ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরোজা বেগম স্বর্ণপদক পেলেন সাবিনা ইয়াসমিন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৯ জুলাই ২০১৬

ফিরোজা বেগম স্বর্ণপদক পেলেন সাবিনা ইয়াসমিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সব মিলিয়ে চমৎকার এক আয়োজন। এক কিংবদন্তি শিল্পীর নামাঙ্কিত পদকটি তোলে আরেক কিংবদন্তি শিল্পী। তারা দু’জনই সঙ্গীতের সাধক। সঙ্গীতের সাতটি স্বরের কাছে সমর্পিত করেছেন নিজেদের। জাগতিক দৃষ্টিতে দু’জনের পার্থক্য হচ্ছে একজন জীবিত ও অপরজন পাড়ি জমিয়েছেন না-ফেরার দেশে। নজরুলের গানের পাখি নামে পরিচিত প্রয়াত বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী ফিরোজা বেগমের নামাঙ্কিত পদকটি প্রদান করা হলো প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকে। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় নজরুলের সুর ধরে। একঝাঁক শিল্পীর কণ্ঠে গীত হয় ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ ও ‘আমরা চঞ্চল’। এই সুর থামতেই ‘ও আমার দেশের মাটি’ গানের বাণীতে পরিবেশিত সমবেত নৃত্য। এভাবেই তারুণ্যের জয়গান ও স্বদেশের প্রতি ভালবাসার প্রকাশে শুরু হয় ২০১৬ সালে ফিরোজা বেগম স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠান। ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক ট্রাস্ট ফান্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় এ পদক প্রদান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর সদ্য প্রবর্তিত পদকটি প্রথমবার পেলেন সাবিনা ইয়াসমিন। একই আয়োজনে ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের প্রথম স্থান অধিকারী পার্থ প্রতিম মিত্রকেও স্বর্ণপদক এবং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম মাসুদ খানকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পদকপ্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেয়া হয়। পদকের সম্মাননা হিসেবে সাবিনা ইয়াসমিনকে স্বর্ণপদক ও দুই লাখ টাকা এবং পার্থ প্রতিম মিত্রকে স্বর্ণপদক ও বিশ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন বেগম আকতার কামাল ও নৃত্যকলা বিভাগের প্রধান রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ট্রাস্ট ফান্ডের সভাপতি ও ফিরোজা বেগমের ভাই এম আনিস উদ দৌলা এবং সঙ্গীত বিভাগের প্রধান ড. মহসিনা আক্তার খানম (লীনা তাপসী খান)। পরিবারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ফিরোজা বেগমের দুই ছেলে হামিন ও শাফিন আহমেদ। পদকপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ফিরোজা বেগম এমন একজন শিল্পী যে একবার তাঁর গান শুনেছেন সেই তার গুণমুগ্ধ হয়ে গিয়েছেন। আমি নিজেও তাঁর ভক্ত ছিলাম। দুই-তিন বছর আগে কমল দাশগুপ্তের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে সর্বশেষ ফিরোজা বেগমের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। সে অনুষ্ঠানে তাঁর গান শুনে কেঁদেছিলাম। ঐ বয়সেও তাঁর যে কণ্ঠ ছিল, তা অতুলনীয়। এমন উচ্চমানের শিল্পী যুগে যুগে আসে না। আর আসবে কিনা তাও জানি না। আজকের এই দিনটি আমার জন্য অত্যন্ত স্মরণীয়, আনন্দ ও গর্বের দিন। কারণ আমাদের সবার প্রিয় ফিরোজা বেগমের নামাঙ্কিত এ পদকটি পেয়েছি। পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রকে আশীর্বাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তার পথ যেন সুমধুর হয় সে কামনা করি। সঙ্গীতে যেন তার নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, প্রত্যাশা থাকল। আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ফিরোজা