ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যাপ্ত ত্রাণ দেয়া হোক

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৯ জুলাই ২০১৬

পর্যাপ্ত ত্রাণ দেয়া হোক

সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব জেলা হলো- গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর ও রাজবাড়ী। এর বাইরেও কোন কোন জেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে নতুন করে। তবে তিস্তা ও সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমেছে। বিভিন্ন স্থানে লক্ষাধিক মানুষের পানিবন্দী হওয়ার খবর আছে। বন্যার পানিতে ভেসে ও ডুবে গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জ এবং সিরাজগঞ্জে পাঁচ শিশুসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে চরম খাদ্যাভাব ও সুপেয় পানির সঙ্কট। পয়োনিষ্কাশন এবং হাঁস-মুরগি-গবাদিপশুর সংরক্ষণসহ পশু খাদ্যের অভাব প্রকট। সর্বাধিক যেটা দুঃখজনক তা হলো, কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও বন্যাদুর্গত এলাকায় তেমন ত্রাণ তৎপরতার খবর নেই। ফলে অনেকেই অতীব কষ্টে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে কোথাও কোথাও কিছু ত্রাণের ব্যবস্থা নেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অনেক দুর্গম-দুর্গত এলাকায় বিশেষ করে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে ত্রাণ তৎপরতার আদৌ কোন খবর নেই। অনেক জায়গায় কিছু মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছে। রোগ, শোক, আমাশয়, পেটেরপীড়া, সর্দি-কাশি-জ্বরের প্রকোপও লক্ষণীয়। বীজতলাসহ ফসলহানির খবরও আছে। উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে, এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশের জেলাগুলো থেকে কমবেশি কয়েক হাজার বন্যাদুর্গত মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে লালমনিরহাট জেলায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এর জন্য অবশ্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও চলছে। অতঃপর প্রশাসনের জরুরী কর্তব্য হবে সবরকম সাহায্য-সহায়তা নিয়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো। এনজিওগুলোও এক্ষেত্রে জরুরী ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। এটা সত্য যে, শ্রাবণের মাঝামাঝি অতিবাহিত হতে চললেও এখনও পর্যন্ত সারাদেশে কাক্সিক্ষত মাত্রায় বৃষ্টিপাত হয়নি। উত্তরাঞ্চল ব্যতিরেকে দেশের অন্য নদ-নদীগুলোর পানি বিপদসীমা অতিক্রমের খবর নেই। বাংলাদেশের যেসব অংশে বর্তমানে বন্যা দেখা দিয়েছে, সেসবই মূলত সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পানির ঢল, যা অনেক সময় বাঁধ উপচেপড়ার কারণে ছেড়ে দেয়া হয়। একদিকে তিস্তা-ধরলা-তোরসা, অন্যদিকে অসমের ব্রহ্মপুত্রের বন্যার অনিবার্য প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে। প্রতিবেশী দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন নদ-নদীর বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণের কারণেই প্রতিবছর এমন ঘটনা ঘটে থাকে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আর এর অনিবার্য অসহায় শিকার হচ্ছে দু’দেশের সীমান্তবর্তী লাখ লাখ গরিব মানুষ। প্রধানত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তির কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিন থেকে বিরাজমান পানি সমস্যার নিরসনসহ তিস্তা-ফেনীর পানি সমস্যাটিও ঝুলে আছে। অথচ বন্যাদুর্গত ও নদীভাঙ্গন কবলিত অসহায় মানুষের সাংবাৎসরিক দুর্দশা লাঘবে দু’দেশের মধ্যে পানি সমস্যার মীমাংসা ছাড়া গত্যন্তর নেই। আমরা যথাসম্ভব দ্রুত এ বিষয়ে ভারত সরকারের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করি। বন্যা-ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের খরা মৌসুমে মঙ্গাপরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দেয়া হয়েছে দরিদ্র ও বিধবা ভাতা, কাবিখা-কাবিটা ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে। এবার হঠাৎ করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় হয়ত প্রশাসনের প্রস্তুতি ছিল না তেমন। যা হোক, এখন ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের উচিত সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার করার পাশাপাশি প্রয়োজন বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনা খাবার, জরুরী ওষুধপত্র, তাঁবু ইত্যাদি। গরিব ও অসহায় মানুষদের কাছে এখনই সেসব পৌঁছে দেয়া প্রশাসনের জরুরী কর্তব্য।
×