ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ানোর নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৩০ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ানোর নির্দেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ চরদিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে যে কোন মূল্যে জঙ্গীবাদ নির্মূলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী জঙ্গীবাদ নির্মূলে জেলা প্রশাসকদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। সম্মেলনের চতুর্থ ও শেষ দিন শুক্রবার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবিধানিক কর্তব্য হিসেবে জঙ্গী দমনসহ তিন যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) আহ্বান জানিয়েছেন। প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ডিসিদের তিন যুদ্ধে ভূমিকা রাখার কথা বলেছেন তিনি। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জঙ্গী-সন্ত্রাস দমনে নতুন সেল করছে সরকার। ডিসি সম্মেলন ২০১৬ উপলক্ষে বুধবার বঙ্গভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যে কোন মূল্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলের আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। মঙ্গলবার সকালে নিজের কার্যালয়ে চারদিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে জেলা, উপজেলা/ থানা পর্যায়ে কমিটি গঠন করে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে লিপ্ত সবাইকে খুঁজে বের করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া চারদিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন শেষ হয় শুক্রবার। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশণের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গুলশান- শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে এবারের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বিভিন্ন অধিবেশনে বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। জেলা প্রশাসকদের কী বার্তা দেয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মেসেজ তো অনেক । একটা বড় মেসেজ হলো- জঙ্গীবাদ এবং সন্ত্রাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে, তাদেরকে সেনসেটাইজ করে জঙ্গীবাদ এবং সন্ত্রাসকে মোকাবেলা করতে হবে। গত ২৬ জুলাই শুরু হওয়া এই ডিসি সম্মেলন সামনে রেখে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরা ৩৯টি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ৩৩৬টি প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছিলেন। কার্যপত্রে থাকা এসব প্রস্তাবের বাইরে ১৮টি কার্য অধিবেশনে আরও ২৮৮টি প্রস্তাব এসেছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব। ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন সংশোধনের বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিষয়টি কোর্টে বিচারাধীন থাকায় এ বিষয়ে আলোচনার জন্য ডিসিদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় ॥ জঙ্গী-সন্ত্রাস দমনে নতুন সেল করছে সরকার। শুক্রবার জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের শেষ দিন আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কার্যঅধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, আমরা আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি সেলের কথা বলেছি। যদি তারা মনে করেন, যে কোন সময় প্রসিকিউশন থেকে বিচার বিভাগকে ঠিকমতো সহায়তা করা হচ্ছে না, তাহলে জেলার এ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে তাৎক্ষণিক যেন তারা সেই সেলের কাছে জানায়। আমরা সহযোগিতা করব। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, যখন মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়, তখন যে বিষয়গুলো উঠে আসে এবং তারা সে বিষয়ে সমাধানের কথা বলেন। যেগুলো তাৎক্ষণিক সমাধান দেয়া যায়, তা সমাধান করা হয়। তিনি বলেন, আমার মন্ত্রণালয়ের যে বিষয়গুলো ছিল তা সমন্বয় করার বিষয়। সে ক্ষেত্রে ডিসিদের কোন প্রশ্ন ছিল না। এই সম্মেলনে বলেছি, প্রধানমন্ত্রী দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সেই উন্নয়নে শরিক হতে হবে। সেই প্রচেষ্টায় যে যার অবস্থান থেকে সহযোগিতা করতে হবে। এ্যাটর্নি সার্ভিস প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এ্যাটর্নি সার্ভিস এখনই নয়। এ্যাটর্নি সার্ভিস একবারে করা সম্ভব নয়। আমাদের পরিকল্পনা আছে, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জুডিশিয়াল সার্ভিসে পরীক্ষার মাধ্যম যেভাবে লোক নেয়া হয়, সেভাবে অন্তত ৩০ শতাংশ লোক নিয়োগ করব। আমরা এটার সাফল্য ও ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখব। তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে যাব। তথ্য মন্ত্রালয় ॥ সাংবিধানিক কর্তব্য হিসেবে জঙ্গী দমনসহ তিন যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের চতুর্থ ও শেষ দিন শুক্রবার সকালে রাজধানীর সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভা কক্ষে তথ্য, সংস্কৃতি এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কার্যঅধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ডিসিদের তিন যুদ্ধে ভূমিকা রাখার জন্য বলা হয়েছে বলেও জানান ইনু। তিনি বলেন, বর্তমানে জঙ্গী দমনের যুদ্ধ চলছে, উন্নয়নের যুদ্ধ চলছে, সুশাসন প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ চলছে। এই তিন যুদ্ধে জেলা প্রশাসকদের সংবিধানে বর্ণিত নির্দেশিত পথে চার নীতির ওপর দাঁড়িয়ে ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। আমরা মনে করি, গণপ্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জেলা প্রশাসকদের জঙ্গী দমনের যুদ্ধ, উন্নয়নের যুদ্ধ এবং সুশাসনের যুদ্ধ এই তিন যুদ্ধে যথাযথ ভূমিকা রাখা সাংবিধানিক কর্তব্য। সেই কর্তব্য পালনে আমরা আহ্বান জানিয়েছি। সংবাদপত্র ডিক্লারেশন বাতিলের বিষয়ে ডিসিদের ক্ষমতা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সংবাদপত্র নিবন্ধন দেয়ার দায়িত্ব জেলা প্রশাসকদের। পুরনো আইনে কীভাবে নিবন্ধন দিতে হবে এবং নিবন্ধন বাতিল হয়, সেটার এখতিয়ার জেলা প্রশাসকদের ওপর আগে থেকেই আছে। এখানে নতুন কিছু বিধান সাত বছরে তৈরি করা হয়নি, দীর্ঘ দিনেও তৈরি করা হয়নি। সেই আইনই পালন করা হচ্ছে, এর বাইরে কিছু নেই। ইনু বলেন, জেলা প্রশাসক কেন্দ্রীয় সরকার এবং জনগণের মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং সংবেদনশীল জায়গা। তারা সরকার এবং জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেন। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন এবং সরকার তাতে উপকৃত হয়। সরকারও তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক লক্ষ্য তাদের সঙ্গে আলাপ করে, যাতে সেটা বাস্তবায়ন হয়। ডিসিরা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে মাঠ পর্যায়ে নতুন নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা সেগুলো লিপিবদ্ধ করেছি এবং সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখব। যেসব সমস্যার কথা বলা হয়েছে, তা সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করেছি।
×