বেগমের স্মৃতি এ দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে অমলিন রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গীতকে বহু দূর এগিয়ে নিয়েছেন। যিনি তার নামাঙ্কিত পদক পেলেন সেই সাবিনা ইয়াসমিনও তার উত্তরসূরী হিসেবে দেশের সঙ্গীতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, একজন কিংবদন্তির স্মৃতিতে দেয়া এ পদক পেলেন আরেক কিংবদন্তি শিল্পী। ফিরোজা বেগম শিল্পী হিসেবে যে মর্যাদার স্থানে রয়েছেন, তা অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। পরিবারের পক্ষে ছেলে শাফিন আহমেদ বলেন, এটি একটি বড় ধরনের কাজের সূচনা হলো। আগামী দিনে ফিরোজা বেগমের গান ও কর্মকে সবাইকে মনে করিয়ে দেবে এমন কাজ করতে চাই। তার জীবনকাহিনী তার জীবদ্দশায় হওয়া উচিত ছিল, তবে এখন এ কাজ সবার প্রচেষ্টায় হওয়া উচিত। পাঠ্যপুস্তকে ফিরোজা বেগমের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছাপোষণ করেন তিনি। নবীন শিল্পীদের উদ্দেশ্যে হামিন আহমেদ বলেন, ফিরোজা বেগমের সঙ্গীতচর্চা ও সঙ্গীত সাধনায় নজরুল সঙ্গীতকে যে মর্যাদার স্থানে নিয়ে গেছেন, তার সে আদর্শ নিয়ে পথ চললে নবীন শিল্পী ও সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা সাফল্যের দেখা পাবেন। পদক প্রদান শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত ও নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে চ্যানেল আই। গান ও কথায় হায়াৎ মামুদের জন্মদিন উদ্্যাপন ॥ বক্তার কথা এবং শিল্পীর গান ও আবৃত্তির মধ্য দিয়ে শিক্ষাবিদ, গবেষক ও একুশে পদক বিজয়ী অধ্যাপক হায়াৎ মামুদের ৭৭তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করেছে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘রঙে ভরা বঙ্গ’। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় জন্মদিনের এই আয়োজন। হায়াৎ মামুদের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা করে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মা, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের রাশিয়ান ভাষা বিভাগের প্রধান এলেনবাস প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদের ছাত্র প্রাবন্ধিক ও গবেষক সরকার আবদুল মান্নান। এছাড়া জন্মদিনের আয়োজনে কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক প্রেরিত একটি ই-মেইল বার্তা পড়ে শোনানো হয়। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, হায়াৎ মামুদ সারাজীবন জ্ঞানের চর্চা করেছেন। শুনেছি তিনি ছাত্রদের অসাধারণ পড়াতেন। আমার আফসোস যদি আমি তার ছাত্র হতাম, তবে বিশেষ আনন্দ পেতাম। তিনি আরও বলেন, সহজ-সরল এই মানুষটির মধ্যে একটা অদ্ভুত কাঠিন্য রয়েছে। তিনি যা বিশ্বাস করেন, তিনি তা সত্য বলে মানেন। তা থেকে তাকে কখনও একচুলও সরানো যায়নি। জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, সাম্প্রদায়িকতা কষনও হায়াৎ মামুদকে স্পর্শ করেনি। মুক্তবুদ্ধির চর্চায় তিনি আলো ছড়াচ্ছেন। তিনি পথ দেখাবেন আমরা সেই পথ ধরেই চলব। হায়াৎ মামুদের রাশিয়ান বন্ধু এলেনবাস বলেন, ১৯৯৫ সালের কথা, তখন ঢাকায় কারফিউ চলছিল, সে অবস্থার মধ্যেও হায়াৎ মামুদ আমার বাসায় এলেন। রাশিয়ান ভাষার একটি বইয়ের অনুবাদ নিয়ে তিনি এতটাই মনোনিবেশ করেছিলেন এবং কারফিউর কথা তিনি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন। আয়োজনের সূচনালগ্নে সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বুলবুল মহলানবীশ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন জোবায়দা লাবনী।
×