ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব বাঘ দিবস পালন

বাঘ সংরক্ষণে ৩১ রেসপন্স টিম

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৩০ জুলাই ২০১৬

বাঘ সংরক্ষণে ৩১ রেসপন্স টিম

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ বাঘ রক্ষায় বাগেরহাটসহ সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলে শুক্রবার নানা আয়োজনে বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হয়েছে। চাঁদপাই রেঞ্জ ও শরণখোলা রেঞ্জে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, পটগান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসন ও সুন্দরবন বিভাগ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সকালে শরণখোলা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ অতুল ম-লের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন এমপি। আরও বক্তব্য দেন বন সংরক্ষক (খুলনা) জহির উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম সরকার, পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও সাইদুল ইসলাম, শরণখোলা সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান মিলন, বিআরডিবি’র চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খোকন, শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহম্মেদ ও বন কর্মকর্তা গাজী মতিয়ার রহমান। বক্তারা সুন্দরবনে বাঘ দ্রুত কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাঘ সংরক্ষণ জরুরী। তাঁরা এজন্য কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান। বিশ্বে বাঘের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ আবাসস্থল সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ। বন বিভাগের মতে, নানামুখী উদ্যোগ, প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে সম্প্রতি বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব কমেছে। লোকালয়ে বাঘের আনাগোনা এবং মানুষের ওপর আক্রমণও কমেছে। তবে বৈরী পরিবেশ, চোরাশিকার ও বণ্যপ্রাণী পাচারসহ মানুষের নানামুখী অত্যাচারে বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগার আজ হুমকির মুখে। সুন্দরবন পূর্ব এবং পশ্চিম বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৬ বছরে সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকায় বেঙ্গল টাইগারের আক্রমণে ২৬০ জন নিহত হয়েছেন। আর এই সময়ে বাঘের আক্রমণে আহত হয়েছেন আরও ৪৫ জন। একই সময়ে সুন্দরবনে বেঙ্গল টাইগার মারা পড়েছে ৩২টি। তবে বেসরকারী হিসাবে এই সংখ্য প্রায় অর্ধশত। সুন্দরবন বিভাগের বন সংরক্ষক (সিএফ) জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০১ সাল থেকে চলতি বছরের ২৮ জুলাই পর্যন্ত সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ১৭টি বেঙ্গল টাইগার মারা গেছে। এ সময়ে বাঘের আক্রমণে একজন নারীসহ মোট ২৬ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ১৪ জনের বাড়ি সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায়, ৬ জনের বাড়ি মংলা উপজেলায়, ১ জনের বাড়ি রামপাল উপজেলায় এবং অপর পাঁচজন খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা ও বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বাসিন্দা। একই সময়ে চারটি পৃথক ঘটনায় বাঘের আক্রমণে একজন বনকর্মীসহ নয় জন আহত হন। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে বার্ধক্যজনিত কারণে, লোকালয়ে ঢুকে পড়ে, ২০০৭ সালের সিডরের জলোচ্ছ্বাসে এবং চোরাশিকারীদের হাতে মোট ১৭টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা পড়ে। এর মধ্যে বন সংলগ্ন মংলা ও শরণখোলা উপজেলার লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় চারটি বাঘকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। স্বাভাবিক মৃত্যু হয় অন্তত চারটি বাঘের। একটি বাঘ মারা যায় ২০০৭ সালের ১৫ নবেম্বরের সিডরের জলোচ্ছ্বাসে। বাকি আটটি বাঘ চোরা শিকারীদের হামলায় নিহত হয়। সম্প্রতি সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গণনার প্রধান কুশলি ডিএফও জাহিদুল কবির বলেন, সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১০৬টি। বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণে সরকার ‘বাংলাদেশ টাইগার এ্যাকশন প্ল্যান ২০০৯-২০১৭’ বাস্তবায়ন করছে। এরই অংশ হিসেবে বাঘ রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি, বাঘের আক্রমণ থেকে বন সংলগ্ন লোকালয়ের জানমাল এবং মানুষের হাত থেকে লোকালয়ে চলে আসা বাঘ রক্ষায় পরীক্ষামূলকভাবে ৩১টি টাইগার রেসপন্স টিম গঠন করে কাজ করছে। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন সংশোধন করে বাঘ হত্যায় শাস্তি ও অর্থদ- বাড়ানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘ হচ্ছে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক রক্ষক। বাঘ কমলে বাড়বে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ওপর হুমকি। তাই শুধু বাঘ নয়, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে রক্ষায় এবং সকল জীববৈচিত্র্য ও প্রাণী জগতকে রক্ষায় আরও উদ্যোগী হতে হবে সরকারকে। আর তা না হলে বিপন্ন হবে বাংলাদের গৌরব বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন।
×