ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জঙ্গীবিরোধী কমিটি গঠন করা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৮ জুলাই ২০১৬

প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জঙ্গীবিরোধী কমিটি গঠন করা হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে জঙ্গীবিরোধী কমিটি গঠন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বুধবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ‘সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে আলিমদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, এ ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবার সমন্বয়ে জঙ্গীবিরোধী কমিটি গঠন করা হবে। ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় জঙ্গীবাদবিরোধী এ সভা। ইসলামী-আরবী বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত এক হাজার ৩০০ ফাজিল-কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষরা এ সভায় অংশগ্রহণ করেন। ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আক্তারুজ্জামান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হেলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান একেএম ছায়েফউল্যা, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব শাব্বির আহমেদ মোমতাজী এবং ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মাওলানা হুমাস উদ্দিনও প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, কেবল আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সমাজের সর্বস্তরে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি। আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখগণ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওয়াজ-নসিয়ত ও বক্তৃতার মাধ্যমে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা আল্লাহর আইনের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তারা তাদের ৫ বছরের শাসনকালে দেশে একটি মাদ্রাসা ভবনও নির্মাণ করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সাল থেকে সারাদেশে এক হাজার ৩৩২টি মাদ্রাসার নতুন ভবন নির্মাণ করেছে এবং আরও এক হাজার ৮০০ নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকার মাদ্রাসা শিক্ষায় কোরান হাদীসসহ ধর্মীয় বিষয়সমূহের পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করেছে। এতে মাদ্রাসার ডিগ্রীধারীরাও ডাক্তার, প্রকৌশলী হওয়ার পাশাপাশি বিসিএস অফিসারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ পাচ্ছে। যেসব শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কুপথে পরিচালিত করতে চায় তাদের চিহ্নিত করে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এ সময় পরিবারের ঐতিহ্যবাহী বন্ধনে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শও দেন মন্ত্রী। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জঙ্গীবাদে জড়িয়েছে বলে প্রমাণ হয়েছে সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বারবার আপনাদের বলা হয়েছে। আপনারা শোনেননি। আজকে আপনাদের কারণেই আমাদের সন্তান বিপথগামী। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, শিক্ষার্থীদের সর্বনাশ করে আপনারাও বাঁচতে পারছেন না। কেউ জেনে-শোনে-বুঝে তাদের সন্তান আপনাদের প্রতিষ্ঠানে পড়তে পাঠাবে না। শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, বিপথগামী এসব তরুণদের সংখ্যা খুবই কম। আমাদের সম্মিলিত উদ্যাগে খুব দ্রুত সময় বিপথগামীদের সঠিক পথে আনা সম্ভব। তিনি বলেন, এদের এখনই প্রতিরোধ করতে না পারলে ইরাক, আফগানিস্তানের মতো পরিস্থিতি হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের স্কলারশিপ এবং ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে কয়েকটি দেশ। তথাকথিত জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না হলে আরও কঠোর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। আলেম সমাজ এই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামান বলেন, শিক্ষকই ছাত্রদের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পায়। ক্ল¬াসরুমে পাঠ্যবইয়ের লেকচার ছাড়াও তার আচার-আচরণ ফলো করতে পারেন শিক্ষকরা। তার মধ্যে অস্বাভাবিক কোন কিছু দেখলে কাউন্সিলিং করে সঠিক পথে আনার ব্যবস্থা করুন। যেটি অভিভাবক বা অন্য কারও পক্ষে সম্ভব হয় না। ইসলামিক আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আহসান উল্লাহ বলেন, আজকের এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি পরিহার করে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক পর্যায়ক্রমে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। খোঁজখবর নিতে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে একটি দলকে গোয়োন্দা হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাবও দেন তিনি। শিক্ষক প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন- মোকামিয়া কমিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস এবং ফরিদাবাদ, আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. একেএম মাহবুবুর রহমান। তারা বলেন, যারা কোরান হাদীসের অপব্যাখা দিয়ে তরুণদের জঙ্গীবাদে জড়াচ্ছে তাদের মোকাবেলা করতে হবে কোরআন হাদীস দিয়েই। এজন্য জিহাদ ও জঙ্গীবাদের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরতে একটি পা-ুলিপি প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষরা। ফরিদগঞ্জ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. একে মাহবুবুল হক বলেন, ইসলাম কায়েমের নামে যারা নিজের জীবন উৎসর্গ করে অন্যকে হত্যা করছে এটা ইসলাম নয়। এটা সন্ত্রাস। এই সন্ত্রাসের মোকাবেলা করা আলেমদের ইমানী দায়িত্ব। তিনি বলেন, কোরানে জিহাদের আয়াতগুলোর ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তরুণদের সন্ত্রাসী বানানো হচ্ছে। এজন্য আলেমদের জিহাদ ও জঙ্গীবাদের পার্থক্য তুলে ধরতে হবে। কোরান হাদীসের যে আয়াতগুলোকে অপব্যাখা করা হচ্ছে। এর মোকাবেলা কোরানের আয়াত দিয়েই করতে হবে। তিনি কোরানের জিহাদ সংত্রুান্ত সব আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যার একটি পা-ুলিপি প্রকাশ করার দাবি জানান। সরকার এই পা-ুলিপি একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি দিয়ে মূল্যায়নের পর দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে দেয়ার দাবি জানান। ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মাওলানা হুমাস উদ্দিন বলেন, আলেমদের মধ্যে বিভাজন তৈরি জন্য একটি মহল এখনও তৎপরতা চালাচ্ছে। এদের চিহ্নিত করতে হবে। তিনি বলেন, বিতর্কিত বক্তা জাকির নায়েকের পিস টিভি বন্ধ করলে হবে না, বাংলাদেশে যেসব আলেম এই টিভিতে বক্তা ছিল বা অনুসারী তাদের গ্রেফতার করতে হবে। মাদ্রাসা জঙ্গী নেই, এই কথা ভেবে আমাদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস করলে চলবে না। কারণ আমাদের অতি আত্মবিশ্বাসে জঙ্গীরা এখানে ভিড় করতে পারে। এজন্য সব সময় সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
×