ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গী নির্মূলে-

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৩০ জুলাই ২০১৬

জঙ্গী নির্মূলে-

অতিসম্প্রতি দেশে সন্ত্রাসী হামলা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ঢাকার গুলশান ও ঢাকার বাইরে শোলাকিয়ার সন্ত্রাসী হামলায় প্রমাণিত হয়েছে এদেশে জঙ্গীশক্তি সুসংগঠিত। তারা আগামীতে আরও হামলা চালানোর পরিকল্পনা আঁটছে। রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানায় সময়মতো অভিযান না চালানো হলে এই জঙ্গীরা আরও একটি সন্ত্রাসী হামলা চালাত। সেই হামলা যে আগের দুটি হামলার তুলনায় আরও নৃশংস হতে পারত- এমন আশঙ্কাই পর্যবেক্ষক মহলের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপরোক্ত তিনটি স্থানে জঙ্গী দমনে অভিযান চালিয়ে কাক্সিক্ষত সাফল্য পায়। গ্রেনেড ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত প্রশিক্ষিত জঙ্গীদের মোকাবেলায় পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট বাহিনী পেশাদারিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। সঙ্গত কারণে জঙ্গী নির্মূলে দেশজুড়ে যে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে তা নিয়ে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেক। ঢাকাসহ সারাদেশেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মানুষের মনে আস্থা ফিরে আসছে। লক্ষণীয় হলো- জঙ্গীবিরোধী অভিযানে একদিকে সফলতা আসছে, অন্যদিকে এই সফলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াসও শুরু হয়েছে। এ থেকে দুটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। এক. মানুষকে বিভ্রান্ত করা। দুই. অভিযান যে সঠিক পথে এগুচ্ছে সেটি অস্বীকার করার কৌশল অবলম্বন করা। দেশজুড়ে যে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালিত হচ্ছে তাতে জঙ্গী তৎপরতার গতি শ্লথ হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। দেশে এ পর্যন্ত সংঘটিত জঙ্গী হামলার পেছনে জেএমবি, হরকত-উল জিহাদ, হিযবুত তাহ্রীরসহ দেশীয় জঙ্গী সংগঠনগুলোই প্রধানত দায়ী। তাদের পেছনে জামায়াত-বিএনপি-শিবিরসহ ধর্মীয় দলগুলোর সমর্থন ও ইন্ধন যে রয়েছে সেটি স্পষ্ট। দেশের বিভিন্ন স্থানে উগ্রবাদী লিফলেট বিলি ও নাশকতা সৃষ্টির সঙ্গে শিবিরের কোচিং সেন্টারের ছাত্র নামধারী শিবির ক্যাডারদের সক্রিয় থাকতে দেখা যায় সব সময়। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল, অবরোধের সময়েও দেখা গেছে শিবিরের কোচিং সেন্টারের অপতৎপরতা। কল্যাণপুরে অভিযানের সময় আটক জঙ্গী হাসান শিবিরের মেডিক্যাল ভর্তি কোচিং রেটিনার সঙ্গে জড়িত ছিল। জামাত-শিবির পঁচাত্তরের পর দেশের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে। প্রধানত তৃণমূল পর্যন্ত দরিদ্র ও বিত্তহীন মানুষকে শিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তা দেবার জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে। ফলে সমাজের গভীরে তারা এমন একটি ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা চালায় যাতে মনে হয় তারা মানুষের উপকারী বন্ধু। অথচ তাদের শতাধিক কোচিং সেন্টার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রকারান্তরে একেকটি জঙ্গী তৈরির কারখানা। আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে সচেতন জনতা জামায়াত-শিবিরের এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধের ব্যাপারে সোচ্চার হচ্ছে। জঙ্গী নির্মূল করতে হলে জঙ্গী তৈরির কলকব্জা বিকল করার কোন বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বারবার বলেছেন- সন্ত্রাসীদের শিকড় অবশ্যই খুঁজে বের করব। বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করবে শুধু জঙ্গীদের প্রতি সহানুভূতিশীল মহলই। সেদিন প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, ‘যার যার অবস্থান থেকে ইতোমধ্যে সারাদেশেই জনগণের মধ্যে জঙ্গীবাদবিরোধী দৃঢ় অবস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্বল্পসময়ে আমরা সারাদেশে যে গণসচেতনতার সৃষ্টি ও জাতীয় ঐক্য গড়তে সক্ষম হয়েছি, তা পুরো বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি এদের অর্থদাতা, অস্ত্রদাতা, মদদদাতাসহ নেপথ্যে থাকা সকলকে খুঁজে বের করে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।’ জঙ্গী নির্মূলে একদিকে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে, অপরদিকে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালিত হচ্ছে- এটা আশাব্যঞ্জক। নতুন করে দেশে যেন কোন তরুণ জঙ্গী হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য প্রয়োজন সকল মহলের সচেতনতা, সতর্কতা ও সক্রিয়তা।
×