ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরবরাহ করিডরগুলোর নিয়ন্ত্রণ চাইল জাতিসংঘ

আলেপ্পোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৩১ জুলাই ২০১৬

আলেপ্পোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আলেপ্পো শহরের অবরুদ্ধ বাসিন্দাদের কাছে নিশ্চিন্তভাবে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে সঙ্কীর্ণ পথগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ চেয়েছে জাতিসংঘ। শুক্রবার জাতিসংঘের বিশেষ দূত মস্কোর কাছে করিডরগুলোর নিয়ন্ত্রণ জাতিসংঘের হাতে তুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শহরটিতে পৌঁছানোর সঙ্কীর্ণ পথগুলো এতটাই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে যে অনেকে একে ‘মৃত্যুর করিডর’ নামে অভিহিত করছেন। এদিকে একটি পর্যবেক্ষণ সংস্থা এদিন আলেপ্পো ও প্রাদেশিক শহর আতারিবে বিমান আক্রমণে ১৮ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে। খবর এএফপির। সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধে শাসক বাশার আল আসাদ দীর্ঘদিন ধরেই মিত্র রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক সহায়তা পাচ্ছেন। রাশিয়া জানিয়েছে, আলেপ্পোয় ত্রাণ সরবরাহ পৌঁছাতে তিনটি মানবিক করিডর খোলা হবে। মানবিক সহায়তা পৌঁছানো ছাড়াও আত্মসমর্পণ করে বেরিয়ে ইচ্ছুক আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলে অবস্থানরত সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বেরিয়ে যাওয়ার জন্য করিডরগুলো ব্যবহার করা হবে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, শুক্রবার একটি মাত্র করিডর দিয়ে মুষ্টিমেয় আলেপ্পোবাসী বেরিয়ে যেতে পেরেছেন। আরও বহু লোক বেরিয়ে আসতে চাইছেন কিন্তু বের হওয়ার পথগুলো বিদ্রোহীরা ঘিরে রাখায় তারা সেখানে আটকা পড়েছে। আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চল থেকে এএফপির একজন সংবাদদাতা জানিয়েছেন, শহরের রাস্তাগুলো জনশূন্য এবং দোকানপাটগুলো ভাঙ্গাচোরা। ব্রিটেনভিত্তিক সহায়তা সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন শুক্রবার জানিয়েছে, সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশের একটি মাতৃসদনে বোমা হামলায় দু’জন নিহত এবং দুটি চিকিৎসাধীন নবজাতক শিশু আহত হয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেনের সহায়তায় হাসপাতালটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। আসাদবিরোধীদের জোট সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশনের (এসএনসি) আহমেদ রামাদান অভিযোগ করেছেন ওপর থেকে বিমান আক্রমণের মধ্যে আলেপ্পোর লোকজনকে ঘরবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে আসাদ সরকার ও রুশ বাহিনী বাধ্য করছে। শহর থেকে বের হয়ে আসার সঙ্কীর্ণ পথগুলোকে তিনি ‘মৃত্যুর করিডর’ নামে অভিহিত করেন। ব্রিটেনভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাটির মতে, আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলীয় দুটো অংশে বিমান আক্রমণে অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে আটকা পড়েছেন। এছাড়া বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত প্রাদেশিক শহর আতারিবে বিমান আক্রমণে ১০ জন নিহত এবং বহু লোক আহত হয় বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। সর্বশেষ বিমান হামলায় বেসামরিক প্রাণহানিকে ‘নতুন গণহত্যা’ বলেও সংস্থাটি মন্তব্য করে। করিডরগুলোর নিয়ন্ত্রণ জাতিসংঘের হাতে তুলে দেয়ার জন্য শুক্রবার জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্টিফান ড্য মিস্টুরা রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরামর্শ হলো রুশ বাহিনী সরে গিয়ে পথগুলোর নিয়ন্ত্রণ জাতিসংঘের কাছে অর্পণ করা হোক।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনি কিভাবে আশা করতে পারেন যে লোকজন জীবনের ওপর ঝুঁকি নিয়ে ওই রাস্তাগুলো দিয়ে বেরিয়ে আসবে যেখানে অনবরত বোমা ও গোলাবর্ষণ হচ্ছে।’ রুশ প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী আনাতোলি আনাতোনভ বলেন, ‘জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর সঙ্গে রাশিয়া ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।’ তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি দিয়ে সন্ত্রাসীদের সহায়তা করার কোন সুযোগ দেয়া হবে না। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ‘আলেপ্পোকে কেন্দ্র করে ১৭ জুলাই থেকে বিমান আক্রমণ শুরুর পর শহরটিতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ আটকা পড়েছে। সরকার সমর্থক মিলিশিয়া গ্রুপগুলো এখন শহরটি ঘিরে রেখেছে। শহরের ভেতর থেকে খাবার ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সঙ্কটের খবর পাওয়া গেছে। কারণ সরবরাহ পথটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ মানবিক কারণেই সেখানে নিরাপদ করিডোর প্রতিষ্ঠার তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।
×