ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কলকাতায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মহাশ্বেতা দেবীর শেষকৃত্য সম্পন্ন

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৩০ জুলাই ২০১৬

কলকাতায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মহাশ্বেতা দেবীর শেষকৃত্য সম্পন্ন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রয়াত সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর শেষকৃত্য শুক্রবার সম্পন্ন হয়েছে। কলকাতার কেওড়াতলা শ্মশানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় গান স্যালুটে। এর আগে রবীন্দ্র সদনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান গুণমুগ্ধরা। শেষযাত্রায় অংশ নেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীসহ বিশিষ্ট জনেরা। মমতার তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। উপস্থিত ছিলেন ভারতের সাহিত্য ও রাজনীতি জগতের অনেকে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ওয়েবসাইটের। শুক্রবার সকাল দশটা নাগাদ বেলভিউ হাসপাতাল থেকে রবীন্দ্র সদনে পৌঁছায় মরদেহ। সেখানেই প্রায় ঘণ্টা তিনেক শায়িত ছিল মহাশ্বেতা দেবীর দেহ। একে একে শ্রদ্ধা জানান বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রসহ রাজ্যের অন্যান্য মন্ত্রীরা। শুধু তৃণমূল শিবির নয় ছিলেন বাম, কংগ্রেস, বিজেপির প্রতিনিধিরাও। প্রয়াত সাহিত্যিককে শ্রদ্ধা জানান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। রাজনীতিকদের পাশাপাশি শ্রদ্ধা জানান শিল্প সাহিত্য মহলের বিশিষ্টজনেরাও। আজীবন কাজ করেছেন সমাজে প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষের জন্য। তাঁর লেখায় উঠে এসেছে শোষিত, নিপীড়িত মানুষের জীবন যুদ্ধের আখ্যান। এই লড়াকু, দরদী সমাজযোদ্ধাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন লোধা, শবর, লেপচা সম্প্রদায়ের বহু মানুষ। দুপুর ১টায় রবীন্দ্র সদনে এসে পৌঁছান মমতা। প্রয়াত সাহিত্যিককে শেষ শ্রদ্ধা জানান তিনি। এরপরই শুরু হয় শেষ যাত্রার তোড়জোড়। রবীন্দ্র সদন থেকে কেওড়াতলা মহাশ্মশানের পথে রওনা হয় শোক মিছিল। যাবতীয় ব্যবস্থাপনা সামাল দেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। রবীন্দ্র সদনে দাঁড়িয়ে থেকে এ বিষয়ে বার বার নগরপালকে নির্দেশ দেন তিনি। রবীন্দ্র সদন থেকে শোক মিছিলে পা মেলান মমতা। দুপুর ২টা নাগাদ কেওড়াতলা মহাশ্মশানে পৌঁছায় শোক মিছিল। গান স্যালুট দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাজ্য পুলিশের কর্মীরা। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রয়াত সাহিত্যিকের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। বেড়ার রাকশা গ্রামে শোকের ছায়া ॥ সংবাদদাতা, বেড়া, পাবনা থেকে জানা, কথা সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর মৃত্যুতে উপজেলার রাকশা তারানগর গ্রামে নেমেছে শোকের ছায়া। যমুনাপারের এ গ্রামটিতেই তার শৈশব কেটেছে। যমুনার ভাঙ্গনে এ কীর্তিমানের পৈত্রিক ভিটাটি বিলীন হলেও এ গ্রামের মানুষের হৃদয়ে তিনি এখনও স্মরণীয়। মহাশ্বেতা দেবীর মৃত্যুতে তার শৈশবের গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ঋত্বিক ঘটক স্মৃতি পাঠাগারে শুক্রবার বিকেল ৩টায় এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী বিপ্লব দত্তের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন ড. আশরাফ পিন্টু, সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম জুয়েল, কবি রিংকু অনিমিখ, কবি ও নাট্য সংগঠক খ. ম. আসাদ, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ফজলুর রহমান, ফেরদৌস তপন, ডাঃ আমিরুল ইসলাম সানু প্রমুখ। ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের পর মহাশ্বেতা দেবী সপরিবারে কলকাতায় চলে যান। তিনি দেবী তাঁর ‘ঢাকায় ফেরা’ স্মৃতিকথায় লিখেছিলেন ‘আমার পৈত্রিক ভিটা পাবনায়। জন্মভূমি ছেড়ে কলকাতায় চলে এলেও সেই শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি আমাকে এখনও পাবনায় নিয়ে যায়।’ এই সময়ের বেড়ার তরুণেরা মহাশ্বেতা দেবীকে স্বচোখে না দেখলেও তাঁকে নিয়ে তাদের গর্বের সীমা নেই। যেমনটি রাকশার সোনাপদ্মা গ্রামের তরুণ স্কুল শিক্ষক ও চিত্রশিল্পী রঞ্জন দত্ত বলছিলেন, ‘দরিদ্র, বঞ্চিত নিম্নশ্রেণীর মানুষের জন্য মহাশ্বেতা দেবী লিখেছেন ও কাজ করেছেন। বাংলা সাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্রের যাঁরা দিকপাল সে পরিবারে জন্মগ্রহণ করে এক সংগ্রামী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বড় হয়েছেন আর সারাজীবন মুক্তির জয়গান করেছেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি পাবনার বেড়া উপজেলায়। তার শৈশব কেটেছে গ্রামে। এটা আমাদের গর্ব, এ আমাদের বেড়ে ওঠার অনুপ্রেরণা।’ ফোকলর গবেষক ড. আশরাফ পিন্টু বলেন, ‘বেড়ার মানুষের হৃদয়ে তার বসবাস। তিনি মানুষের যে অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তার সুফল একদিন সবার জীবনে আসবেই।’ সোনাপদ্মা গ্রামের প্রবীণ মনোরঞ্জন দত্ত যিনি মহাশ্বেতা দেবীর সমবয়সী ও শৈশবের সঙ্গী। তিনি বলেন ‘জন্ম ঢাকায় হলেও মহাশ্বেতার শৈশব কেটেছে পৈত্রিক নিবাস রাকশা তারানগর গ্রামে। ওরা দেশভাগের পর ভারত চলে গেলেও মাঝে মধ্যে বেড়ার রাকশা এলাকায় আসত। ওর মৃত্যু সংবাদে আমি ব্যথিত।’
×