ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন হাজার চুরাশির মা মহাশ্বেতা দেবী

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৯ জুলাই ২০১৬

চলে গেলেন হাজার চুরাশির মা মহাশ্বেতা দেবী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ চলে গেলেন ‘হাজার চুরাশির মা’ খ্যাত লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী। বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটা ১৬ মিনিটে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে পরলোকগমন করেন উপমহাদেশের এই বিশিষ্ট লেখিকা ও সমাজকর্মী। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তার মৃত্যুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ বিশিষ্টজনেরা শোক প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘদিন থেকে কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। গত ২২ মে ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এই প্রখ্যাত লেখিকার জন্ম ঢাকায়, ১৯২৬ সালের ১৪ জানুয়ারি। মহাশ্বেতা দেবীর পিতা মনীশ ঘটক। তিনি কল্লোল যুগের প্রখ্যাত সাহিত্যিক। বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক তার চাচা। আদিবাসী ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজীবন লড়াই করেছেন মহাশ্বেতা দেবী। খবর এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের। হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেছেন, মহাশ্বেতা দেবী এই হাসপাতালে এর আগেও বেশ কয়েকবার ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরে গেছেন। কিন্তু এবারের মতো এত সংকটজনক অবস্থায় পড়েননি তিনি। তার চিকিৎসাও কঠিন হয়ে পড়েছিল। মহাশ্বেতা দেবীর চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গড়া হয়েছিল ১০ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড। তার মরদেহে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কলকাতার রবীন্দ্রসদনে রাখা হবে। একই দিন শবমিছিল সহকারে তার মরদেহ কেরওড়াতলার মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে। এখানেই তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে টুইট করেছেন,দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শোকবার্তায় তিনি বলেছেন, তার মৃত্যুতে আমরা একজন ভাল লেখিকা হারালাম। তিনি কলমের সাহায্যে অনেক বিষয় সহজ করে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন ন্যায় বিচার ও সাম্যতার পক্ষের একজন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তিনি আমাদের শোক সাগরে ভাসিয়ে গেলেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এক টুইটার বার্তায় লিখেছেন, ভারত একজন মহান লেখক হারাল। আর বাংলা একজন ‘মহান’ মাকে হারাল। আর আমি হারালাম আমার ব্যক্তিগত অভিভাবক। মহাশ্বেতা দিদি, আপনার আত্মা শান্তিপাক। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর মহাশ্বেতার পরিবার বাংলাদেশ থেকে চলে যায় ভারতে। ইংরেজী সাহিত্যে এমএ করার পর কলেজে শিক্ষকতাও করেন তিনি। পরে লেখালেখি হয়ে ওঠে তার ধ্যানজ্ঞান। সেই সঙ্গে আদিবাসী এবং নারী অধিকার নিয়ে কাজের জন্য পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। বাম ঘরানার এই লেখক মুণ্ডা ও সাঁওতালদের সংগ্রামী জীবন নিয়ে যেমন লিখেছেন, তেমনি লোধা, শবরসহ বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য জীবনভর সংগ্রাম করেছেন। আবার বিভিন্ন সরকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও সরব ছিলেন তিনি। তার সাহিত্য কর্ম বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। দীর্ঘ সাহিত্য জীবনে বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন মহাশ্বেতা দেবী। এর মধ্যে র‌্যামন ম্যাগসাইসাই, পদ্মবিভূষণ, সাহিত্য এ্যাকাডেমি, পদ্মশ্রী, জ্ঞানপীঠ এ্যাওয়ার্ড, বঙ্গবিভূষণ উল্লেখযোগ্য। তার সাহিত্য কর্ম অরণ্যের অধিকার, অগ্নিগর্ভ, গণেশ মহিমা, হাজার চুরাশীর মা, চোট্টি মুণ্ডা, নীলছবি, বন্দোবস্ত, আই.পি.সি ৩৭৫, সাম্প্রতিক, শালগিরার ডাকে, কৃষ্ণা দ্বাদশী, ৬ই ডিসেম্বরের পর, বেনে বৌ, মিলুর জন্য, আঁধার মানিক, যাবজ্জীবন, শিকার পর্ব, অগ্নিগর্ভ, তিতুমীর, রুদালী ও ঊনত্রিশ নম্বর ধারার আসামি প্রভৃতি।
×