ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদ মূলোৎপাটনে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৩১ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীবাদ মূলোৎপাটনে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের বিকল্প নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, জঙ্গীবাদের মূলোৎপাটনে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের বিকল্প নেই। জামায়াত-শিবিরের মতো দল সক্রিয় থাকলে আইএস বা আল কায়েদার দরকার হয় না। জামায়াতের গুরু মওদুদীর দর্শন থেকেই ইসলামের নামে জঙ্গীবাদের সৃষ্টি। যুগে যুগে এরা বিভিন্ন নামে সক্রিয় ছিল। দেশের প্রথম জঙ্গীবাদী সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদের’ শতকরা সত্তর ভাগ এখন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী। শনিবার বিকেলে ধানম-ির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ৮০০ দিন’র শ্বেতপত্র প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় তারা এসব কথা বলেন। তিন খ-ের শ্বেতপত্রে ২০১৩ সালের ১ নবেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮০০ দিনে জঙ্গী, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক কর্মকা- সম্পর্কে ২১টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন, নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য এবং মাঠ পর্যায়ে নির্মূল কমিটির নিজস্ব অনুসন্ধান প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা, হেফাজত-জামায়াতের সঙ্গে জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসের সম্পর্ক, জঙ্গী মৌলবাদী সংগঠন ও নেতাদের পরিচয় এবং তাদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। সভায় বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে কিনা এ নিয়ে সরকার বিভ্রান্তি তৈরি করছে। এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের নামে সরকার বিষয়টি দু’বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমন্ত্রণপত্রে ও ব্যানারে আলোচক হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নাম থাকলেও দুজনের কেউই অনুষ্ঠানে ছিলেন না। বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক অজয় রায়, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) মোহাম্মদ আবদুর রশীদ, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সাংবাদিক শামীম আখতার ও এ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না। সূচনা বক্তব্যে নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, জঙ্গীবাদ নির্মূলে প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ও আন্তরিকতা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জামায়াত-শিবিরের বন্ধুরা বসে আছে। জঙ্গীবাদী কর্মকা-ে জড়িত জামায়াত-শিবিরের অনেককে প্রভাব খাটিয়ে থানা থেকে বের করে এনেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। জামায়াত এখন আওয়ামী লীগেরও ঘাড়ে চেপে বসেছে। আইন-শৃক্সক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যেও তারা আছে। তাই, শুধু আইন প্রয়োগ করে জঙ্গীবাদ নির্মূল করা যাবে না। তিনি বলেন, মওদুদীর দর্শনই আইএস, আল কায়েদা, জেএমবি, হেফাজত, জামায়াত-শিবিরের দর্শন। এর মোকাবেলা করতে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের দর্শনই যথেষ্ট। মাঠ পর্যায়ে নিজেদের অনুসন্ধান নিয়ে তিনি বলেন, হেফাজতের অধিকাংশ নেতা একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী ‘মুজাহিদ বাহিনী’র সদস্য ছিলেন। এ সংগঠন সম্পর্কে কখনও তেমন আলোচনা হয়নি। একইভাবে হেফাজতের অধিকাংশ নেতা দেশের প্রথম জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং শতকরা ৭০ ভাগ এখনও যুক্ত আছেন। সভাপতির বক্তব্যে বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গীবাদ রুখতে সংবিধানের চার মূলনীতির চেতনায় ফিরতে হবে। শুধু র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সব শক্তিকে এক হয়ে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় কর্মসূচী দেয়ার আহ্বান জানান। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) মোহাম্মদ আবদুর রশীদ বলেন, জঙ্গীবাদীদের কর্মকা-ের সবটাই আদর্শভিত্তিক নয়, এর মধ্যে অন্য উপকরণও আছে; যা খুঁজে বের করতে হবে। এখনকার তরুণদের মন বোঝার মতো সক্ষমতা অনেক মা-বাবারই নেই। জঙ্গীবাদের মনস্তাত্ত্বিক কারণ বুঝতে তরুণদের মন পড়তে হবে। জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় একটি দীর্ঘমেয়াদী মহাকৌশল নির্ধারণের ওপর গুরুত্ব দেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
×