ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কুড়িগ্রামে পানিবন্দী ৬ লাখ, দুই শিশুর মৃত্যু

নতুন এলাকা প্লাবিত

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২৮ জুলাই ২০১৬

নতুন এলাকা প্লাবিত

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ টানা ১০ দিন ধরে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। বুধবার সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ১০৬ সেন্টিমিটর ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৮৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও। বন্যার পানিতে ডুবে কুড়িগ্রাম সদর ও নাগেশ্বরী উপজেলায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান জানান, মঙ্গলবার মধ্যরাতে বাঘমারা গ্রামে রৌমারী শহররক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে উপজেলা চত্বর, উপজেলা ভূমি অফিস, পোস্ট অফিস, রৌমারী বাজার, রৌমারী ডিগ্রী কলেজ, রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়সহ আটটি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। রৌমারী উপজেলার সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অপরদিকে রাজীবপুর উপজেলা চত্বর, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস, খাদ্যগুদাম, পোস্ট অফিস, রাজীরপুর বাজার, রাজীবপুর ডিগ্রী কলেজেও পানি ঢুকেছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে ৯ উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। গাইবান্ধায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ঘাঘট নদীর পানি ৬৮ সে.মি এবং ব্রহ্মপুত্র নদের বালাসি পয়েন্টে ৫৮ সে.মি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কলাগাছের ভেলা বানাতে গিয়ে ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের উত্তর খাটিয়ামারী গ্রামে বুধবার সকালে বন্যার পানিতে ডুবে লালচানের (৫০) মৃত্যু হয়েছে। সাঘাটা-গাইবান্ধা, ফুলছড়ি সড়কের ভরতখালী ও উল্যাবাজার এলাকার ১০টি পয়েন্ট দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যে কোন সময় জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যাকবলিত জেলার সাঘাটা, ফুলছড়ি, সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৩২টি ইউনিয়নে পানিবন্দী সাড়ে তিন লাখ মানুষ দুর্ভোগের কবলে পড়েছে। জামালপুরে আড়াই লাখ নিজস্ব সংবাদদাতা জামালপুর থেকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টায় শেষ খবর পর্যন্ত বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৭ সেমিন্টমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। সিরাজগঞ্জ লক্ষাধিক স্টাফ রিপোর্টার সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বুধবার সকালে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে বাড়িঘরে পানি ওঠার কারণে বানভাসি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছে। অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধির কারণে সিরাজগঞ্জের পাঁচ উপজেলার চরাঞ্চলের ২৯টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভাগ্যকূলে পদ্মার পানি বিপদসীমার ওপরে স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, বুধবার নিম্নাঞ্চলের আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। পদ্মা তীরের বাড়িঘর জলমগ্ন ছাড়াও বহু ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। চরের বানভাসী মানুষের কষ্ট বেশি। পদ্মার পানি বুধবার দুপুরে ভাগ্যকূল পয়েন্টে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল। বন্যার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পদ্মার এ পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এদিকে এ সময়ে মাওয়ায় ৬ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে এখন বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। এদিকে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি ফেরি চলাচল বুধবারও বিঘিœত হয়েছে। শিমুলিয়া প্রান্তে দু’শতাধিক মালবাহী ট্রাকসহ দু’পারে ৪শ’ যান পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। এ ফেরিবহরে ১৭টি ফেরির মধ্যে এখন চলাচল করছে ৯টি ফেরি। তীব্র স্রোতের কারণে টানা ফেরি চলতে পারছে না। সুনামগঞ্জে দুই শতাধিক স্কুল বন্ধ নিজস্ব সংবাদদাতা সুনামগঞ্জ থেকে জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও প্রবল বৃষ্টিপাতে ১৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দুই শতাধিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও সাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে অন্তত ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। হাওড় এলাকার বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, ক্লাসরুমে পানি, বিদ্যালয় আঙ্গিনায় পানি, কোন কোন বিদ্যালয়ের একাধিক বিল্ডিংয়ের দু’একটিতে পানি ওঠায় শ্রেণীকক্ষ সঙ্কট, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমসহ যাতায়াত প্রতিবন্ধকতার জন্য শিক্ষার্থীদের বাবা-মা দুর্ঘটনার ভয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো বন্ধ রেখেছে। এর ফলে কার্যত বন্ধ রয়েছে দুই শতাধিক বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠদান। টাঙ্গাইলে ভাঙ্গনের কবলে তিন শতাধিক পরিবার নিজস্ব সংবাদদাতা টাঙ্গাইল থেকে জানান, টানা ভারি বর্ষণে ও পানি বৃদ্ধিতে নাগরপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ধলেশ্বরী নদীতে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। নাগরপুর উপজেলার মোকনা ইউনিয়নে ধলেশ্বরী নদী ভাঙ্গনের ফলে গত তিন দিনে বিলীন হয়ে গেছে আগদীঘলিয়া বাজার, বসতবাড়ি, পাকা রাস্তা, শ্মশানঘাট, কালীমন্দির ও ফসলি জমি। ফরিদপুরে চার ইউনিয়ন প্লাবিত নিজস্ব সংবাদদাতা ফরিদপুর থেকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে ১৯ সে.মি পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদরের চারটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। ওই চারটি ইউনিয়নের আট হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
×