ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সমস্যা মাঠ-বলের ক্ষতিগ্রস্ত ফুটবলাররা বঞ্চিত দর্শকরা!

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩০ জুলাই ২০১৬

সমস্যা মাঠ-বলের  ক্ষতিগ্রস্ত ফুটবলাররা  বঞ্চিত দর্শকরা!

রুমেল খান, চট্টগ্রাম থেকে ॥ ভাল ফুটবলের পূর্বশত কঠোর অনুশীলন। এই অনুশীলনের জন্য চাই ভাল মাঠ এবং ম্যাচ খেলার জন্য উন্নতমানের মাঠ। সেই মাঠই যদি ভাল না হয় এবং জড়িয়ে থাকে অনেক সমস্যা, তাহলে দর্শকরা কিভাবে উপভোগ করবেন ভাল মানের ফুটবল? কেনই বা তারা আসবেন গাঁটের পয়সা খরচ করে স্টেডিয়ামে? গত ২৪ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে বহুল আলোচিত ‘জেবি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে’র (বিপিএল) নবম আসর। আগের আট আসরের চেয়ে এই আসরটি ব্যতিক্রম। এবার চারটি ভেন্যুতে (পরে আরও বাড়তে পারে) পর্যায়ক্রমে খেলা হবে। মোট ১৩২ খেলার বেশিরভাগই অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার বাইরে (চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহে)। শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক না হয়ে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে হোম এ্যান্ড এ্যাওয়ে পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) লীগের স্বত্ব বিক্রি করে দিয়েছে বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। তারা আবার সেটা সাব-কন্ট্রাক্টে দিয়ে দিয়েছে আরেক পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ‘জজ ভুঁইয়া গ্রুপ’কে। লীগের টিকেট বিক্রি থেকে স্পন্সররা লভ্যাংশ পাবে ৭৫ এবং বাফুফে, জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা পাবে ২৫ শতাংশ। বাফুফে লীগের স্বত্ব বিক্রি করলেও টেকনিক্যাল সাপোর্ট, ম্যাচ কমিশনারসহ ম্যাচ সংক্রান্ত সবকিছুর স্বত্ব থাকছে বাফুফের হাতেই। প্রতিটি ভেন্যুতে ১২টি দল অবস্থান করবে, তাদের আবাসন, যাতায়াত, খাওয়া, অনুশীলন ও নিরাপত্তা ... সবকিছুরই ব্যবস্থা করা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও ঝামেলা বেধেছে অনুশীলনের মাঠ নিয়ে। বলতে গেলে প্রতিটি ক্লাবদলই অসন্তুষ্ট অনুশীলনের মাঠ নিয়ে। মাঠের ঘাস বড়, অসমতল, টাইট সিডিউল ... এসব সমস্যা নিয়ে রোজই অভিযোগ জানাচ্ছে তারা। এখানকার স্থানীয় ক্লাব চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড। বিপিএলের ১২ দলের মধ্যে আক্ষরিক অর্থে তারাই সেই দল, যাদের শহরে লীগ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেই চট্টলার দলেরও অভিযোগ আছে। সেটা লীগের মূল ভেন্যু অর্থাৎ এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের মাঠ নিয়ে। দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বলেন, ‘এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের মাঠ সত্তর শতাংশ খেলার জন্য উপযোগী। এখানে ভাল ফুটবল খেলাটা খুবই কষ্টসাধ্য। দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে ভাল মাঠের কোন বিকল্প নেই। এজন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি দরকার।’ একই মন্তব্য করেছেন ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের মিডফিল্ডার ফয়সাল মাহমুদও, ‘স্টেডিয়ামের মাঠ তো বটেই, অনুশীলনের মাঠও উন্নতমানের নয়। এজন্য আমাদের খেলার মান ভাল হচ্ছে না।’ আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের অধিনায়ক মিটুল হাসানের অভিযোগ অনুশীলনের মাঠ নিয়ে, ‘এখানে অনুশীলন করতে সব দলেরই সমস্যা হচ্ছে। বড় ঘাসভরা একই মাঠে চার দলের অনুশীলনের সূচী রাখা হয়েছে। এভাবে টাইট সিডিউলে প্র্যাকটিস করা যায় না।’ শুধু তাই নয়, অভিযোগ উঠেছে ম্যাচের বল নিয়েও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ একটি ক্লাবের কোচ অভিযোগ করেন, এবারের লীগে যেসব বল দিয়ে খেলা হচ্ছে, সেগুলো প্রায় চার বছরের পুরনো ‘ব্রাজুকা’ বল। বলগুলোর বয়স বেড়ে যাওয়াতে ঠিকমতো মুভ করে না, সুইং করে না। ফলে ফুটবলাররা চোখ ধাঁধানো শট নিতে পারছেন না। এতে দর্শকরা নিজেদের প্রতারিত মনে করছেন এই ভেবেÑ মাঠে কোন মানসম্পন্ন ফুটবলার নেই! ব্রাজুকা বলে এখন বিশে^র কোন লীগেই খেলা হয় না। এখন যেসব নতুন মডেলের বলে খেলা হয়, সেগুলো বাংলাদেশে কবে আসবে কে জানে! উল্লেখ্য, দলগুলোর অনুশীলনের জন্য তিনটি মাঠ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এগুলো হলো : বন্দর মাঠ, শারীরিক শিক্ষা মাঠ এবং মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠ। এগুলোতেই সমস্যা আছে কমবেশি। শুক্রবার লীগ শুরুর ছয়দিন পর এসব মাঠের দীর্ঘকায় ঘাস কাটার যন্ত্র কেনা হয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তারা লীগের সিডিউল পেয়েছেন দেরি করে। তাই মাঠগুলো সেভাবে তৈরি করা যায়নি। তাছাড়া প্রথমবারের মতো ভিন্ন আঙ্গিকে লীগ হচ্ছে। তাই প্রথম দফায় একটু-আধটু ভুলত্রুটি হওয়াটা স্বাভাবিক। পরেরবার এগুলো সব ঠিক হয়ে যাবে। আদৌ কি ঠিক হবে?
×