ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বীর মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিল

পুরুষ সেজে যুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৯ জুলাই ২০১৬

পুরুষ সেজে যুদ্ধ

পান্থ আফজাল পুরুষের পোশাক পরে যিনি মুুিক্তযুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নেন তিনি মুুিক্তযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিল। মহান মুুিক্তযুদ্ধে যে কয়জন দেশপ্রেমিক নারী প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে শিরিন বানু মিতিল নামটি সমুজ্জ্বল। যিনি পুরুষের ছদ্মবেশে সরাসরি যুদ্ধ করেন। মুুিক্তযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা এই নারীর জন্ম ১৯৫১ সালের ২ সেপ্টেম্বর পাবনা জেলায়। বাবা খোন্দকার শাহজাহান মোহাম্মদ ও মা বিপ্লবী সেলিনা বানু। বাবা ছাত্রজীবনে ও ১৯৫২ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুুক্ত ছিলেন। মা সেলিনা বানু পাবনা জেলার ন্যাপ সভানেত্রী এবং ১৯৫৪ সালের যুুক্তফ্রন্ট সরকারের এমপি ছিলেন। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হওয়ায় নিজেও ছিলেন রাজনীতি সচেতন। ছোটবেলা থেকেই ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুুক্ত ছিলেন তিনি। ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাবনায় প্রাথমিক প্রতিরোধ পর্ব হয় একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকেই চলে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী সেনারা পাবনা শহরে ঢোকে। জারি হয় সান্ধ্য আইন। ২৬ মার্চ তারা রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার শুরু করে। সাধারণ মানুষের ওপরও নেমে আসে অত্যাচার। জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় পাল্টা আঘাত হানার। ২৫ মার্চ রাতে পুলিশ লাইনের যুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধ রূপ নেয় জনযুদ্ধে। ঘরে ঘরে মেয়েরাও যুদ্ধে নামার কথা ভাবতে শুরু“করে। নারী হয়েও শত প্রতিকূলতার মধ্যে শিরিন বানু মিতিল যুদ্ধে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। এক আত্মীয়র কাছে মাত্র ৩০ মিনিটে থ্রি নট থ্রি চালানো শিখে ফেলেন। কিন্তু নারী হিসেবে সে সময়কার সমাজে সম্মুখযুদ্ধে যাওয়া ছিল খুবই কঠিন ব্যাপার। তাই তিনি শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতাকে অনুসরণ করে পুরুষের পোশাক পরে পুরুষবেশে যুদ্ধে যোগ দেন। তাদের অস্ত্র ছিল গরম পানি, এ্যাসিড বাল্ব, বটি আর দা। শিরিন বানু মিতিলের মতো সংগ্রামী মেয়েদের মানসিকতা ছিল ‘মেরে মরো’। ২৮ মার্চ টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ৩৬ জন পাকিস্তানী সেনার সঙ্গে জনতার এক তুমুল যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে শিরিন বানু মিতিল ছিলেন একমাত্র নারীযোদ্ধা। এই যুদ্ধে ৩৬ জন পাকিস্তানী সেনা নিহত এবং দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ভারতের স্টেটসম্যান পত্রিকার সাংবাদিক শিরিন বানু মিতিলের ছবিসহ পুরুষ সেজে যুদ্ধ করার খবরটি পত্রিকায় প্রকাশ করে দিলে তাঁর পক্ষে আর পুরুষ সেজে যুদ্ধ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু তাঁর যুদ্ধ থেমে থাকেনি। ৯ এপ্রিল নগরবাড়িতে যুদ্ধ চলাকালীন কন্ট্রোল রুমের গুরুদায়িত্ব পড়েছিল শিরিন বানুর ওপর। মহিলাদের একমাত্র সশস্ত্র ট্রেনিং ক্যাম্প ‘গোবরা ক্যাম্পের’ সঙ্গে যুুক্ত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে পাবনা শহর পাকিস্তানী বাহিনী দখল করলে তিনি ২০ এপ্রিল সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান। ২০ জুলাই তিনি হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। শিরিন বানু মাতৃভূমির সুযোগ্য সন্তান। বীর মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু তিন সন্তানের জননী। নারী আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। এই বছর ‘বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ’ তাঁকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করে। তিনি প্রিপট্রাস্ট নামে একটি এনজিওর পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।
×