ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অলিম্পিকের ফলাফল আগে থেকে বলা কিভাবে সম্ভব

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩০ জুলাই ২০১৬

অলিম্পিকের ফলাফল আগে থেকে বলা কিভাবে সম্ভব

আর কদিন পরই ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে শুরু হতে যাচ্ছে অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। তার জন্য ক্রীড়াবিদদের জোর ট্রেনিং চলছে। ট্যুরিস্টরা নিজেদের তল্পিতল্পা গুছিয়ে নিচ্ছেন। আর যারা ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকেন তারাও তাদের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো ঝালাই করে নিচ্ছেন। অলিম্পিক গেমস্্ কোন দেশ কত পদক পাবে তা আগাম বলে দেয়া বাজিকরদের একটা কাজ। দীর্ঘদিন ধরেই এটা চলে এসেছে। তবে আমেরিকার নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডার্ট মাউথ কলেজের টাক স্কুল অব বিজনেসের গবেষকরাও এ কাজে নেমে পড়েছেন সম্প্রতি এই স্কুলের স্নাতক কামিলা গণজালেস ২০১৬ অলিম্পিকে কোন্ দেশ মোট কতটি পদক এমনকি কতটি স্বর্ণপদক পাবে তার একটা ভবিষ্যদ্বাণী প্রকাশ করেছেন। দশ বছরেরও বেশি আগে টাক প্রফেসর এ্যান্ড্রু বার্নার্ড ও আরেক অধ্যাপকের উদ্ভাবিত এক পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে তিনি এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। কোন দেশের অলিম্পিকের সাফল্য সম্পর্কে ঐ দুই অধ্যাপকের উদ্ভাবিত ভবিষ্যদ্বাণীর পদ্ধতিটা অবিশ্বাস্য রকমের সহজ সরল। তবে একই সঙ্গে সেটা সবচেয়ে নির্ভুল মডেল বলেও দাবি করেছেন গবেষকরা। এই মডেলের ভিত্তিকে লন্ডন অলিম্পিকের মোট পদকের আগাম হিসাব শতকরা ৯৮ ভাগ নির্ভুলভাবে দেয়া হয়েছিল। সেই মডেল অনুযায়ী এবারের অলিম্পিকের যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র সবশুদ্ধ ১০৫টি পদক নিয়ে শীর্ষস্থান অধিকার করবে, ৮৯টি পদক নিয়ে চীনের স্থান হবে দ্বিতীয়, ৬৭টি পদকসহ ব্রিটেন তৃতীয়, ৬২ পদকসহ রাশিয়া চতুর্থ এবং ৪৮টি পদক নিয়ে জার্মানির স্থান হবে পঞ্চম। তারা আরও বলেন, স্বর্ণপদকেও যুক্তরাষ্ট্র থাকবে সর্বশীর্ষে। দেশটি মোট ৪৮টি স্বর্ণ পাবে। ৩৮টি স্বর্ণপদক নিয়ে চীন দ্বিতীয় স্থানে থাকবে। ভবিষ্যদ্বাণীর এই কৌশলের চমক লাগানো ব্যাপারটা হলো এটা খেলাধুলা বা ক্রীড়াবিদদের সম্পর্কে কোন ধ্যানধারণার ওপর নির্ভর করে না। মূলত অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে না। এক্ষেত্রে মাত্র ৪টি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে মোট পদকের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়। সেগুলো হলোÑ একটা দেশের জনসংখ্যা, এর তুলনামূলক সম্পদের মাত্রা, আগের অলিম্পিক প্রতিযোগিতাগুলোতে এর সাফল্য-ব্যর্থতা এবং দেশটি সে বছরের অলিম্পিক প্রতিযোগিতার আয়োজক কিনা। একটা দেশের জনসংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে জনসংখ্যা যত বেশি হবে সেই দেশটার মেধাবী ক্রীড়াবিদ পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকবে। অবশ্য জনসংখ্যাই একমাত্র প্রধান বিষয় নয়। ব্যাপারটা এমন নয় যে জনাধিক্য দেশ যেমন চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ সর্বদাই অলিম্পিক পদক তালিকায় শীর্ষভাগে থাকে। সেটা এই কারণে যে একটা দেশের সম্পদ যা গবেষকরা মাথাপিছু আয়ে হিসাব করে থাকেন সেটাও একটা মস্ত ভূমিকা পালন