ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্যপ্রমাণাদিতে মিল ধরিয়ে দিলেন গবেষকরা

কল্যাণপুর ও গুলশানে নিহত জঙ্গীরা একই গ্রুপের

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৩০ জুলাই ২০১৬

কল্যাণপুর ও গুলশানে নিহত জঙ্গীরা একই গ্রুপের

আরাফাত মুন্না ॥ গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলাকারী জঙ্গীদের সঙ্গে কল্যাণপুরে অভিযানে নিহত জঙ্গীদের যে মিল রয়েছে তার কিছু প্রমাণও তুলে ধরেছেন গবেষকরা। গবেষকরা বলছেন, এসব ঘটনায় প্রকাশিত ছবি বিশ্লেষণেই এর প্রমাণ মিলছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও এসব ছবির অনেক মিল ধরিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। কল্যাণপুরে অভিযানের পর থেকেই গুলশানে হামলাকারীরা এবং কল্যাণপুরে অভিযানে নিহতরা একই গ্রুপের বলে দাবি করে আসছে পুলিশও। তদন্তের স্বার্থে পুলিশও এসব ছবি বিশ্লেষণ করছে।গুলশানের হামলার পর দায় স্বীকার করে সাইট ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে প্রকাশিত হামলাকারীদের একজন নিরবাস ইসলামের যে ছবিটি দেখানো হয়, সেখানে নীল কাপড়ের ওপর আইএসের একটি পতাকা দিয়ে কালো পাঞ্জাবি ও স্কার্ফ পরা হাস্যোজ্জ্বল নিরবাস একে-২২ রাইফেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এদিকে মঙ্গলবার কল্যাণপুরের বাসার জানালায় আইএসের পতাকা ঝোলানোর যে ছবি পুলিশ প্রকাশ করেছে, তার একপাশে ঝুলে আছে সেই একই রঙের নীল কাপড় যেটা ছবি তোলার সময় পতাকার ব্যাকগ্রাউন্ড বানানো হয়েছিল নিরবাসসহ ৫ জঙ্গীর ছবিতে। তার মানে দাঁড়ায় এরা কোন না কোনভাবে একই সঙ্গে ছিল এবং ছবি তোলার ক্ষেত্রে একই ব্যাকগ্রাউন্ড ও পোশাকই ব্যবহার করেছে বলে দাবি বিশ্লেষকদের। জঙ্গীবাদ নিয়ে গবেষণা করেন এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কল্যাণপুরের ছবিটা দেখেই চমকে উঠেছিলাম। তারপর মিলিয়ে দেখলাম এদের যোগাযোগ না থেকে পারে না। এদের সঙ্গে আইএসের যোগাযোগ হয়েছে এবং এরা এখানে ছবি তুলে পাঠিয়েছে আইএসের কাছে। এমনকি আইএসের বার্তা সংস্থা আমাক গুলশানে হামলাকারীদের যে ছবি প্রকাশ করেছিল, সেখানে হামলাকারীরা যে ধরনের পাঞ্জাবি পরেছিল, কল্যাণপুরে অভিযানে নিহতদের পরনেও একই ধরনের পাঞ্জাবি ছিল। এদিকে জঙ্গীবাদ ও তাদের অনলাইন এ্যাক্টিভিটিজ নিয়ে গবেষণা করছেন নির্ঝর মজুমদার, তিনি কল্যাণপুরের ঘটনার ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর ফেসবুকে লিখেছেন, নিহত জঙ্গীদের ছবি দাবিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল। শুরুতে সেটা শুধুমাত্র একটা পর্যবেক্ষণ হলেও এখন বিষয়টাতে আমি নিশ্চিত। এ বিষয়ে তিনি বলেন, কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গীরা এবং এর আগে নিহত জঙ্গীরা পরস্পরের সম্পর্কযুক্ত ছিল এবং এদের সঙ্গে আইএসের যোগাযোগ ছিল। কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গীরা এবং গুলশানের হলি আর্টিজানে নিহত জঙ্গীরা কোন না কোনভাবে পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নির্ঝর মজুমদার বলেন, গুলশানের ঘটনায় আইএসের প্রধান নিউজ এজেন্সি আমাক, আইএসের ম্যাগাজিন দাবিকে প্রকাশিত ছবি ও কল্যাণপুরের ঘটনায় প্রকাশিত ছবির মধ্যে উপকরণগত প্রচুর মিল লক্ষণীয়। আগে প্রকাশিত ছবিগুলোতে জঙ্গীদের ব্যবহৃত পোশাক, মাথার স্কার্ফ, পেছনের পতাকার ব্যাকগ্রাউন্ডে যে মিল লক্ষ্য করা যায়, তাতে এটা অনুমান করা অমূলক নয় যে, এদের সঙ্গে পূর্বের ঘটনাগুলোতে নিহত ও জড়িত জঙ্গীদের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল। পূর্বের ঘটনাগুলোর সঙ্গে কল্যাণপুরের জঙ্গীদের সম্পৃক্ততা কতদূর রয়েছে, সেগুলো খোঁজার জন্য এই বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করছি। দুটি ছবি পাশাপাশি রেখে তার ফেসবুক এ্যাকাউন্টে নির্ঝর লিখেছেন, একটি ছবি জঙ্গী নিবরাসের, যেটি আইএসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল গুলশানে হামলার পর। অন্য পাশের ছবিটি কল্যাণপুরের, প্রকাশ করেছে পুলিশ। দুই ছবিতেই আইএসের পতাকার শেড হিসেবে একই রকমের নীল কাপড়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। এমনকি সব কটি ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড (দেয়ালের রং) মিলে যাচ্ছে। কেননা, ওপরের ছবিতে সর্বমোট মানুষ ছিল তেরোজন (যে ছবিটি তুলেছে, সেসহ)। নিচের ছবির বাসাটিতে নিহত ও আহত জঙ্গীর সংখ্যা দশ। খুব সম্ভবত এই বাসাটিতেই আইসিসের ম্যাগাজিন দাবিকে প্রকাশিত হওয়া ওপরের ছবিটা তোলা হয়েছিল।
×