ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য বিশ্বে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৮ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য বিশ্বে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দেশে সাম্প্রতিক জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলায় বিএনপি-জামায়াত জোট জড়িত থাকতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, প্রতিটি ঘটনার পর তারা (বিএনপি) শর্তজুড়ে দিয়ে বলে যে, তাদের শর্ত মানলেই এসব জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ হয়ে যাবে! এসব সন্ত্রাসী হামলা ও জঙ্গীদের নিয়ে বিএনপি নেতারা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে মনে হয় তারাই প্রছন্নভাবে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। সাধারণ জনগণও মনে করে, তারাই এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এটা দুঃখজনক। হরতাল-অবরোধের নামে অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ হত্যা করেও সফলতা না আসায় পরবর্তীতে বিদেশী নাগরিকদের টার্গেট কিলিংয়ের ধারাবাহিকতায় গুলশানে ইতিহাসের জঘন্যতম জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এটা সত্য যে, এই ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ণ হয়েছে। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আবারও আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ত্বরিত ব্যবস্থা নিয়ে কল্যাণপুরে জঙ্গীদের দমন করায় আল্লাহর রহমতে দেশ ও জাতি আরেকটা বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে। এরা আরও একটি বড় ধরনের ঘটনার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে আমাদের আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে জঙ্গীদের দমন করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, যার যার অবস্থান থেকে ইতোমধ্যে সারাদেশেই জনগণের মধ্যে জঙ্গীবাদবিরোধী দৃঢ় অবস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্বল্পসময়ে আমরা সারাদেশে যে গণসচেতনতার সৃষ্টি ও জাতীয় ঐক্য গড়তে সক্ষম হয়েছি, তা পুরো বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি এদের অর্থদাতা, অস্ত্রদাতা, মদদদাতাসহ নেপথ্যে থাকা সকলকে খুঁজে বের করে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। বুধবার স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে একাধিক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার গঠনের পর থেকেই জঙ্গী-সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানো হচ্ছে। তবে বর্তমানে এই ঘটনা শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈশ্বিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই বিশ্বের কোন না কোন দেশে এমন হামলার ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, আমরা একটি রাজনৈতিক পক্ষের অগ্নিসন্ত্রাস মোকাবেলা করে দেশে যখন শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছি তখন এমন হামলার ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ক্ষুণœ করেছে। সংসদ নেতা বলেন, ইসলাম শান্তি ও পবিত্র ধর্ম। অথচ শান্তির এই ধর্মের নামে মানুষকে জঘন্যভাবে হত্যা করে সারাবিশ্বের সামনে সন্ত্রাসী-জঙ্গীদের ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্মান্ধ নন। কিন্তু কারা এসব সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের মদদ দিচ্ছে, অস্ত্র-অর্থ দিয়ে সহায়তা দিচ্ছে, প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ও উদ্ভট চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে বিভ্রান্ত করছে- সেটাই এখন দুশ্চিন্তার বিষয়। বিএনপি-জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে সংসদ নেতা বলেন, একটি রাজনৈতিক দল আছে যাদের জন্মই হচ্ছে হত্যা-ক্যু ও অবৈধ ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে। এরাই (বিএনপি) মার্শাল অর্ডিন্যান্স দিয়ে যুদ্ধাপরাধী ও নিষিদ্ধ জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। তারা এখন সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদে মদদ দিচ্ছে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত যারাই ধরা পড়ছে জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে যাচ্ছে তারা কোন রাজনৈতিক দল থেকে এসেছে, তাদের উত্থান কোথায় থেকে। অর্থাৎ এরাই (বিএনপি-জামায়াত জোট) সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়কন্ঠে বলেন, এদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। এদেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এক বিরল দৃষ্টান্ত। জঙ্গীবাদ এবং সন্ত্রাস কখনই এ দেশে প্রতিষ্ঠা পাবে না। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে। সরকারীভাবে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সচেতন ও সোচ্চার হওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। খুতবাহ তৈরি করে দেয়া হয়নি ॥ তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভা-ারীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে সারাদেশের মসজিদগুলোতে খুতবাহ তৈরি করে দেয়া হয়নি। জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কোরান ও হাদিসসমূহের উদ্ধৃতিগুলো পুস্তিকা ও লিফলেট আকারে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে আমাদের কোরান শরীফে বিভিন্ন সুরায় জঙ্গী এবং সন্ত্রাস ও খুন-খারাবির বিরুদ্ধে যে সমস্ত উক্তি রয়েছে, নবী করিম (স.) বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে যে সমস্ত কথা বলেছেন, এই যে খুন-হত্যা ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তিনি যে কথা বলেছেন, তিনি মানবতার পক্ষে কথা বলেছেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম হিসেবে যে সমস্ত উক্তি, হাদিস-কালামে যে সমস্ত উক্তি শান্তি ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে রয়েছে- সেগুলো নিয়ে ছোট পুস্তিকা করা হয়েছে। এটার সংক্ষিপ্ত একটা লিফলেটও বের করা হয়েছে এবং সেটাই মসজিদে মসজিদে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, খুতবাহ’র বিভিন্ন স্তর আছে। অন্তত পক্ষে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যে উদ্ধৃতিগুলো রয়েছে সেগুলো যেন পাঠ করা হয়। মসজিদের ইমাম সাহেবরা যে বয়ান দেন বা আমাদের ধর্মীয় গুরুরা যখন কথা বলেন- তাদের কিন্তু একটা জনমত সৃষ্টি করার সুযোগ আছে। তারা যেন জনমত সৃষ্টি করতে পারেন তার জন্যই দেয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের আমলেই জঙ্গীবাদের উত্থান ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত। স্বাধীনতার সূচনালগ্ন থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী এ চক্রের অব্যাহত ষড়যন্ত্র আজও থেমে নেই। বিগত দশম জাতীয় নির্বাচন এবং নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে দেশে নারকীয় তা-ব চালায়। এ সময় তাদের পেট্রোলবোমার আঘাতে কোলের শিশুও রেহাই পায়নি, যা এদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। এ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে জামায়াত আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিজেদের সংগঠিত করার সুযোগ পায়। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও তারা আধিপত্য বিস্তার করে। ফলে তাদের মতাদর্শের কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সুযোগ পেলেই সরকারবিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত হতে দেখা যায়। মূলতঃ বিএনপি-জামায়াত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এদেশে জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটে। তারা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গীবাদী ও অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করার অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়। জঙ্গী-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কথা তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট সরকার গঠন করে এবং জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়। ফলে এদেশের ধর্মভীরু ও শান্তিপ্রিয় মানুষের সহায়তায় জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে থাকেনি। গুলশানে জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেট্রোলবোমা মেরে, হরতাল ও অবরোধ করে সরকারের বিরুদ্ধে কোন সফলতা না পাওয়ায় তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে নিরপরাধ বিদেশী নাগরিকদের টার্গেট কিলিংয়ের মাধ্যমে হত্যা করে। একই সঙ্গে ব্লগার, প্রগতিশীল লেখকদের হত্যার মাধ্যমে পুনরায় এদেশে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটাতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১ জুলাই গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গীদের সংঘটিত ঘটনা এদেশের ইতিহাসে এক ঘৃণ্যতম কর্মকা-। যদিও জঙ্গীবাদ এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং বাংলাদেশ তার বাইরে নয়। জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে দেশব্যাপী ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মসজিদে খুতবা ও বয়ানের সময় সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করে এরূপ বক্তব্য যাতে প্রচারিত না হতে পারে সে লক্ষ্য গত ১৫ জুলাই জুমা থেকে সারাদেশের মসজিদগুলোতে ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা, সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের দায়-দায়িত্ব এবং জঙ্গীবাদ নির্মূলে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে অভিন্ন খুতবা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বেসরকারী টিভি চ্যানেলের তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে ॥ মূল প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে সন্ত্রাসীদের পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করতে পারে এমন সব প্রচারিত বিষয় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে এ কথাও সত্য যে, বিএনপি-জামায়াত জোট কর্তৃক সৃষ্ট এরূপ নাশকতামূলক কর্মকা- ও মানুষ হত্যা বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সকল ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ও প্রিন্টমিডিয়া জাতির সামনে তুলে ধরে তা প্রতিরোধে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধকরণসহ এর বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের পরিচালিত সহিংস ঘটনা ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করার মতো মানবতাবিরোধী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে তথ্য মন্ত্রণালয় ১৭টি সংবাদ সম্মেলন করে তাদের মুখোশ উম্মোচনসহ প্রকৃত ঘটনা দেশবাসীকে অবগত করেছে। যার ফলশ্রুতিতে এরূপ সহিংস ও অমানবিক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। সর্বোপরি, স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত নামক অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর কর্তৃক নির্মিত বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণসহ গণযোগাযোগ অধিদফতরের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সরকারী চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ ॥ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নোত্তরে সরকারী চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ পরবর্তী লেখাপড়া প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। বছরের পর বছর সেশন জট থাকত, সময়মতো ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দিতে পারত না। চাকরির বয়স পার হয়ে যেত। তিনি বলেন, সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়স প্রথমে ২৫ বছর এবং পরে ২৬ বছর করা হয়েছে। সেখান থেকে ৪ বছর বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়েছে। ত্রিশ বছর করার পরেও যদি কেউ চাকরি না পায় তাহলে তা দুঃখজনক। তিনি বলেন, এখন সেশন জট নেই, ২২-২৩ বছরের মধ্যে মাস্টার্স শেষ হয়ে যায়। চার বছর বাড়ানো হয়েছে, আর কত বাড়াতে হবে? তাহলে কি তারা পৌঢ় বয়সে চাকরি নেবে? ২২-২৩ বছরে যে মেধা ও কর্মক্ষমতা থাকে, ত্রিশের পর তা আস্তে আস্তে কমতে থাকে। আর তাছাড়া যারা পারে তারা সব সময়ই পারে। যারা পারে না তারা কোন সময়েই পারে না। কথায় তো আছে- ‘যে নয়তে পারে না, তারা নব্বইতেও পারে না। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি ॥ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সরকারী-আধা সরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বহুবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীদের অবসরের বয়স ৫৯ থেকে বৃদ্ধি করে ৬০ বছর করা হয়েছে। গণকর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়স ৫৭ থেকে ৫৯ করা হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো গণকর্মচারীদের জন্য বৈশাখি ভাতা চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে সকল স্তরের সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ এবং অনেক ক্ষেত্রে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে। চিকিৎসা ও শিক্ষা সহায়তা ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ১১৩ কর্মকর্তাকে সরকারের সচিব, ৬৯২ কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব, ১ হাজার ৪৮১ কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব এবং ১ হাজার ৮৯৬ জন কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। এ সময়ে ১০ম গ্রেডের ২৭৪ কর্মকর্তাকে নন-ক্যাডার সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল টেকনোলজি প্রত্যেক মানুষের দোরগড়ায় পৌঁছে দেব ॥ সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ডিজিটাল টেকনোলজির সুবিধা দেশের প্রতিটি স্তরে জনগণের দোরগড়ায় পৌঁছে দিতে সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রূপকল্প-২০২১-এর মূল উপজীব্য ডিজিটাল বাংলাদেশ। যার লক্ষ্য তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা। এ লক্ষ্য পূরণে ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রা। তিনি জানান, এ অভিযাত্রাকে কাক্সিক্ষত গন্তব্যের পথে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন প্রকল্প, কর্মসূচী, প্রচার ও প্রতিযোগিতামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে। এসব কর্মসূচী ও উদ্যোগেরও রয়েছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য। যার মধ্যে অন্যতম ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি রফতানি ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ও আইটি পেশাজীবীদের সংখ্যা ২০ লাখে উন্নীত করা এবং জিডিপিতে আইসিটি খাতের অবদান ৫ শতাংশ নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে আইসিটি অবকাঠামো ও কানেক্টিভিটি, ই-গবর্নেন্স, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, মোবাইল এ্যাপস উন্নয়ন এবং ই-কমার্স প্রসারে নানা প্রকল্প ও কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
×