করে। বিশুদ্ধ, নবীন মেধার সন্ধান করলে দেখতে পাওয়া যাবে যে, সম্ভাবনাময় অলিম্পিক এথলেটরা বিশ্বের জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমভাবে ছড়িয়ে আছে। অবশ্য সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে একটা দেশের নির্দিষ্ট কিছু সম্পদ থাকা প্রয়োজন। যেমন শহরাঞ্চলে জায়গা এবং এথলেটদের জন্য প্রয়োজন এমন ধরনের অবকাঠাময় বিনিয়োগ করার মতো অর্থ। সেই অবকাঠামো হতে পারে সুইমিংপুল এবং ফুটবল খেলার মাঠ, বাচ্চাদের খেলাধুলা করার মতো অবসর সময়। গবেষকরা বলেন যে, সম্পদ ও জনসংখ্যা এই দুটো জিনিস কখনও কখনও একে অপরের পরিপূরক হতে পারে না একটা অপরটিকে পুষিয়ে দিতে পারে। যেমন বলা যেতে পারে যে ২০১২ সালের লন্ডন গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অতি জনবহুল অথচ অপেক্ষাকৃত নিম্ন মাথাপিছু আয়ের অধিকারী দেশ ভারত সুইজারল্যান্ডের সমানসংখ্যক পদক লাভ করেছিল। অথচ সুইজারল্যান্ড অতি ক্ষুদ্র কিন্তু ধনী দেশ। বিগত অলিম্পিক প্রতিযোগিতাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীনের রয়েছে তুলনামূলকভাবে কম মাথাপিছু আয়। তবে দেশটি তার এই ঘাটতি পুষিয়ে দিচ্ছে তার বিপুল জনগোষ্ঠী দিয়ে যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ। জনসংখ্যা ও সম্পদ অলিম্পিকের অধিকাংশ ফলাফলের জন্য দায়ী। দুটোরই অবদান প্রায় সমান। তবে গবেষকরা বলেন যে, এ ব্যাপারে আরও কয়েকটি বিষয়ও বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। একটি হলো নিজ দেশে খেলার সুবিধা। পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, অলিম্পিক প্রতিযোগিতার এটা এক প্রভাবশালী শক্তি হিসাবে কাজ করে। ক্রীড়াবিদরা নিজ দেশের উৎসাহী দর্শকদের সামনে নিজেদের নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে অধিকতর উদ্বুদ্ধ হতে পারে। স্বাগতিক দেশগুলো অনেক সময় নতুন নতুন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চালু করে যেগুলোতে তারা নিজেরাই উৎকর্ষতার স্বাক্ষর রাখে। পরিশেষে গবেষকরা এটাও লক্ষ্য করেছেন যে ক্রীড়াবিদদের আগের পারদর্শিতাও ভবিষ্যত সাফল্যের আভাস বহন করে। তবে গবেষকরা বলেছেন যে, চীন ও ব্রিটেনের মতো অতীতের কিছু কিছু স্বাগতিক দেশ যে অলিম্পিক আয়োজন করা থেকে যতটা লাভবান হয়েছে ব্রাজিল ততটা লাভবান হবে বলে তারা মনে করেন না। কামিলা গনজালেস বলেন, বিগত অলিম্পিকগুলোতে ব্রাজিল খুব বেশি পদক পায়নি। পদক পাওয়ার জন্য সম্পদ থাকতে হবে এবং সে সম্পদকে চালিত করতে হবে। ব্রাজিলের মাথাপিছু আয় অত্যধিক নয় এবং খেলাধুলার ক্ষেত্রে খুব বেশি বিনিয়োগও করে না। সামগ্রিমভাবে যে মডেলের ভিত্তিতে আসন্ন অলিম্পিকের পদক সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে সেই মডেলের যথার্থতা প্রমাণিত হবে বলে গনজালেস অতিমাত্রায় আশাবাদী। শুধু একটা ক্ষেত্রেই অনিশ্চয়তা আছে বলে তিনি জানান। সেটা হলো ডোপিং কেলেঙ্কারির কারণে রাশিয়ার ট্র্যাক ও ফিল্ড টিমকে অলিম্পিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলেই তারা লন্ডন অলিম্পিকের তুলনায় এবারের অলিম্পিকে দেশটির মোট পদক সংখ্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়েছেন। রাশিয়াকে এখনও এই অলিম্পিকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ঐ মডেলের প্রচুর অনিশ্চয়তা এসে যোগ হবে। সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট
×