ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অবরুদ্ধ আলেপ্পোয় রেডক্রস

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৩০ জুলাই ২০১৬

অবরুদ্ধ আলেপ্পোয় রেডক্রস

সিরিয়ার অবরুদ্ধ আলেপ্পো শহরে মানবিক ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য করিডরগুলোর নিরাপত্তা রক্ষার দাবি জানিয়েছে রেডক্রস। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাটি বলেছে, অবরুদ্ধ লোকজনের কাছে ত্রাণকর্মীদের যেতে দেয়ার সুযোগ অব্যাহত রাখা হোক। খবর বিবিসির। সংস্থা বেসামরিক নাগরিকদের শহর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টির জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেছে। কিন্তু সংস্থা বলেছে, শহর ত্যাগ হতে হবে নাগরিকদের স্বেচ্ছায় এবং যারা শহরে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে অবশ্য। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, জোটের কোন হামলায় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয় কি-না তা নিরূপণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে যে, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের বিরুদ্ধে লড়াইরত জোট ওই এলাকায় আঘাত হেনেছে এবং তারা বলেছে, তারা বিষয়টি আরও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলে প্রায় তিন লাখ মানুষ আটকা পড়েছে। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেরগেই শইগু করিডরগুলোকে এক বড় ধরনের মানবিক কাজ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, আলেপ্পো বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ উদ্যোগ হচ্ছে সবকিছুর উপরে। কিন্তু এ উদ্যোগ কর্মকা-ে অনেক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সতর্কতার সঙ্গে অংশ নিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ কর্মকা- বেসামরিক নাগরিকদের জোর করে উচ্ছেদের চেষ্টা এবং জঙ্গী গ্রুপগুলোর আত্মসমর্পণের চেষ্টা হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। তিনি বলেন, এখন প্রয়োজন আলেপ্পোর নিরপরাধ জনগণকে তাদের বাসস্থানে নিরাপদে থাকতে সমর্থ করতে হবে এবং তাদের কাছে ত্রাণকর্মীদের প্রবেশে সুযোগ দিতে হবে। এ বিষয়গুলোতে নীতিগত দিক থেকে সম্মত হয়েছে রাশিয়া ও সিরীয় প্রশাসন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল স্টিফেন ও’ব্রায়েনও বলেছেন, উল্লিখিত নাগরিকদের সর্বাধিক প্রয়োজনের স্বার্থে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, এটা তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, যদি দেখা যায় কোন প্রস্তাব ও উদ্যোগে নাগরিকদের ইচ্ছামতো নির্দিষ্ট পথে বেরোবার জন্য সুযোগ দেয়া হচ্ছে এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে পথ ব্যবহারে কারও ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে না অথবা তারা শহর থেকে বেরিয়ে এমন দিকে বা এমন সব স্থানে যাচ্ছে যা তাদের অপছন্দের তা হলেই সকল পক্ষের স্বীকৃতি থাকবে যে, তারা নিরাপদ। আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি বলেছে, বাশারবিরোধী বিদ্রোহীরা চার বছর ধরে আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চল দখল করে রেখেছে। সরকারী বাহিনী তাদের কাছ থেকে নগরীর পুরো নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় এটি ঘিরে রেখেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, নগরীর আরও কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সরকারী বাহিনী। বাশারের অনুগত সেনাবাহিনী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো বিচ্ছিন্ন করে সেখানকার সরবরাহ পথ বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে সেসব স্থানে আটকে পড়া বহু সাধারণ মানুষ খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সঙ্কটে রয়েছে। বাশার বাহিনীর চেষ্টায় সহায়তা করছে রাশিয়ার বিমানবাহিনী। এদিকে জাতিসংঘ আলেপ্পোয় আটকে পড়া প্রায় তিন লাখ লোকের অবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। বিশ্ব সংস্থাটির মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের প্রধান স্টিফেন ও’ব্রায়ান সোমবার বলেছেন, ‘আগস্টের মাঝামাঝি নগরীতে খাদ্যের মজুদ ফুরিয়ে যেতে পারে। হামলা চলতে পারে অনেক চিকিৎসা স্থাপনায়। এমন প্রেক্ষাপটে করিডরগুলোকে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী শইগু ‘বড় ধরনের মানবিক তৎপরতা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, সর্বাগ্রে আলেপ্পোর বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হলো এ পদক্ষেপের লক্ষ্য। তিনি আরও বলেন, বেসামরিক নাগরিক ও নিরস্ত্র বিদ্রোহীদের জন্য খোলা তিনটি করিডরে চিকিৎসাসেবা ও খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্র থাকবে। এ প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলোর সহযোগিতাকে স্বাগত জানানো হবে। সরকারী বাহিনী দাবি করেছে, বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আলেপ্পো প্রদেশে রসদ সরবরাহের সর্বশেষ পথটিও তারা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি জানিয়েছে, ১১ জুলাই থেকেই মূলত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে আলেপ্পোকে। ২০১২ সালেই সিরিয়ার অন্যতম প্রধান শহর আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পশ্চিম অংশ সরকারী বাহিনীর এবং পূর্বাংশ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
×