ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মংলা বন্দরে এক পদে দুই কর্মকর্তা নিয়ে ধূম্রজাল

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৩১ জুলাই ২০১৬

মংলা বন্দরে এক পদে দুই কর্মকর্তা নিয়ে ধূম্রজাল

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের একই পদে দুই মন্ত্রণালয় থেকে দুই কর্মকর্তার নিয়োগ নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। সদস্য প্রকৌশল ও উন্নয়ন পদে ওই দুই কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যে বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী (নৌ) মোঃ আলতাফ হোসেন খানকে নিয়োগ দিয়েছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। তার নিয়োগের আড়াই মাস পর প্রশাসন ক্যাডার বিকাশ চন্দ্র সিকদারকে একই পদে নিয়োগ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আর এ নিয়ে বন্দরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অপর দিকে একই পদে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিব্রত বন্দর ব্যবহারকারীরাও। একাধিক সূত্র জানায়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষে সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত একজন চেয়ারম্যান ও তিন জন সদস্য নিয়ে কর্তৃপক্ষের বোর্ড সদস্য ও সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে সদস্য (হারবার ও মেরিন), সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) এবং সদস্য (অর্থ) এ তিনটি পদ রয়েছে। প্রথম ২টি পদ সম্পূর্ণরূপে কারিগরি এবং তৃতীয়টি এ্যাকাউন্টস বা সাধারণ। নিয়ম অনুয়ায়ী সদস্য (হারবার ও মেরিন), সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) পদে নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে বন্দর পরিচালনায় অভিজ্ঞ ও কর্মরত উপযুক্ত কর্মকর্তা দিয়ে পূরণ করার কথা। ১৯৮৮ সালের ২৮ এপ্রিল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় (বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়)। কিন্তু সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে বন্দরে কারিগরি পদে প্রশাসন ক্যাডারের সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত এক গ্রেড নিচের কর্মকর্তাকে গ্রেড ওপরের বন্দরের সদস্য পদে প্রেষণে নিয়োগ দিয়েছে। এ ছাড়া মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে দু’দফায় পদ পরিবর্তনের প্রজ্ঞাপন জারি করে। সূত্র জানায়, গত ১২ মে বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী (নৌ) মোঃ আলতাফ হোসেন খানকে অভিজ্ঞ প্রকৌশলী হিসেবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সে থেকে তিনি তার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অপর দিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ৯ মে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সিকদারকে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষে সদস্য পদে নিয়োগ দেয়া হয়। তার এ নিয়োগের পর তিনি গত ১৯ জুন বন্দরে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২৩ জুন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তাকে সদস্য (হারবার ও মেরিন) পদে পদায়ন করেন । এর পর থেকে তিনি ওই পদেই দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে প্রায় আড়াই মাস পর গত ২৪ জুলাই জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৯ মে’র পৃথক সংশোধনপূর্বক আরেকটি প্রজ্ঞাপনে বিকাশ চন্দ্র সিকদারকে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়। এ দিকে প্রকৌশলী না হওয়া সত্ত্বেও একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাকে সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) পদে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারিকে কেন্দ্র করে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। আর একই পদে দুই কর্মকর্তার পদায়ন নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অপর দিকে এ নিয়ে বন্দর ব্যবহারকারী বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। শিপিং এজেন্ট ইউনিট মেরিটাইম লিঃয়ের প্রতিনিধি শেখ বদিউজ্জামান টিটুুসহ কয়েকজন বন্দর ব্যবহারকারী জানান, এ বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ পদে এমন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দৈনন্দিন কর্মকা- পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের বিব্রতবোধ অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া সুষ্ঠু বন্দর পরিচালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং বন্দরের সরকারের ‘ভিশন ২০২১’ মোতাবেক বন্দরের উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। এ প্রসঙ্গে মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল এ্যাডমিরাল রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, বর্তমানে আলতাফ হোসেন খান সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) এবং বিকাশ চন্দ্র সিকদার সদস্য (হারবার ও মেরিন) পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে একই পদে দুই কর্মকর্তার এ নিয়োগের ক্ষেত্রে হয়তো কোথায় ত্রুটি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি, এ বিষয়ে দ্রুত সংশোধনী আসবে।
×