ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খেলা যত বেশি হবে আমাদের জন্য তত ভাল। এ বছর খুব বেশি ম্যাচ নেই। কিন্তু আগামী বছর থেকে সব ট্যুর বাইরে, চেষ্টা থাকবে ভাল খেলার

নিজেকে শোধরাতে মনোযোগী সৌম্য

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৯ জুলাই ২০১৬

নিজেকে শোধরাতে মনোযোগী সৌম্য

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সর্বশেষ ঢাকা লীগ খেলেছেন বাংলাদেশ দলের হার্টহিটার ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার। সর্বশেষ ১০ ম্যাচের একটিতেও তার অর্ধশতক নেই। শুধু ঢাকা লীগেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সৌম্যের পারফর্মেন্সে চলছে ভাটা। এ বছর জানুয়ারি থেকে যে বাংলাদেশ দল টানা টি২০ ম্যাচ খেলছে, সেখানেও সৌম্য ব্যর্থ। এ বছর ১৬ টি২০ ম্যাচ খেলে একটিতেও অর্ধশতক করতে পারেননি। সর্বোচ্চ স্কোর ৪৮। সেটি টি২০ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেটি আবার সৌম্যের ১৯ ম্যাচের টি২০ ক্যারিয়ারেরই সর্বোচ্চ স্কোর। আরেকটি ম্যাচেই শুধু ৪০ রানের বেশি করতে পেরেছেন। ব্যর্থতাই সৌম্যের সঙ্গী হয়ে চলেছে। অথচ ওয়ানডেতে উড়ন্ত সৌম্যকেই মিলেছে। সর্বশেষ দুই ম্যাচেই করেছেন অর্ধশতক। এখন সৌম্য সরকার সুযোগ পেলেই ব্যর্থতা দূর করার চেষ্টা করবেন বলেই বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে গত বছর আর এই বছর তুলনা করলে নিজের কাছে কি মনে হয়, আপনারা তো দীর্ঘদিন শুধু টি২০র মধ্যেই ছিলেন? সৌম্য জানালেন, ‘আসলে খেলা যত বেশি হবে, আমাদের জন্য তত বেশি ভাল হবে। খেলা কম থাকলে খেলার প্রতি আমাদের মনোযোগটা বেশি থাকে।’ এ বছরে খুব বেশি ম্যাচ নেই। কিন্তু আগামী বছর থেকে সব ট্যুর বাইরে। নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, ভারত ও আয়ারল্যান্ড। ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত খেলেছেন। এই ট্যুরগুলোতে বাইরে ক্যারি করা, কি ভাবছেন। বাইরে ভাল খেলা কতটা চ্যালেঞ্জ? সৌম্য বলেছেন, ‘অবশ্যই দেশে খেলা আর বাইরে খেলা ডিফারেন্স থাকে। ওদের আবহাওয়া আলাদা। যেখানে খেলা হোক আমাদেরই খেলা লাগবে। দেশে যেভাবে আমরা খেলি, ওইভাবে আমরা কন্টিনিউ করতে পারি বা দেশে যেভাবে আমাদের এফোর্ড থাকে, বাইরে এগুলো যদি নিতে পারি। বাইরের আবহাওয়া আলাদা, এসব চিন্তা না করে আমরা দেশে যেভাবে উৎফুল্ল হয়ে খেলি, সেভাবে খেললে বাইরে আর দেশের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না।’ আপনার ওয়ানডের শুরুটা ভাল হয়েছিল। এবার নিউজিল্যান্ডে, ইংল্যান্ডে খেলতে হবে। আগামী বছর সাউথ আফ্রিকাতে খেলতে হবে। ডিফারেন্ট কন্ডিশন, ডিফারেন্ট চ্যালেঞ্জ। পারসোনালি ব্যাটিং নিয়ে আপনার কি পরিকল্পনা? সৌম্য জানান, ‘প্ল্যান বলতে গেলে ওগুলো সব বাউন্সি ট্র্যাক। নিউজিল্যান্ড, আফ্রিকা, ইংল্যান্ড। ওদের ওখানে সুইংগুলো বেশি হবে। সো ওইভাবে চিন্তা করতে হবে। ভালভাবে সুইং বল নিয়ে প্র্যাকটিস করলে আমার মনে হয় আমরা ভাল করতে পারব। আমরা তো আর ওয়েদার চেঞ্জ করতে পারব না।’ আমাদের যে পিচ আছে সেগুলো কিন্তু ঐভাবে সুইংয়িং কোন ট্র্যাক নেই। আমাদের এখানে এমন কোন ট্র্যাকও নেই যে আপনি সুইং বলে আলাদা প্যাকটিস করতে পারছেন। আমরা কয়েকদিন আগে দেখেছিলাম আপনারা বাউন্স বলে প্র্যাকটিস করেছেন, কিন্তু সুইংটাতো আর ঐভাবে প্র্যাকটিস করা যায় না। সেটার জন্য পারটিকুলার কোন প্ল্যান আছে? সৌম্য বললেন, ‘আসলে আমরা ব্যাটসম্যান, আমাদের ব্যাটিং নিয়ে চিন্তা করতে হবে, কোথায় সুইংয়ে সমস্যা, কোথায় সুইংয়ে খেলতে হবে। বোলাররা তো অবশ্যই সুযোগ নেবে। তাছাড়া আমরা মেশিনে সুইং বল খেলার একটা সুযোগ পাই। ওখানে সুইংটা বাড়িয়ে নিয়ে প্র্যাকটিসটা বাড়ানোর একটা সুযোগ পাই আমরা। প্র্যাকটিসের চেয়ে একটি জিনিস আছে, যদি মেন্টালি একটা চিন্তা করেন, যে বলটা এভাবে আসবে, তাহলে আপনার এটা অনেক সময় কাজে দেবে।’ পৌনে দুই বছরের ক্যারিয়ার আপনার। নিজেকে এখন কোথায় দেখছেন? সৌম্য জানালেন, ‘যেহেতু অনেকদিন ওয়ানডে থেকে দূরে ছিলাম। টি২০তে যেহেতু ভাল করিনি। এটা নিয়ে নিজের একটা প্ল্যান আছে। সামনে যে ম্যাচগুলো আসবে নিজেকে প্রুফ করার চেষ্টা করব। অবশ্যই তিন ফরম্যাটে ভাল করার চেষ্টা করব। নিজের বেস্ট দেয়ার চেষ্টা করব।’ আপনার জন্য লাস্ট আটটা ওয়ানডেতে তিনটা ফিফটি ছিল। এমনকি ৮০, ৯০ এবং ৭০ এর মতো ইনিংস ছিল। ৫০ ওভারের ম্যাচ থেকে যখন আপনি টি২০তে ঢুকলেন, তখনই আপনার খারাপ সময় শুরু হলো। যে কোন কারণেই হোক আপনার এই সমস্যা দেখা দিল। আপনার প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডে থেকে যখন টি২০তে খেললেন, তখন থেকেই আপনার বাজে খেলা শুরু হলো। যখন আবার ওয়ানডেতে ব্যাক করলেন, আবারও সেই ফর্মহীনতা। আপনার কি মনে হয় টি২০ খেলার পর আপনার রিদোমে সমস্যা দেখা দিল? সৌম্য তাই বললেন, ‘হ্যাঁ এটা অবশ্যই। টি২০ অনেকদিন খেলেছি। তো চেষ্টা করছি এই ম্যাচটা নিজের মধ্যে নিতে। কিন্তু আমি নিতে পারেনি। ভুলের সংখ্যাটা বেশি ছিল। এরপর আবার প্রিমিয়ার লীগ শুরু হলো। এটা নতুন ফরম্যাট। যদিও ওয়ানডে আমার প্রিয় ফরম্যাট। তারপরও টি২০র কারণে আমার রিদোমটা হারিয়ে ফেলেছিলাম। রিদোমটা ফেরানোর জন্য প্রিমিয়ার লীগে সেøা খেলা। পরে আমি চিন্তা করছি আমার নিজের যেটা ছিল সেটাই বেস্ট। পরে সেখানে ফেরার চেষ্টা করেছি। প্রিমিয়ার লীগের শেষ দিকে ভাল খেলেছি। বলছেন আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। তাহলে কি ইংল্যান্ড সিরিজে সেই আত্মবিশ্বাস কাজে লাগবে? সৌম্য কাজে লাগানোর দিকেই মনোযোগী, ‘অবশ্যই। পরবর্তী খেলাটা ওইটাই। ওটাটেই আমার নিজের যে আত্মবিশ্বাস ওটা দেয়ার। যেভাবে যাচ্ছে ওয়ানডে হলে তো আমাকে পারফর্ম করতে হবে। পারফর্ম ছাড়া তো কোন কিছু সম্ভব নয়।’ ইংল্যান্ড সিরিজটা কী বাড়তি চ্যালেঞ্জ? সৌম্য জানালেন, ‘সব সময়ই সব খেলায় আমার জন্য চ্যালেঞ্জ। কারণ চ্যালেঞ্জ ছাড়া কোন খেলায় উচিত নয়। নিজের সঙ্গেই সবসময় চ্যালেঞ্জ থাকে।’ আপনি বলছিলেন ওয়ানডে ও টি২০তে ফর্ম ফিরে পাওয়া। এবার অনেকদিন পর টেস্ট খেলবেন। তার জন্য আলাদা কোন পরিকল্পনা আছে কী? সৌম্য পরিকল্পনার কথাই বললেন, ‘প্ল্যান তো অবশ্যই থাকে। যেহেতু ফরম্যাটগুলো আলাদা। তাছাড়া অনেক দিন পর পর খেলাগুলো আসে। এ জন্য নতুন নতুন প্ল্যানগুলো আছে। টিমের প্ল্যান থাকে। চেষ্টা করব নিজের যে প্ল্যানগুলো আছে সে অনুযায়ী খেলার।’ সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারলেই ব্যর্থতা দূর করাও সম্ভব। সৌম্য সেই চেষ্টাতেই আছেন।
×