ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রীন সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই ॥ মেয়র খোকন

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩ হাজার ১৮৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৯ জুলাই ২০১৬

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩ হাজার ১৮৩ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ হাজার ১৮৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগর ভবনের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। এ সময় মেয়র সাংবাদিকদের বলেন, আগামী বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটিকে আমরা ক্লিন সিটির ন্যায় গ্রিন সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমরা ঘুমিয়ে নয়, জেগে জেগে স্বপ্নজাল বুনি এবং তা বাস্তবায়ন করি। এজন্য যা যা প্রয়োজন তাই করা হবে। আমরা আবাসিক এলাকায় স্থাপিত সকল অবৈধ স্থাপনা কয়েক ধাপে সরাতে কাজ করব। গুলিস্তানসহ ডিএসসির বিভিন্ন স্থানের হকারদের তালিকা করা হচ্ছে। এদের মার্কেট নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে ব্যবসার জন্য স্থান দিতে পারিকল্পনা করা হচ্ছে। সাঈদ খোকন বলেন, আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রম ও সাফল্য অন্য যে কোন সিটি কর্পোরেশনের তুলনায় বেশি। বিশেষ করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তুলনায় শতভাগ বেশি। এছাড়া আমাদের অর্জিত অন্যতম সাফল্য হচ্ছে দায়িত্ব নেয়ার সময় সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। বর্তমানে আমরা সম্পূর্ণ দায় দেনামুক্ত। একটি টাকাও ঋণ নেই, যা বাংলাদেশের উদাহারণ। বাজেট ঘোষণাকালে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, সচিব খান মোঃ রেজাউল করিম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, ডিএসসিসির কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরগণ, সাধারণ নাগরিকগণ, বিভিন্ন দলে রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ ডিএসসিসিরি সব উর্ধতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। মেয়র বলেন, বর্তমানে আমরা চিন্তামুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারছি। যার জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী কর্পোরেশনের উন্নয়ন কর্মকা-ে এক হাজার ৭শ’ টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন। জাতীয়ভাবে যেখানে ঘোষিত বাজেটের শতকরা ৬০ ভাগ বাস্তবায়ন হয়, সেখানে ডিএসসিসি ৫১ ভাগ বাজেট বাস্তবায়ন করেছে। আয়তন ও লোকসংখ্যা অনুপাতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) চেয়ে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) উন্নয়নে এগিয়ে আছে দাবি করে সাঈদ খোকন জানান, ডিএসসিসির আয়তন ৪২ বর্গকিলোমিটার ও জনসংখ্যা ১৮ লাখ ৫০ হাজার। অপরদিকে ডিএনসিসির আয়তন ৮২ বর্গকিলোমিটার ও লোকসংখ্যা ২৫ লাখ। বাজেট বাস্তবায়নের হিসেবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ডিএনসিসি মাত্র ৪১ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন করলেও ডিএসসিসি ৫২ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন করে। ডিএসসিসি মেয়র বলেন, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ২ হাজার ৮৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সেই তুলনায় বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেট এক হাজার কোটি টাকারও বেশি। তিনি বলেন, এবার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের নিজস্ব উৎস থেকে ১ হাজার ৩৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে প্রায় সাড়ে ৯শ’ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। হোল্ডিং টেক্স সম্পর্কে মেয়র বলেন, এবারের বাজেটে হোল্ডিং টেক্স বাড়ানো না হলেও হোল্ডিং টেক্সে চলমান অসমতাকে সমতায় আনা হবে। বিশেষ করে পুরাণ ঢাকার অপেক্ষাকৃত কম আয়ের লোকদের হোল্ডিং টেক্স না বাড়ে তার জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া এক সঙ্গে বসবাস করে কোন বাড়ির হোল্ডিং টেক্স ২০ হাজার আবার কোন বাড়ির ২ হাজার টাকা হোল্ডিং টেক্স প্রদান করবেন তা হবে না। এ ক্ষেত্রে সমতা আনতে কাজ করব। তবে এ সমতা আমরা বিশেষ করে মতিঝিল এলাকায় গড়ে তোলা বিভিন্ন স্থাপনায় হোল্ডিং টেক্স নির্ধারণ করে সমতার কাজ শুরু করব। হকারদের পুনর্বাসন সম্পর্কে বলেন, আমরা গুলিস্তান এলাকার তালিকাভুক্ত সাড়ে ৩ হাজার হকারকে মার্কেট নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে ব্যবসার সুযোগ করে দেব। এর বাইরে সকল হারের তালিকার কাজ চলছে। সাঈদ খোকন জানান, এবার বাজেটে ডিএসসিসির নিজস্ব উৎস থেকে আয়ের খাতগুলো হলো- রেটস এ্যান্ড ট্যাক্স বাবদ বকেয়াসহ আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা, বাজার সালামি সাড়ে ৬শ’ কোটি, বাজার ভাড়া ৩০ কোটি, ট্রেড লাইসেন্স ফি বাবদ ৬৫ কোটি, রিক্সা লাইসেন্স বাবদ ৩ কোটি ৬০ লাখ, বাস-ট্রাক টার্মিনাল থেকে ৫ কোটি ৬০ লাখ, অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা বাবদ ৫ কোটি ৬০ লাখ, রাস্তা খনন ফি বাবদ ২৮ কোটি, যন্ত্রপাতি ভাড়া বাবদ ১০ কোটি, সম্পত্তি হস্তান্তর কর খাতে ৬৫ কোটি, শিশু পার্ক থেকে ৬ কোটি ৭০ লাখ, কমিউনিটি সেন্টার বাবদ আয় ৩ কোটি, অস্থায়ী আমানতের সুদ বাবদ ৩ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের সহায়তায় ঢাকা ইন্টিগ্রেটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড স্মার্ট সিটি ম্যানেজমেন্ট নামে দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নবেম্বরের শেষ নাগাদ কাজ শুরু হবে। প্রাথমিক অবস্থায় বাবুবাজার থেকে সদরঘাট পর্যন্ত উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া নাগরিকদের সুবিধার্থে নদীর নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে, অবকাশ যাপনের রিসোর্ট, পার্ক, বসার স্থান, পর্যটকদের জন্য প্রমোদতরী, রেস্তরাঁ ও ভাসমান বিনোদন কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
×