ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবল স্রোতের মধ্যেও দিনরাত চলছে নির্মাণ কাজ

পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচার আসছে, প্রস্তুত মাওয়া

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৩০ জুলাই ২০১৬

পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচার আসছে, প্রস্তুত মাওয়া

মীর নাসির উদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ ভর বর্ষা, পদ্মা উত্তাল। প্রবল স্রোতের মধ্যেও দিনরাত ভারি ভারি যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে পদ্মা নদীর বুকে। ক্রমেই এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। এরই ধারাবাহিকতায় পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচার চীন থেকে দেশে এসে পৌঁছেছে। চীনের পতাকাবাহী মাদার ভেসেল সুমদ্রপথে কুতুবদিয়া চ্যানেল আসে। বিশাল এই চালান খালাস করে জাহাজে রাখা হয়েছে। জাহাজেই চালানটি মাওয়ায় আসবে। এখন চলছে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের কাজ। তবে সপ্তাহখানেকের মধ্যে বহু প্রত্যাশিত এই স্ট্রাকচার মাওয়ায় পৌঁছে যাবার কথা রয়েছে। দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং চওড়ায় ২২ মিটার সেতুটির কমর্যজ্ঞ চলছে এখন প্রবল স্রোতের মধ্যেও। এখানে পদ্মার পানি এখন বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। আর স্রোতের তীব্রতা অনেক বেশি। আট নটিক্যাল মাইল গতিতে এখানে এখন স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। গেল বছর তীব্র স্র্রোতে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ভাঙ্গন দেখা দিলেও এবার সব কিছুই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নদী শাসন, এ্যাপ্রোচসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ বলে জানিয়েছেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেই সেতুটি জনগণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেয়ার আশা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি এখন ২৯ শতাংশ। আর সবগুলো প্যাকেজ মিলিয়ে সেতুটির সার্বিক অগ্রগতি এখন ৪০ শতাংশের কাছাকাছি। এদিকে, সুপার স্ট্রাকচার ফিটিংয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে মাওয়া। মাওয়ার কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে তৈরি করা হয়েছে বিশাল ওয়ার্কসপ। সুপার স্ট্রাকচার ওয়ার্কসপেই এটি ফিটিং করা হবে। প্রায় ৩ হাজার ফুট দীর্ঘ, প্রায় ৫শ’ ফুট প্রস্ত এবং প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার এই ওয়ার্কসপে এটি ব্যবহার উপযোগী করা হবে। সেতুর পিলারের উপর ১৫০ মিটার দীর্ঘ এই সুপার স্টাকচারে রয়েছে গার্ডারসহ দ্বিতল স্টিলের সেতু। যার নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন এবং উপর দিয়ে অন্য যানবাহন। পুরোটাই স্টিলের। এক পিলার থেকে অন্য পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দু’পিলারের মাঝেই বসিয়ে দেয়া হবে সুপার স্টাকচারটি। ওয়াকসর্প থেকে ক্রেনে করে জাহাজে সরাসরি নেয়া হবে পিলারের সমস্ত যন্ত্রপাতি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্টিলের এই স্ট্রাকচারের একটি স্প্যান ১৫০ মিটার দীর্ঘ। এর প্রায় সমপরিমাণ আরও সুপার স্টাকচার এসেছে এই চালানে। বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে প্যাকেটে বিশাল চালানটি আসে। এরকম আরও একটি চালান আসছে শীঘ্রই। দু’টি স্প্যান আপতত স্থাপন করা হবে জাজিরা প্রান্তে। তখনই পদ্মা সেতুর চেহারা দৃশ্যমান হতে শুরু করবে। পদ্মা সেতুর এই সুপার স্টাকচার স্থাপন করার পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর অগ্রগতি দেখতে প্রকল্প এলাকায় আসবেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে বাদবাকি স্প্যানগুলোও আসতে থাকবে। একইভাবে স্থানীয় ওয়ার্কসপে এ্যাসেমব্লিং করে স্থাপন করা হবে। পদ্মা সেতুতে মোট ৪১টি স্প্যান (অংশ) থাকছে। ¯প্যান বড় হওয়ার কারণে রিএনফোর্সড কংক্রিট দিয়ে তৈরি না করে ওজন কমাতে এই সেতুটির মূল অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে স্টিল দিয়ে। তীব্র বায়ুপ্রবাহ ও ভূমিকম্পজনিত ধাক্কা মোকাবেলায় বেছে নেয়া হয়েছে ওয়ারেন ট্রাস ফর্ম। পুরো সেতুটির ভার বহন করার জন্য থাকছে ৪২টি পিলার। যার প্রতিটির নিচে থাকছে ৬টি পাইল। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ের সেতুটি চার লেনবিশিষ্ট এই সেতু দৃশ্যমান হতে শুরু করবে আগামী ডিসেম্বর থেকে। চলতি মাসে হয়ে যাওয়া বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভায় অনেক সলিউশন দেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজ এগিয়ে চলেছে। বিশেষ করে পাইলের লেংথ। পাইলগুলোর রিভিউ ডিজাইনও চূড়ান্ত। ২/১ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কনসালটেন্ট এই ডিজাইন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তর করবে। এদিকে উচ্চ ক্ষমতার আরেকটি হ্যামার এখন সমুদ্র পথে রয়েছে। এটি নেদারল্যান্ডস থেকে বাংলাদেশের কুতুবদিয়া চ্যানেলে আসছে। এখান থেকে জাহাজে করে মাওয়ার আনা হবে। ২ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার এই হ্যামারটির সঙ্গে ক্রেনসহ প্লান্টিং বার্জ থাকছে।
×