ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মোগলি এবং জাইগানটোপিথেকাস!

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩০ জুলাই ২০১৬

মোগলি এবং  জাইগানটোপিথেকাস!

ডিজনি ‘দ্য জঙ্গল বুক’ নামে একটি চলচ্চিত্র বানিয়েছে। মোগলি নামের ছোট্ট একটি ছেলে জঙ্গলে বড় হয়ে উঠছে। জঙ্গলের পশুপাখিদের সঙ্গে নিয়ে মোগলি নানা রকমের কা- করল। ইয়া বড় বনমানুষ এসে হাজির, তখন তো অবাক না হয়ে পারা যায় না। কেননা বহু বহু বছর আগেই তো পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে দানবের মতো বিশাল শরীরের এই বনমানুষটি। বনমানুষটির নাম কিং লুই। এই চলচ্চিত্র আগেও বানানো হয়েছে। ১৯৬৭ সালের কিং লুই ছিল ওরাংওটাং, জ্যাজ গান গায়। মোগলিকে আগুন ব্যবহারের কৌশল শিখিয়ে দেয়। ২০১৬ সালে নতুন করে যখন বানানো হলো, তখন কিং লুই হাজির হলো জাইগানটোপিথেকাস রূপে। জাইগানটোপিথেকাস প্রাচীন গ্রিক শব্দ ‘জাইগান’ মানে দানবাকার আর ‘পিথেকাস’ মানে বনমানুষ। মোগলি ভারতবর্ষের। নতুন মোগলিকে এখানকার চেনা প্রাণীদের সঙ্গে রাখতে চেয়েছে ডিজনি। ওরাংওটাং এ এলাকার নয়। তাই এল জাইগানটোপিথেকাস। রুডইয়ার্ড কিপলিং যখন ‘দ্য জাঙ্গল বুক’ লিখেছিলেন, তখন তো কিং লুই নামের কোন চরিত্রই ছিল না। চলচ্চিত্র বানানোর সময় চীন-ভারত-দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বন্যপ্রাণী নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলেন পরিচালক জন ফাভর্যু। জানা গেল, একদা এই এলাকার বন-জঙ্গল দাবড়ে বেড়াত জাইগানটোপিথেকাস নামের দানব বনমানুষের নানা জাত। সেই সাড়ে ৬ লাখ থেকে ৯ লাখ বছর আগে থেকে দিন কাটানো জাইগানটোপিথেকাস পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে এক-দেড় লাখ বছর আগে। তখন পৃথিবীতে হোমো ইরেকটাস নামে মানুষের পূর্বপুরুষরা বাস করত। কত বড় ছিল জাইগানটোপিথেকাস? মোগলির সামনে হাজির হয়েছে প্রায় ১২ ফুট লম্বা গিগানটোপিথেকাস। গায়ে ঘন লোম, ঝুলে পড়া চিবুক। এরকমই ছিল কি দেখতে প্রাণীটা? ১৯৩৫ সাল। রালফ ভন কোয়েনিগসওয়াল্ড নামের এক তরুণ জীবাশ্মবিদ হংকং-এর দোকানে ড্রাগনের দাঁত খুঁজছিলেন। বন্যপ্রাণীর দাঁত থেকে ওষুধ বানায় এখানকার মানুষ। কাঁচের আড়ালে হঠাৎ চোখে পড়ল একদম অন্য রকমের বিশাল আকারের মাড়ির দাঁত। ড্রাগনের দাঁত নয় তো? না। দাঁতটি ছিল জাইগানটোপিথেকাস-এর। রালফ ভন কোয়েনিগসওয়াল্ড-ই এই নাম দিলেন। এত বড় বনমানুষ পৃথিবীতে ছিল, এর আগে জানা ছিল না কারোর। মাটি খুঁড়ে পাওয়া প্রাণীটির অল্প কিছু জীবাশ্ম পাওয়া গেছে চীন, ভিয়েতনাম আর ভারতে। ওষুধ বানাতে গিয়ে স্থানীয়রা অনেক দাঁত নষ্ট করে ফেলেছে। শজারুর দলও ক্যালসিয়ামের আশায় এই দাঁত চিবিয়ে নিকেষ করেছে। এর পরও খুঁজে পাওয়া কেবল মাত্র চারটি নিচের চোয়াল আর হাজারের মতো দাঁত থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, প্রাণীটির ওজন ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ পাউন্ড, লম্বায় ছিল ৯ ফুটের মতো। গায়ে লোম ছিল কি না, তা ঠিকভাবে আন্দাজ করা যাচ্ছে না। তবে দাঁত দেখে এর জীবনযাপনের ধরন কিন্তু বোঝা গেছে। দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবারের টুকরো বলে দিয়েছে, প্রাণীটি ফল-পাতা-গাছের শেকড় খেয়ে বাঁচত। এখন যে সব এলাকায় পান্ডারা বাস করে, সেখানেই বাস করত ওরা। ওদের মতো হারিয়ে যেতে বসেছে পান্ডারাও। গ্লেসিয়াল যুগে দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতে বন জঙ্গলের পরিমাণ কমে যেতে থাকায় বিপদে পড়ে যায় এরা। পায়ের-হাতের হাড় খুঁজে পাওয়া গেলে বোঝা যেত, ওরা কেন বন-জঙ্গলের খোঁজে অন্য কোথাও চলে গেল না। শিম্পাঞ্জি-ওরাংওটাং দেখে যদি ভাবি, জাইগানটোপিথেকাস একই গড়নের হলে একইভাবেই চলাফেরা করত। তবে এখনকার গরিলাদের চেয়ে ৩-৪ গুণ আর ওরাংওটাং-এর চেয়ে ৭ গুণ ভারি শরীরের কারণেই কি ওরা কোথাও যেতে পারেনি? নাকি যাত্রা পথেই শরীরের ভারে ওর পা-গোড়ালি-পায়ের পাতা দুর্বল হয়ে পড়েছিল বলে আর এগুতে পারেনি? তখন বাঘ-বিশাল সাপ পাইথন-কুমির-হায়েনা-ভল্লুক আর হোমো ইরেকটাসরা কি ওদেরকে মেরে খেয়েছে? বাকিদের কথা থাক! মানুষের পূর্বপুরুষ হোমো ইরেকটাসরা ৪ লাখ বছর আগেই আগুনের ব্যবহার শিখেছিল। হোমো ইরেকটাসদের কি উচিত হয়েছিল জাইগানটোপিথেকাসকে খাদ্য বানানো? ওরা তো বরং জাইগানটোপিথেকাসকে আগুনের ব্যবহার শিখিয়ে দিতে পারত! তাহলে হয়ত টিকে যেত ওরা।
×