ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পদাতিকের দুই নাটকের তিন প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৩০ জুলাই ২০১৬

পদাতিকের দুই নাটকের  তিন প্রদর্শনী

সাজু আহমেদ ॥ ঢাকার মঞ্চে অন্যতম নন্দিত নাট্য সংগঠন পদাতিক নাট্য সংসদ (টিএসসি) সাম্প্রতিক সময়ে ভাল ভাল প্রযোজনা মঞ্চে এনেছে। প্রযোজনাগুলো নিয়মিতভাবে ঢাকার মঞ্চে মঞ্চস্থ হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দলটি আগামী আগস্ট মাসে তাদের অন্যতম জনপ্রিয় দুটি প্রযোজনার তিনটি প্রদর্শনী করতে যাচ্ছে। দলসূত্রে জানা গেছে আগামী ৮ আগস্ট সোমবার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার মিলনায়তন এবং ২৭ আগস্ট স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী প্রযোজনা সুদীপ চক্রবর্তী নির্দেশিত ‘গহনযাত্রা’ নাটকের দুই প্রদর্শনী হবে। পাশাপাশি আগামী ১৪ আগস্ট রবিবার জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে ওয়াহিদুল ইসলাম নির্দেশিত দলের অন্যতম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রযোজনা ‘কালরাত্রী’। সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ‘গহনযাত্রা’ নাটকটি রচনা করেছেন রুবাইয়াৎ আহমেদ। নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। ‘গহনযাত্রা’ নাটকে একক অভিনয় করেছেন সৈয়দা সামছি আরা সায়েকা। প্রযোজনাটির সঙ্গীত পরিকল্পনা করেছেন সাইম রানা। আতিকুল ইসলাম জয়ের আলোক পরিকল্পনায় রূপসজ্জা পরিকল্পনা করেছেন শামছি আরা সায়েকা। নাটকের নির্দেশনা সহযোগী সঞ্জীব কুমার দে, সঙ্গীত পরিকল্পনায় সাইম রানা, সঙ্গীত সঞ্চালনায় মেহেদী হাসান মেধা, আলোক পরিকল্পনায় আতিকুল ইসলাম জয়, মঞ্চ পরিকল্পনা সুদীপ চক্রবর্তী, দ্রব্য ও মুখোশ পরিকল্পনা সঞ্জীব কুমার দে, মঞ্চ ও মুখোশ নির্মাণ তৈমুর হান্নান, পোশাক ও রূপসজ্জা পরিকল্পনা শামছি আরা সায়েকা, প্রকাশনায় রুবাইয়াৎ আহমেদ, মঞ্চ ব্যবস্থাপনা মমিনুল হক দীপু। নাটকের কাহিনীতে তুলে ধরা হয়েছে এই ভূখ-ের কোন এক স্থানে জন্ম নেয় উগ্রপন্থার। সেই উগ্রপন্থার অনুসারীরা বিপরীত সব মতবাদ প্রত্যাখ্যান করে শুধুমাত্র একটি মতবাদকেই প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এজন্য তারা চালায় ধ্বংসলীলা, বইয়ে দেয় রক্তগঙ্গা, হত্যা করে অগণিত মানুষ, ধর্ষিত হয় অসংখ্য নারী। ভিন্ন মতাদর্শের এক ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের মানুষদের তারা ধরে নিয়ে বন্দী করে রাখে। বন্দীদশা থেকে পালাতে চায় অনেকে। কিন্তু মারা পড়ে তারা। শুধু একজন বেঁচে যায়। সালমা। কিন্তু বেঁচে গিয়ে ফিরে আসে সালমা। খোলা প্রান্তরে পড়ে থাকা লাশগুলো সমাহিত করবে বলে। এই সময়ে সালমা নিজের অভ্যন্তরে টের পায় অপর কারও অস্তিত্ব। সেই অস্তিত্ব হয়ত তারই বর্ধিত কোন রূপ কিংবা অপররূপে সে নিজেই অথবা অন্যকিছু। আমরা জানি না। সেই অস্তিত্ব তার সঙ্গী হয়। মৃতদের কবর দেয়ার পর সালমা খোঁজ করে তার প্রার্থিত পুরুষের। খুঁজে পায় ল্যাম্পপোস্টে ছিন্নমস্তক ঝুলে আছে সেই পুরুষ। সালমা উগ্রপন্থীদের হাতে ধরা পড়ে। তাকে ধর্ষণের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ঠিক তখন সালমা উপলব্ধি করে এ তার পরীক্ষা, যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সে পাবে পরমের সান্নিধ্য। সালমার নিজের অন্তর্ধানের মধ্য দিয়ে মঙ্গল কামনা করে, যেন সব অনাচার আর বিভেদ লুপ্ত হয় পৃথিবী থেকে। অন্যদিকে লামিসা শিরীন হোসাইনের ‘লোন সার্ভাইভার’ গল্প অবলম্বনে ‘কাল রাত্রি’ নাটকের নাট্যরূপ দিয়েছে ড. তানভীর আহমেদ সিডনী। নির্দেশনা দিয়েছেন ওয়াহিদুল ইসলাম। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেনÑ শাখাওয়াত হোসেন শিমুল, সানজিদা পারভীন, মো. ইমরান খান, ইকরামুল ইসলাম, সালমান শুভ চৌধুরী, জিনিয়া আজাদ, তাসমী চৌধুরী, তৌফিক তমাল, আবু নাসেম লিমন, ফরহাদ সুমন, শরীফুল ইসলাম, সুমন, মশিউর রহমান, সৈয়দা শামছি আরা সায়েকা, জেনিতা রহমান হিয়া প্রমুখ। এছাড়া নির্দেশনা পর্ষদে রয়েছেন আঙ্গিক অভিনয়, মঞ্চ, দব্য- সঞ্জীব কুমার দে, আলো- অতিকুল ইসলাম জয়, পোশাক ও কোরিওগ্রাফি- সৈয়দা শামছি আরা সায়েকা, অডিও ভিজ্যুয়াল- হামিদুর রহমান পাপ্পু, বাচিক- তাসমী চোধুরী। নির্দেশনা উপদেষ্টাÑ সৈয়দ ইশতিয়াক হোসাইন টিটো। নাটকের কাহিনীতে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় মহান মুক্তিযুদ্ধের খ-িত অংশ। রক্তস্নাত লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছিল। একাত্তরের এই লড়াইয়ে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ সকল স্বার্থকে ভুলে এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করার মতো। লামিসা শিরীন হোসাইনের গল্প। উল্লিখিত গল্পের নাট্যকাঠামো ‘কাল রাত্রি’। একজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রাণিত করছেন লড়াইয়ে নামতে। অসহযোগ আন্দোলনের পর্ব থেকে তাঁরা পাকিস্তান রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। মার্চের কালরাতে বেঁচে যাওয়া জগন্নাথ হলের একজন ছাত্র জানায় সে রাতের বিশ্ববিদ্যালযের ভয়াল চিত্র আর তার সঙ্গে ছিলেন একজন শিক্ষক। সব এসে দাঁড়ায় এক স্থানে। মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর পথ প্রদর্শকের চোখে যে বাংলাদেশ বেঁচেছিল এর কথাই বলা হয়েছে নাট্যকাহিনীতে।
×