ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অর্কের ব্যাপারে মন্তব্য করেনি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৩০ জুলাই ২০১৬

অর্কের ব্যাপারে মন্তব্য করেনি মার্কিন পররাষ্ট্র  দফতর

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজধানীর কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত মার্কিন পাসপোর্টধারী জঙ্গী সেহজাদ রউফ অর্কের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি দেশটির পররাষ্ট্র দফতর। বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যাওয়া হয়। ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র জন কিরবিকে যখন এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি বলেন, ঢাকায় পুলিশের অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক নিহত হওয়ার বিষয়টি আমি খবরে দেখেছি। এরপর তদন্ত ও নিহতদের পরিবারের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কথা বলে আর কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, আমরা জানি যে এ বিষয়ে এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত চলছে। তাই আমি বলব, এ বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য আপনাদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা উচিত। একজন সাংবাদিক শেহজাদের মার্কিন নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বললে কিরবি বলেন, আমি কেবল এটুকু নিশ্চিত করতে পারি, ঢাকায় পুলিশের অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক নিহত হওয়ার খবর আমরা দেখেছি। ‘আপনারা কি বিষয়টি খতিয়ে দেখেননি?’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে কিরবি বলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের পরিবারের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কথা বিবেচনা করে আমরা আর কোন মন্তব্য করতে চাই না। এদিকে শেহজাদের বাবা তৌহিদ রউফ বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাকে বলেছেন, শেহজাদের জন্ম বাংলাদেশেই। ১৯৯৯ সালে তারা পরিবারের সবাই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হন। পরে তৌহিদ ছাড়া পরিবারের সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিয়ে সান ফ্রান্সিসকোতে বসবাস শুরু করেন। শেহজাদের মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তারা ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন বলে তৌহিদ রউফ ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর ২০১০ সালে ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে পাস করেন। তারপর শেহজাদ মালয়েশিয়ার মোনাশ ও পরে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। মা মারা যাওয়ার পর তিনি বদলে যেতে থাকেন বলে এক স্বজন কলকাতা টেলিগ্রাফকে জানান। ২৭ জুলাই শেহজাদার বাবা তৌহিদ রউফ যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ছেলের লাশ শনাক্ত করতে গেলেন, তখন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক কর্মকর্তাও তার সঙ্গে ছিলেন। এর আগে গত পহেলা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলায় এক বাংলাদেশী-আমেরিকানসহ ২২ জন নিহত হলে সে সময় দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। শেহজাদের দাদা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রউফ এক সময় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ছিলেন। আর বাবা তৌহিদ রউফ ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন ঠিকাদার। গত ২৬ জুলাই ভোরে কল্যাণপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঝোড়ো অভিযানে নিহত নয় জঙ্গীর মধ্যে আটজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে একজন শেহজাদ রউফ ওরফে অর্ক। গত ৩ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ছাড়েন শেহজাদ। একই দিনে বাড়ি ছেড়েছিলেন নিবরাস ও তাঁদের আরেক বন্ধু তাওসিফ হোসেন। ৬ ফেব্রুয়ারি শেহজাদের বাবা তৌহিদ রউফ ভাটারা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। শেহজাদ গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালানোর পর কমান্ডো অভিযানে নিহত নিবরাস ইসলামের বন্ধু। ঢাকার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আগে তারা দুজনই মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে পড়তেন। শাহবাগ থানার একটি মামলায়ও দুজনই আসামি ছিলেন। নিবরাসও ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে তার পরিবারের ভাষ্য। এরপর পহেলা জুলাই গুলশানের ক্যাফেতে নিহত হওয়ার পর জানা যায়, তিনি ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঝিনাইদহের একটি মেসে ছিলেন। ওই মেসে নিবরাসের আরেক সঙ্গী আবীর রহমানও ছিলেন, যিনি ৭ জুলাই ঈদ-উল-ফিতরের দিন শোলাকিয়ায় পুলিশের উপর হামলা চালানোর পর গুলিতে নিহত হন। নিবরাসের মতো আবীরও নিখোঁজ ছিলেন কয়েক মাস ধরে। তাদের সঙ্গে ওই মেসে যে আটজন ছিলেন তাদের মধ্যে শেহজাদও ছিলেন বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।
×