই আহ্বান জানান। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, এখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা আইনজীবী হওয়ার চেয়ে আমাদের তথ্য-প্রযুক্তির দিকে নজর দেয়া উচিত। আমরা চাই আমাদের তরুণরা উদ্যোক্তা হোক। নিজের পায়ে দাঁড়াক। আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং, আইটি কোম্পানি করুক। এভাবে নিজেদের কর্মসংস্থান ও ভবিষ্যত নিশ্চিত করে দেশটাকে তারা অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাক। সরকারের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সেবা এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে হচ্ছে। ডিজিটাল সেবায় বাংলাদেশ যত দূর এগিয়েছে, এটা সাত বছর আগে চিন্তাও করা যেত না। ২০০৮ সালেও দেশে বিপিও বলতে কিছু ছিল না। আগামী কয়েক বছরে বিপিওসহ সফটওয়্যার খাত থেকে যে রফতানি আয় হবে, তা গার্মেন্টস শিল্পকেও ছাড়িয়ে যাবে। ২০০০ সালে বিপিও থেকে মেক্সিকোর রফতানি ছিল মাত্র ৫০ মিলিয়ন ডলার। এখন তা ৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। মেক্সিকো যদি পারে, বাংলাদেশ পারবে না কেন? মেক্সিকো যে লক্ষ্য ১৫ বছরে অর্জন করেছে, বাংলাদেশ সেই লক্ষ্য ১০ বছরের কম সময়ে অর্জন করতে সক্ষম হবে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশের তরুণ-তরুণীকে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য সারাদেশে ৫৫৪টি বিপিও সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। দেশে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা শেষ করে শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। তাদের অনেকের ভাগ্যে চাকরি নামের সোনার হরিণটি জোটে না। ফলে বহু শিক্ষিত তরুণ-তরুণীকে অভিশপ্ত বেকার জীবনযাপন করতে হয়। তাই এসব তরুণ-তরুণীদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিপিও খাতে কাজ করার উপযোগী করতে উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে সরকার। তরুণ শিক্ষিত বেকারদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে এটি হতে পারে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। বিপিও সম্মেলন-২০১৬ তরুণদের এই সেক্টর সম্পর্কে একটি ভাল ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছে। বিপিওকে মূলধারায় নিয়ে আসা, দেশের তরুণ-তরণীদের এ খাতে আগ্রহী করে তোলা এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের বিপিও সেক্টরের অবস্থানকে তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়েই এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশে বিপিও ব্যবসার প্রবৃদ্ধি শতকরা ১০০ ভাগেরও বেশি, যার বর্তমান বাজারমূল্য ১৩০ বিলিয়ন ডলার। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে শুধু বিপিও খাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো বিশ্বের অনেক দেশ অর্থনীতিতে বিপুল উন্নতি সাধন করেছে। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। গত তিন-চার বছরে এই পেশা বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ধারণাটি আগে থেকে প্রচলিত ছিল। এর সূচনা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। এখন এটি উচ্চ মানের একটি পেশা। বিপিও সামিটের শেষ দিন অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি অল্পদিনের মধ্যে বাংলাদেশে মাইক্রোসফট, এ্যাপল, গুগলের মতো তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। ২০২১ সালের মধ্যে বিপিও খাত থেকে আমরা এক শ’ কোটি ডলার আয়ের আশা করছি। বিপিও সম্মেলনে বিদেশীরা এসে আমাদের বলেছেন বাংলাদেশের সবকিছু ঠিক আছে। এ দেশের তরুণরা প্রস্তুত। এটাই আমাদের জন্য বড় স্বীকৃতি। আমরা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দেই তখন আমরা কোনও রূপরেখা ঠিক করে দেইনি। আমরা জানতাম তরুণরাই এসব ঠিক করে নেবে। আমাদের ভাবনা সত্যি হয়েছে, তরুণরাই তাদের গন্তব্য ঠিক করে নিয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, তরুণদের প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আগ্রহী করে গড়ে তুলতে হবে। তরুণরাই আগামীর ভবিষ্যত। তরুণরা এগিয়ে না এলে দেশ এগিয়ে যাবে না। আইসিটি বিভাগের বাজেট শতকরা ৫০ ভাগ বেড়েছে। আমাদের দেশের বাজারও বড় হয়েছে। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতর এবং বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার এ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) যৌথ উদ্যোগে দেশে দ্বিতীয় বারের মতো আয়োজিত ‘বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০১৬’ শেষ হলো। রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে ২৯ জুলাই সন্ধ্যায় দুই দিনের এই আয়োজনের সমাপ্তি টানা হয়। বিপিও সামিটের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ‘দ্যা ফিউচার অব টেকনোলজিস এ্যান্ড বিজনেস ফর ইউথ’ শিরোনামে সেমিনারে উপস্থিত থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানসহ দেশী ও বিদেশী অতিথিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি বলেন, শুধু ‘অপরচুনেটিজ ইন লোকাল এ্যান্ড গ্লোবাল বিপিও ফর ইউথ’ সেমিনারেই নয়। দ্বিতীয় বারের মতো আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘বিপিও সামিট ২০১৬’ এর বিভিন্ন সেমিনার ও কর্মশালায় বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া তরুণদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রথম দিন ‘অপারচুনেটিজ ইন লোকাল এ্যান্ড গ্লোবাল বিপিও ফর ইউথ’ শিরোনামে বিপিও সম্মেলনে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। এ সময় তিনি বলেন, বর্তমান তরুণ সমাজের সঙ্গে পূর্বের তরুণদের পার্থক্য হলো প্রযুক্তি। এখনকার তরুণরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই যে কোন কাজ করে ফেলতে পারছে। তাই আগের তুলনায় এখনকার তরুণদের রয়েছে দ্বিগুণ শক্তি। এখনই তরুণদের সময় তাদের সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেয়া। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে বসে স্বপ্ন দেখতে হবে স্টিভ জবস বা মার্ক জাকারবার্গের মতো হওয়ার। তবে শুধু স্বপ্ন দেখলে হবে না, কাজ করতে হবে ধৈর্যসহকারে চেষ্টাও করতে হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে।
×