ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হাতবদলে দ্বিগুণ হচ্ছে পণ্যমূল্য

বন্ধ হয়নি ডিও প্রথা

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২৮ জুলাই ২০১৬

বন্ধ হয়নি ডিও প্রথা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) প্রথার কারণে কয়েক দফা হাতবদলে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হয়। সাধারণ ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে ডিও প্রথা বাতিল করে সাপ্লাই অর্ডার (এসও) প্রথা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ২০১১ সালের জুন থেকে পণ্য বিপণনের ক্ষেত্রে ডিও ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে এসও প্রথা চালুর কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পাঁচ বছর পরও কার্যকর হয়নি এসও প্রথা। ব্যবসায়ীরা জানান, ডিও পদ্ধতিতে পণ্য কয়েক দফা হাতবদল হওয়ায় এর দাম অনেক বেড়ে যায়। অন্যদিকে পণ্য গুদামে পড়ে থাকে। ভোক্তার সুবিধার কথা বিবেচনায় এসও প্রথা চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নির্দিষ্ট সময়ে এসও প্রথা কার্যকর হলে পাইকারি দামে পণ্য কিনতে পারতেন সাধারণ ভোক্তারা। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য অধ্যাদেশ-১৯৫৬-এর আওতায় নয়া ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা ছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ-২০১১’ জারি করে। এর আওতায় প্রথম পর্যায়ে ভোজ্যতেল ও চিনি বিপণনে এসও প্রথা চালুর কর্মসূচী নিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস বিপণনে এসও প্রথা চালুর কথা বলা হয়েছিল। বিদ্যমান বিপণন ব্যবস্থায় অর্থাৎ ডিও প্রথা অনুযায়ী খুচরা দোকানিদের কাছে পরিবেশকরা পণ্য সরবরাহ করেন। এতে প্রতিবার হাতবদলে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়। এসও প্রথায় কোন অবস্থাতেই পণ্য হস্তান্তরযোগ্য নয়, অর্ডারের ১৫ দিনের মধ্যে খুচরা দোকানদারের কাছে পণ্য হস্তান্তর করতে হবে। এসও’র মেয়াদের মধ্যে পণ্য সরবরাহ না হলে অর্ডার বাতিল হবে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ-২০১১ অনুযায়ী এসও প্রথায় পরিমাপের ক্ষেত্রে ম্যাট্রিক পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। তরল পণ্য পরিমাপের ক্ষেত্রে লিটার ছাড়া অন্য কোন একক গ্রহণযোগ্য হবে না। পণ্যের মোড়কে পরিমাণ, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমঅরপি) সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, পণ্যের ন্যায়সঙ্গত সর্বোচ্চ মিলগেট মূল্য, বিতরণ মূল্য ও খুচরা বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করবে উৎপাদক, পরিশোধক বা আমদানিকারক। প্রতিক্ষেত্রেই অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক আবুল বশর বলেন, উৎপাদক, পরিশোধক বা আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী সমিতির সহযোগিতায় প্রতিটি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ ও মেয়াদ পদ্ধতি স্থির করা হবে। কোন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য হ্রাস, বৃদ্ধি বা পুনঃনির্ধারণ করতে হলে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ব্যবসায়ী সমিতির মাধ্যমে তা কার্যকর করার ১৫ দিন আগে তদারক সেল, ডিসি এবং ইউএনওকে জানাতে হবে। দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী আলম খোরশেদ জানান, বর্তমানে ডিও প্রথায় চিনি ও ভোজ্যতেল বাজারজাত করে শিল্পকারখানাগুলো। এ দুই পণ্যের পরিমাপের একক হিসাবে মণের উল্লেখ করা হয়। দেশের পাইকারি বাজারগুলোতে ডিও প্রথায় প্রতিদিন কয়েক শ’ কোটি টাকার তেল, চিনি এবং অন্যান্য পণ্য বিক্রি হয়। হাতবদলের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে এসব পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। খাতুনগঞ্জ ট্রেড এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখার জন্য শিল্পকারখানায় উৎপাদিত পণ্যের বিপণনে এসও প্রথা চালু জরুরী। এর পাশাপাশি চিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বেসরকারী খাতে আমদানির ব্যবস্থা করা উচিত। বেসরকারী খাতে চিনি আমদানি হলে বাজার অনেকটা স্থিতিশীল থাকে। তবে উচ্চ শুল্কহারের কারণে বেসরকারী খাতে চিনি আমদানি বন্ধ রয়েছে। এসও প্রথায় পণ্য বিক্রি হলে চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার অস্থির হতো না বলেও জানান তিনি। চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে শিল্পকারখানায় উৎপাদিত পণ্যের বিপণনে এসও প্রথা চালুর সিদ্ধান্ত কার্যকর করা প্রয়োজন। সরকারের ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ভোক্তাসাধারণ অবশ্যই সুফল পেত।
×