ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রায়ান ফাং ও স্টিভেন ওভারলি

চালকহীন গাড়ি ॥ জার্মানি কি নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৩০ জুলাই ২০১৬

চালকহীন গাড়ি ॥ জার্মানি কি নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছে

কৃত্রিম বুদ্ধি চালিত স্বয়ংক্রিয় গাড়িতে চড়ে আমরা চারদিকে ঘুরে ফিরে বেড়াব এমন দিন আসতে এখনও বহুদূর বাকি। তবে টেসলা কোম্পানির মডেল এসের মতো আংশিক স্বয়ং চালিত গাড়ি ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। তবে চালু হলেও এদের নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রযুক্তি নিয়ে ক্রমবর্ধমান পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে জার্মান কর্মকর্তারা নতুন সব গাড়িতে বিমানে ব্যবহৃত ফ্লাইট রেকর্ডারের মতো ‘ব্ল্যাকবক্স’ বসানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে গুলিতে কি কি ঘটেছিল সেই সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত এই ব্ল্যাকবক্স ধারণ করে রাখবে। তার ফলে গোলমালটা কি বা কোথায় হয়েছিল তদন্তকারীরা তা নির্ণয় করতে পারবে। স্বয়ংক্রিয় যানের এই ব্ল্যাকবক্স যারা বানাতে যাচ্ছে জার্মানি শীঘ্রই তাদের মধ্যে প্রথম হয়ে দাঁড়াতে পারে। শুধু এটুকুই নয়, মোটরগাড়ি শিল্পের পরবর্তী অধ্যায়ে জার্মানি নেতৃত্ব দিতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। এমনিতেই সেরা মানের প্রকৌশল, অটোমেশন, বিশুদ্ধ জ্বালানি ও প্রযুক্তির জন্য কয়েক দশক ধরে দেশটির খ্যাতির অন্ত নেই। তবে আজ এই শিল্পে দেশটির যে জোর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে সেটা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ার কারণে। কথায় বলে, যত আগে বাজারে ঢোকা যাবে তত তাড়াতাড়ি প্রথম হওয়া যাবে এবং তত বেশি ওই প্রযুক্তির সঙ্গে অতিমাত্রার স্বয়ংক্রিয় গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে জার্মানির এমন প্রবল উদ্যমে এগিয়ে চলার পেছনে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সাহায্য সমর্থন রয়েছে। স্বয়ং চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মার্কেল আইনকানুন শিথিল করে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি প্রযুক্তির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার অঙ্গীকার করেছেন। সেই সঙ্গে সরকার পুরোদস্তুর বৈদ্যুতিক গাড়ি বা প্লাগ-ইন হাইব্রিড গাড়ি কিনতে ক্রেতাদের আর্থিক প্রণোদনারও ব্যবস্থা করেছেন। এমন গাড়ি কেনার জন্য তাদের দেয়া হচ্ছে হাজার হাজার ডলারের রিবেট। কোন কোন কর্মকর্তা তো ২০৩০ সালের মধ্যে তেল-গ্যাস চালিত সমস্ত গাড়ি বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। জার্মানির অনেক গাড়ি নির্মাণকারী কোম্পানি আমেরিকার টেসলা, জিএম ও ফোর্ডের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের চাপের মুখে নিজেদের প্রচেষ্টা জোরদার করে তুলেছে এবং উচ্চাভিলাষী সব লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বিএমডব্লিউ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পুরোদস্তুর স্বয়ংচালিত গাড়ি নামানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আরও অনেক গাড়ি নির্মাতাও একই প্রযুক্তি নিয়ে একই গতিতে কাজ করে চলেছে। বিএমডব্লিউ ঘোষণা করেছে যে তারা টেসলার মতো তাদের বৈদ্যুতিক গাড়ির একই ব্যাটারি আই-৩ বিক্রি করবে। মার্সিডিস বেঞ্চের নির্মাতা কোম্পানি ডেইমলারও ইলেক্ট্রিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরি করছে। আসলে জার্মান কোম্পানিগুলো এক্ষেত্রে খুব বেশি কিছু করছিল না। কিন্তু এখন তারা অন্যদের সমকক্ষ হতে উঠে পড়ে লেগেছে। তবে এই উঠে পড়ে লাগার ব্যাপারে ফোকসবাগেনের মতো আর কোন জার্মান অটো কোম্পানি এত তৎপর নয়। গত বছর আমেরিকার এমিশন টেস্টে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কোম্পানিটি কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছিল। এখন তারা প্রবল উদ্যমে ইলেক্ট্রিক গাড়ি তৈরির কাজে নেমেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে তারা ৩০টিরও বেশি নতুন ইলেক্ট্রিক গাড়ি বাজারে নামানোর এবং ব্যাটারি প্রযুক্তি, ডিজিটালাইজেশন এবং স্বয়ংচালিত গাড়িতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। পর্যবেক্ষকরা যদিও মনে করেন যে দৃশ্যমান ভবিষ্যতে যত গাড়ি বিক্রি হবে তার সিংহভাগই থাকবে ডিজেল ও গ্যাসোলিন চালিত গাড়ি। তথাপি ফোকসবাগেনের স্ট্র্যাটেজি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে গাড়ি শিল্পের ভবিষ্যত উদীয়মান প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে নিহিত আছে। তবে ইলেক্ট্রিক গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু কিছু দেশ জার্মানির চেয়েও অনেক এগিয়ে আছে। নরওয়েতে ২০১৩ সালে যত গাড়ি বিক্রি হয়েছে তার ৬.২ শতাংশ ছিল ইলেক্ট্রিক কার। এর কাছাকাছি ছিল নেদারল্যান্ডসের অবস্থান-৪.২ শতাংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যাটি ছিল ১ শতাংশের কম। অন্যান্য অ-ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতারাও হাইটেক গাড়ি নির্মাণে দ্রুত এগিয়ে এসেছে। জাপানের হোন্ডা ও টয়োটা কোম্পানি ব্যাটারি প্রযুক্তি ও রোবটিক্সে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে। তবে ফোকসবাগেনের দৃষ্টান্ত থেকে বোঝা যায় যে আগামী প্রজন্মে গাড়ি শিল্পে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য জার্মান গাড়ি নির্মাতারা নতুন করে চাপ অনুভব করছে। বিশ্বব্যাপী হাল্কা যানের বাজারের ১৫ শতাংশ হচ্ছে ফোকসবাগেনের, ডেইমলার ও বিএমডব্লিউর। বৈদ্যুতিক গাড়ির চল আরও ব্যাপকতা লাভ করায় তারা এই হার না বাড়ালেও অন্তত ধরে রাখতে চাইবে। ইতিহাস কোন ইঙ্গিত বহন করলে বলতে হয় যে জার্মানির প্রকৌশলগত দক্ষতা ও চমৎকারিত্বের বদৌলতে এই শিল্প তাদের অনুকূলেই আসবে। জার্মান শিল্প একদিকে গর্বিত ইতিহাসের অধিকারী আবার এই শিল্প জানে তার এই সাফল্যের কারণ কি। সেটা হলো প্রতি এক দশক পর পর এই শিল্প নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে। আজ বিশ্বব্যাপী এক প্রতিযোগিতা চলছে। সেটা শুধু গতিরই নয়, ক্রেতাকে সর্বোত্তম সমাধান দিতে পারছে সেটাও একটা ব্যাপার। এক্ষেত্রে কে প্রথম হবে সেটা প্রশ্ন নয় বরং প্রশ্ন হলো কে হবে সেরা। সূত্র ॥ ওয়াশিংটন পোস্ট অনুবাদ ॥ এনামুল হক
×