ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দু’দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক

ঢাকা-দিল্লী সম্পর্কের অগ্রগতিতে সন্তোষ

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৩০ জুলাই ২০১৬

ঢাকা-দিল্লী সম্পর্কের অগ্রগতিতে সন্তোষ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঢাকা-দিল্লী সম্পর্কের ব্যাপক অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। বৃহস্পতিবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা করেন উভয় দেশের প্রতিনিধি দল। বৈঠকে গত পহেলা জুলাই গুলশানে আর্টিজান রেস্তরাঁর হামলায় হতাহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। এ সময় সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার ব্যাপারে পূর্ণ আশ্বাস দেন তিনি। এছাড়া সন্ত্রাসবাদ প্রতিহত করতে উভয় দেশের সতর্ক থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে দুই দেশের শান্তি নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে যৌথভাবে সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলার ওপর গুরুত্ব দেন রাজনাথ সিং। বৈঠকে রাজনাথ সিং দুই দেশের চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে ১৯৭৪ সালে দুই দেশের মধ্যে হওয়া স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় চুক্তির সব খুঁটিনাটি দিক বাস্তবায়ন বিশেষ করে দুই দেশের সীমানা চিহ্নিতকরণ, সিটমহলের বাসিন্দাদের স্ব স্ব পছন্দ অনুযায়ী দেশে প্রেরণ এবং তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি সুচারুভাবে সময়মতো সম্পন্ন হওয়ায় গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করে এ সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বলে বৈঠকে একমত হন উভয় মন্ত্রীই। পাশাপাশি ওই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে উল্লেখ করে ভবিষ্যতেও দুই দেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা। বৈঠকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ভাষণের প্রশংসা করে যৌথভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় সন্ত্রাসবাদ ও উগ্র ধর্মীয় সন্ত্রাস মোকাবেলায় বাংলাদেশের নেয়া সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপেরও প্রশংসা করেন রাজনাথ সিং। পাশাপাশি সন্ত্রাস মোকাবেলায় দুই দেশই নিজেদের নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে পারস্পরিক প্রশিক্ষণ ও তথ্য আদানপ্রদান আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে। বৈঠকে উভয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই সন্ত্রাসবাদ ও অবৈধ মাদকপাচার রোধে দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষর হওয়া চুক্তিগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে বন্দীবিনিময় সহজ করতে ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত বন্দীবিনিময় চুক্তিতে সম্প্রতি আরও নতুন নতুন ধারা যোগ হওয়ায় গভীর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা। উভয় দেশই নিজেদের কারাগারে থাকা উভয় দেশের নাগরিকদের স্ব স্ব দেশে প্রত্যর্পণ এবং পাচারের শিকার হওয়া মানুষদের স্ব স্ব দেশে ফেরানোর কার্যক্রম সহজ করতে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে। বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশই এ সময় তাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলোকে দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যাপারে একমত হন। বিশেষ করে ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলো বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন উভয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে উভয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই দুই দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় নেয়া পদক্ষেপগুলো (কো-অর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমন্ট প্ল্যান বা সিবিএমপি) বাস্তবায়নের ওই গুরুত্ব প্রদান করেন। এছাড়া সীমান্তে অপরাধমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধ এবং মানুষের প্রাণহানি রোধে উভয় দেশের সীমান্তের উপদ্রুত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সেখানে আরও কঠোর নজরদারি করার ওপর জোর দেন আসাদুজ্জামান কামাল ও রাজনাথ সিং। একই সঙ্গে সীমান্তের দুর্গম এলাকাগুলোতে বাংলাদেশের অংশে সীমান্ত চৌকি নির্মাণের জন্য ভারতীয় প্রান্তে থাকা রাস্তা ব্যবহার এবং দুর্গম এলাকাগুলোতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীদের ভারতীয় চিকিৎসা অবকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়ার ব্যাপারগুলো চূড়ান্ত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন উভয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। দুই দেশের স্বরাষ্ট্র সচিব, বিএসএফ-বিজিবির মহাপরিচালক, কোস্টগার্ডের ডিজি এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর প্রধানদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক হওয়ার ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করে উভয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের নিয়মিত যোগাযোগ দুই দেশের বিদ্যমান বোঝাপড়া আরও দৃঢ় করতে সহায়ক হবে।
×