ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পালাচ্ছে চাঁপাইয়ের কিশোরী ও তরুণীরা

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ৩০ জুলাই ২০১৬

পালাচ্ছে চাঁপাইয়ের কিশোরী ও  তরুণীরা

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুন শিক্ষার্থীরা হঠাৎ করে উধাও হয়ে যাবার ঘটনা নিয়ে সারাদেশ তোলপাড় হলেও এখানে অর্থাৎ চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিত্র ভিন্ন। এখানে হাঠাৎ করে উধাও হয়ে যাচ্ছে স্কুলের কিশোরী ছাত্রী ও কলেজ পড়–য়া তরুনীরা। এবারের ঈদুল ফেতরের ছুটির পর এখানে এ ধরনের কিশোরী ও তরুনী উধাও হয়ে যাবার রেকর্ড সৃষ্টিতে অভিভাবক মহলে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে এসব কিশোরী ও তরুনীর বাবা মা বা অভিভাবকরা কেউ আইনের আশ্রয়ে না গিয়ে গোপনে কিংবা ভিন্ন পথে সমস্যার মোকাবেলা করছে। এসব অবিভাবক মিডিয়ার ব্যাপারেও প্রচন্ড সতর্কতা নিয়ে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব অভিভাবক বাড়িয়ে দিয়েছে সহযোগিতার হাত। যে সব স্কুল পড়–য়া কিশোরীদের বাল্যবিবাহের ব্যাপারে প্রশাসন খড়কহস্ত সহ বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান অহরহ প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বাল্য বিবাহ বিরোধী নানান ধরনের সতর্কতা মূলক বানী ও বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। পৌরসভা সহ গ্রামাঞ্চলের আনাচে কানাচে বিষয়টি প্রচারনায় মূখ্য ভূমিকা পালন করায় গরীব অভিভাবকরা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে বিকল্প পথ বেছে নিয়েছে। প্রেমের ফাঁদে পড়ে কম বয়সী স্কুল পড়–য়া যেসব কিশোরী পালিয়ে যাচ্ছে তাদের অভিভাবকরা উদগ্রীব না হয়ে গোপনে ফায়সালা করার চেষ্টা করছে। এই সুযোগে মেয়েকে বাড়িতে আটকিয়ে রেখে বা জিম্মী করে ছেলে পক্ষ চেয়ে বসছে বড় বড় অংকের যৌতুক। নতুবা মেয়েকে আইন প্রয়োগকারীদের হাতে তুলে দেবার প্রচ্ছন্ন হুমকি রাখছে। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে বাল্য বিবাহ কাজ না করলেও জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাবার বিষয়টি সামনে এনে তরুনীর অভিভাবকরা চাহিদা মাফিক যৌতুক না দিয়ে বাড়িয়ে নিচ্ছে দেনমোহর। দুই ক্ষেত্রেই পুরো জেলা জুড়ে এই সমস্যা বড় ধরনের ভয়াবহ হুমকি হয়ে দেখা দেবার কারনে আতঙ্কগ্রস্থ অভিভাবকরা ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের দারস্থ হচ্ছে। মহল্লার ক্ষমতাধর এসব ব্যক্তি এখন মধ্যস্থত্বভোগী সেজে পুলিশের ভয় দেখিয়ে বাণিজ্যে নেমেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ, রহনপুর, নাচোল পৌরসভা সহ পাঁচ উপজেলার প্রায় সাড়ে এগারশত গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। চার পৌরসবা সহ ৪৫ ইউনিয়ন জুড়ে কিশোরী ও তরুনী পালিয়ে যাবার বা ছেলেরা উঠিয়ে নিয়ে যাবার সংখ্যা কত? চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরতলীর বটতলাহাট সংলগ্ন প্রায় ১২টি মহল্লা থেকে ঈদ পরবর্তী ৩০ জন কিশোরীকে ভাগিয়ে নিয়ে যাবার একটি সংখ্যা পাওয়া গেছে ব্যক্তিগত জরীপে। সবগুলোর সুরাহা হয়েছে ছেলের অভিভাবক কর্তৃক মোটা অংকের যৌতুক নিয়ে। এই সময় এসব এলাকা থেকে উধাও হয়েছে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ৫ জন তরুনী। তাদেরকে খুঁজে পাওয়া গেছে এবং শেষ পরিনতি বিবাহের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটেছে। ঈদের পরে প্রায় প্রতিটি গ্রামে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ব্যাপক হারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাল্য বিবাহ সম্পন্ন হওয়া পরিবার আইনের চোখ এড়াতে দম্পত্তিদের বাড়িতে না রেখে পাঠিয়ে দিচ্ছে বাইরে। উভয় পরিবার জ্ঞাত সারে বলার চেষ্টা করছে তারা কিছুই জানেনা। অথচও তারাই বাইরে পাঠিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের অধিকাংশ এলাকা সীমান্ত জুড়ে হবার কারনে এবং সিংহভাগ পরিবার মাইগ্রেডেও হবার কারনে ভারতের মালদহ ও মুর্শিদাবাদে আশ্রয়ে রয়েছে। নির্বিঘেœ সময় বা হানিমুন করার জন্য ছেলে মেয়েকে পাঠিয়ে দিচ্ছে সেখানে। যাদের ওপারে আত্মীয় স্বজন নেই তারা চোরাচালান সূত্রে কিংবা লেবার খাটতে যাবার সুবাদে সক্ষ্যতা রয়েছে ওপারের একাধিক পরিবারের সাথে।
×