ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবিরোধী কমিটিতে সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৯ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীবিরোধী কমিটিতে সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের নির্দেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জঙ্গীবিরোধী কমিটিতে সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় সারাদেশে সন্ত্রাস ও নাশকতাবিরোধী কমিটিতে সকল দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা থাকবেন। এই কমিটি কোন দলের অঙ্গ সংগঠন হবে না। চলমান জঙ্গী তৎপরতার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে বৃহস্পতিবার একথা জানালেন দলটির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ। কয়েক বছর আগে বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় জেলায় জেলায় সন্ত্রাসবিরোধী এসব কমিটি করা হয়েছিল। সম্প্রতি গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর ওসব কমিটি সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কমিটি সচল করার তাগিদ দিয়েছেন। চারদিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কার্য অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ায় বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সন্ত্রাস ও নাশকতাবিরোধী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী ‘অবকোর্স করা হবে।’ স্থানীয় সরকার, সিটি কর্পোরেশন, মিউনিসিপ্যালিটিস, ইউনিয়ন পরিষদ- সবাই এতে অন্তর্ভুক্ত হবে। এটা কোন দলীয় কমিটি বা কোন দলের অঙ্গ-সংগঠন হবে না। জাতীয় ঐক্যে বিএনপি-জমায়াতের প্রতিনিধিদের রাখা হবে কিনা- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা তো রাজনৈতিক প্লাটফর্ম নয়, তাই ব্যাপারটা এখানে উল্লেখই না করলাম। নিশ্চয় কালকে বা পরশুদিন পাবেন, এ বিষয়টা আলোচনা হবে। সন্ত্রাসবিরোধী কমিটিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বাইরে বিএনপি-জামায়াতের কাউকে রাখার সুযোগ আছে কিনা- এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এটা তো এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি যে রাজনৈতিক দল নিয়ে হবে, না প্রশাসন নিয়ে হবে, নাকি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার দিয়ে করা হবে, না পৌরসভার মেয়র দিয়ে হবে; এটার একটা নির্দেশনা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের এসব কমিটি করার কথা। প্রশাসনের ব্যাপারে যখন সিদ্ধান্ত হবে, উদ্যোগ নেয়া হবে তখন প্রশাসনিক আওতার ভেতরে কমিটিগুলো ভবিষ্যতে করা হবে। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিন বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, জেলা সদর থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত গঠিত কমিটিকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে করতে ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। গুলশান-শোলাকিয়ায় হামলার পর সন্ত্রাস ও নাশকতাবিরোধী কমিটি এবং কোর কমিটিকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমও ইতোপূর্বে জানান। ২০১৩ সালে মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ওয়াড, ইউনিয়ন পর্যায়ে সন্ত্রাস ও নাশকতাবিরোধী কমিটি করে সরকার। শফিউল জানিয়েছিলেন, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরা কোর কমিটিতে সভাপতিত্ব করেন। আর বিভাগ পর্যায়ে কিছু ঘটলে বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে কোর কমিটির সভা হয়। সেখানে পুলিশের ডিআইজি, মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডাকা হয়। জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে কোর কমিটির সভায় পুলিশ সুপার (এসপি), আনসার, বিজিবির প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা হয় বলেও জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। জনপ্রশাসনমন্ত্রী আশরাফ জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় তৃণমূল পর্যায়ে কাজের ওপর জোর দিয়ে বলেন, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয়ভাবে তাদের (জঙ্গী) নিরস্ত্র করা অথবা তাদের গতিবিধি পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, এগুলো তৃণমূল পর্যায়েই সব চেয়ে ভাল। বৈঠকে জেলা প্রশাসকরা বাসস্থান, পরিবহন, চালকদের বেতনসহ ছোটখাটো কিছু বিষয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানান মন্ত্রী আশরাফ। জেলা প্রশাসকদের কাজে কোন সমন্বয়হীনতা নেই বলেও জানান তিনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডিসিরা কোন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এটা তো পুলিশ প্রশাসনের কাজ, তারা (ডিসি) জনমত তৈরি করতে লিডারশিপ দেয়, এটাও গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রদত্ত তথ্যে জানানো হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেষনে দেশের সব সরকারী গুরুত্বপূর্ণ ভবনের নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে। এছাড়া জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্তও নেয়া হয় সম্মেলনে। এতে আরও বলা হয়, বিসিএস কর্মকর্তাদের জন্য একই ধরনের ডিজাইনে পর্যায়ক্রমে প্রতি জেলায় একটি করে অফিসার্স ডরমিটরি নির্মাণ করা হবে। আর জেলা প্রশাসক সম্মেলনসহ এ ধরনের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য ঢাকায় আবাসিক সুবিধাসহ মাল্টিপল কনফারেন্স সেন্টার স্থাপন করা হবে। দেশের পুরাতন সার্কিট হাউসের স্থলে নতুন সার্কিট হাউস নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ডিসি সম্মেলনে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ॥ বাংলাদেশের অপরিচিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো জনসম্মুখে তুলে আনার জন্য জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি আরও বলেন, দেশের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সকল বিভাগীয় কমিশনারকে বিশেষ ধরনের এ্যাপস তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কার্য অধিবেশনে এ আহ্বান জানান তিনি। রাশেদ খান মেনন বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী ৭২৮ স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই পরিচিতি পেলেও এখনও অন্ধকারে রয়েছে বেশ কয়েকটি স্থাপনা। তিনি বলেন, যে সমস্ত পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান ও স্থাপনা এখনও দৃষ্টির আড়ালে রয়ে গেছে তা জনসম্মুখে তুলে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া নিঝুম দ্বীপ, ভোলার মনপুরা ও চর কুকরিমুকরি, নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুর, বরিশাল-পিরোজপুরের ভাসমান হাট পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। এসব এলাকায় অবকাঠামোগত ও যোগাযোগ ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, পর্যটনের ক্ষেত্রে আমাদের নিরন্তর প্রয়াসের স্বীকৃতি আমরা পেতে শুরু করেছি। গত বছর ঢাকায় আমরা আন্তর্জাতিক বুড্ডিস্ট কনফারেন্স আয়োজন করার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছি। তিনি জানান, প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের পর্যটন বিষয়ক সংগঠন ইউএনডব্লিউটিএ’র ২৯তম সিএপি-সিএসএ সম্মেলন ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। ওআইসির পর্যটনবিষয়ক সম্মেলন একই বছর ঢাকায় অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। ডব্লিউটিটিসির গবেষণার বরাত দিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পর্যটন খাতে সম্পৃক্ত। ২০২৬ সালে বাংলাদেশে শুধু এ খাতে প্রত্যক্ষভাবেই ১২ লাখ ৫৭ হাজার লোক কাজ করবেন। সংস্থাটির মতে, বিশ্বের ১৮৪টি পর্যটন সমৃদ্ধ দেশের মধ্যে র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬০ নম্বর। দশ বছর পর বাংলাদেশ ১৮তম অবস্থানে চলে আসবে। ফলে জাতীয় আয়ে বড় অবদান রাখবে এ শিল্প। এ জন্য দরকার পর্যটন শিল্পে দ্রুত বিনিয়োগ। সরকারও চাচ্ছে পিপিপি ও দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে।
×