ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সমুদ্র সম্পদ

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৩০ জুলাই ২০১৬

সমুদ্র সম্পদ

সমুদ্র বিজয়ের পর চার বছর কেটে গেছে ইতোমধ্যে। তবে বিলম্বে হলেও সমুদ্রে জরিপ, গবেষণা ও সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এটি সুসংবাদই বটে। একথা সত্য যে, বিশাল সমুদ্রসীমা জয়ের ফলে বাংলাদেশের সামনে জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও বন্দর সুবিধা বৃদ্ধি, মৎস্য ও জলজ সম্পদসহ সমুদ্র তলদেশে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং পর্যটন ব্যবসা সম্প্রসারণ প্রভৃতি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাই সম্পদ সংরক্ষণের বিষয়টি বার বার সামনে আসছে। যদিও সমুদ্রের তলদেশে সম্পদ অনুসন্ধান এবং তা উত্তোলন আমাদের দেশের জন্য নতুন বিষয়। তাই কর্তৃপক্ষকে অত্যন্ত বিচক্ষণতা, পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। সমুদ্রের সম্পদ আহরণ ও ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মানবসম্পদ উন্নয়ন। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে সমুদ্র মৎস্য সম্পদের আধার। মৎস্য সম্পদের পাশাপাশি সমুদ্রের তলদেশে রয়েছে খনিজ সম্পদের পাহাড়। বাংলাদেশের দুই দফায় মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র বিজয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ আহরণের সম্ভাবনা আরও বেড়েছে। বিরোধ থাকাকালীন সুনির্দিষ্ট সীমানা না থাকায় বঙ্গোপসাগরে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলন, গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণসহ সামগ্রিক কর্মকাণ্ড যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১১ শতাংশ মানুষ মৎস্য আহরণ করে জীবিকানির্বাহ করে। সমুদ্রসীমা বেড়ে যাওয়ায় মৎস্য সম্পদ আহরণের বিপুল সম্ভাবনা প্রশস্ত হলো। এটি দেশের জনগোষ্ঠীকে বেকারত্বের হাত থেকেও রক্ষা করবে। বিলুপ্ত এবং বিলুপ্তপ্রায় সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য, মাছ ও জলজপ্রাণী সংরক্ষণের বিষয়েও গুরুত্ব দেয়া দরকার। অতীতে জাপানের সহায়তায় বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য প্রজাতি, পরিমাণ, মজুদ এবং আহরণের বিষয়ে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে জরিপ চালানো হয়। দেশ স্বাধীনের পর রাশিয়া সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর ট্রলার বহরের মাধ্যমে উপকূলীয় ২০০ নটিক্যাল মাইল বা ইইএডে এলাকায় দ্বিতীয় দফায় জরিপ চালানো হয়। এতে ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি ও ৪টি মৎস্য বিচরণ কেন্দ্রের সন্ধান পাওয়া যায়। তারপর থেমে যায় সেই উদ্যোগ। তবে দু’বছর আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ‘বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রকল্প’ হাতে নেয়া হয়েছিল। এতে সংরক্ষণের জন্য ৪৭৫ প্রজাতি চূড়ান্ত করা হয়। ইতোমধ্যে ১৮৬ প্রজাতির প্রাণী সংগ্রহ করা হয়েছে। সময়ের বিবর্তনে বেশকিছু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যাপারে উদ্যাগ নেয়া জরুরী। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকাই সমুদ্রবেষ্টিত। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের আধার এই সমুদ্রকূল। সমুদ্র যেমন আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ, তেমনি এর প্রাণিকুলও প্রকৃতির অপার দান। বঙ্গোপসাগর এক সময় অনেক দুর্লভ সামুদ্রিক প্রাণীর বিচরণ কেন্দ্র ছিল। সামুদ্রিক পরিবেশ দূষিত হওয়া ও বিচরণ ক্ষেত্রগুলো ক্রমে ক্রমে প্রাণিকুলের জন্য অনিরাপদ হওয়ায় বিলুপ্ত হতে থাকে এসব প্রাণী। সময়ের প্রয়োজনেই সমুদ্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এর সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবহারে দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। নজর দিতে হবে খনিজসহ সমুদ্রজাত সম্পদের দিকেও।
×