স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা এখন গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফটের মতো পৃথিবীসেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন অর্থাৎ আমরা বিশ্বমানের প্রযুক্তিবিদ তৈরি করতে পারছি। তিনি বলেন, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে রফতানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ২০১৮ সালের মধ্যে এ খাতে রফতানি আয় এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান দ্বিতীয়। ২০২১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে। এজন্যও লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আইসিটি খাতকে এ লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘বিপিও সামিট-২০১৫’ (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং)-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জয় এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো এ সামিট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকারের আইসিটি বিভাগ এবং বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার এ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) যৌথভাবে এটি আয়োজন করেছে। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ১০টি সেমিনার ও দুইটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। এতে ৮০জন দেশী-বিদেশী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, গত সাত বছরে প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে, যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তবে বিপিও’র ক্ষেত্রে গ্লোবাল মার্কেটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে হলে স্থানীয় মার্কেটকে উন্নত করতে হবে। আর তাই দ্বিতীয় বিপিও সামিটের সেøাগান ঠিক করা হয়েছে, স্থানীয় অভিজ্ঞতা, বৈশ্বিক ব্যবসা (লোকাল এক্সপিরিয়েন্স, গ্লোবাল বিজনেস)।
বিপিও খাতের সম্ভাবনা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, পৃথিবীতে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিংয়ের বাজার ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিবেশী দেশ ভারত এ খাতে বছরে আয় করছে ৮০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশেরও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে বিপিওতে আয় করার। সরকার এজন্য কল সেন্টার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করে প্রশিক্ষিত জনশক্তি তৈরির কাজ শুরু করেছে।
পাঠ্যবই নিয়ে জয় বলেন, স্কুলগুলোতে ছাপা পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি ওয়েবসাইটে এসব বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ পাওয়া যায়। খুব শীঘ্রই আমরা পাঠ্যবইগুলোর ই-বুক সংস্করণ নিয়ে আসতে যাচ্ছি। অর্থাৎ শুধু পিডিএফ নয়, সত্যিকার কাগজের মতোই ইলেকট্রনিক সংস্করণ তৈরি করা হবে পাঠ্যবইয়ের। তিনি বলেন, আইসিটি খাতের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার জন্য দেশের স্কুলগুলোতে স্বয়ংসম্পূর্ণ কম্পিউটার ল্যাব গড়ে তোলা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে তিন হাজারের বেশি কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এটি সম্ভব হয়েছে সরকারের যথাযথ আইটি পলিসির কারণে। আবার বিশ্বের যে সব দেশ বিপিও খাতে ভাল করছে, তারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিপিও খাতকে শক্তিশালী করেছে। তাই বিপিও খাতে বিশ্বে বাণিজ্যে টিকে থাকতে হলে আমাদের অভ্যন্তরীণ মার্কেটে এ খাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
অনুষ্ঠানের ‘গেস্ট অব অনার’ আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার (আইটিইউ) মহাপরিচালক হাউলিন ঝাও বলেন, বিপিও খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতির ধারা বজায় রাখতে হবে। এজন্য এ খাতে আরও দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। এজন্য সরকারী- বেসরকারী সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এ কাজে আইটিইউ বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাক্যর সভাপতি আহমেদুল হক, বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ ও আইসিটি সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার।
উদ্বোধন শেষে সজীব ওয়াজেদ সামিটে অংশ নেয়া বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের স্টল ঘুরে দেখেন। উদ্বোধন পর্ব শেষে সোনারগাঁওয়ের বলরুমে দিনব্যাপী একাধিক সেমিনার ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ‘গবর্নমেন্ট প্রসেস আউটসোর্সিং : গ্লোবাল বেস্ট প্র্যাকটিসেস’, ‘প্রোটেকটিং ডাটা এ্যান্ড প্রাইভেসি ইন কানেক্টেড ওয়ার্ল্ড’, ‘অপরচুনেটিজ ইন লোকাল এ্যান্ড গ্লোবাল বিপিও ফর ইউথ’, ‘বিগ ডাটা এ্যানালাইসিস ফর নিউ হরাইজন ইন বিজনেস ইন্টেলিজেন্স’, ‘ট্রেনিং ওয়ার্কশপ ফর কলসেন্টার এজেন্টস’ ও ‘চ্যালেঞ্জ এ্যান্ড সলিউশন্স ফর ওভারকামিং হার্ডেলস ইন আউটসোর্সিং অব গর্বনমেন্ট সার্ভিসেস’ শিরোনামে এসব সেমিনার ও ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিপিও সম্মেলনের এবারের আসরের সমাপ্তি ঘটবে।