ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধর্মযাজক হত্যার মাধ্যমে যাত্রা শুরু

ইউরোপে আইএসের নতুন ফ্রন্ট

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৮ জুলাই ২০১৬

ইউরোপে আইএসের নতুন ফ্রন্ট

ইসলামিক স্টেট (আইএস) মঙ্গলবার এক ফরাসী ধর্মযাজককে হত্যা করার মাধ্যমে পাশ্চাত্যের সঙ্গে এর লড়াইয়ে এক নতুন ফ্রন্ট খুলেছে। ফ্রান্সের নরম্যান্ডি অঞ্চলের এক গির্জায় দু’সন্ত্রাসী ৮৫ বছরের ফাদার জ্যাঁক হ্যামেলকে জবাই করে। এর আগে তারা প্রার্থনা চলাকালে দু’সন্নাসিনীসহ উপাসনাকারীদের জিম্মি হিসেবে আটক করে। খবর টেলিগ্রাফ ও ওয়াশিংটন পোস্টের। ইউরোপের বিরুদ্ধে আইএসের লড়াই এক বিপজ্জনক নতুন মোড় নিয়েছে। এন্টি প্যারিস ও ব্রাসেলসের বড় বড় রাস্তায় খুবই সমন্বিত তৎপরতা থেকে পশ্চাদপদভূমিতে অপেশাদারদের নির্বিচার সন্ত্রাসী হামলার রূপ নিয়েছে। এতে যে কেউ, যে কোন স্থানে হামলার শিকার হতে পারে। গির্জা হামলাকারীদের অস্ত্র ছিল একটি ট্রাক, একটি কুড়াল, একটি ছুরি ও একটি বোমা। গত দু’সপ্তাহে ইউরোপে সংঘটিত হামলাগুলোর ত্বরিতগতি ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে হতভম্ব করে তুলেছে। কখনও কখনও সন্ত্রাসী হামলার জবাব দিতে গিয়ে স্থানীয় পুলিশকে স্থলযুদ্ধেই লিপ্ত হতে হয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার ফ্রান্সের ছোট শহর রাওয়েনের এক ধর্মযাজকের নৃশংস হত্যাকা-ের পর সহিংসতা বলতে গেলে বিদ্রোহের শুরু বলেই বোধ হয়েছে। আইএস বছরের পর বছর ধরে পাশ্চাত্যের এর প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের এ বিদ্রোহই উসকে দেয়ার চেষ্টা করে এসেছে। হামলাকারীদের মধ্যে চরমপন্থী দলটির প্ররোচিত মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তিরাও রয়েছে। দলটি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ‘একা একাই হামলা’ চালাতে সমর্থকদের প্রতি আহ্বানের মাত্রা বাড়িয়েছে। অন্যান্য হামলাকারী দলটির সঙ্গে অন্তত পরোক্ষ যোগাযোগ বজায় রেখেছে। ইউরোপের আরও দুটি ভয়াবহ সহিংস ঘটনা বিভ্রান্তি বাড়িয়ে তুলেছে। কারণ এ দুটি ঘটনায় হামলাকারীদের আদৌ কোন সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। এদের মধ্যে একটি ঘটনায় ইরানী জার্মান কিশোর মিউনিখে নির্বিাচরে গুলিবর্ষণে লিপ্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, হামলার অনিশ্চয়তার কারণে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর জন্য তাদের কাজ করা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্যস্থল কার্যত সীমাহীন, ঠিক যেমন যে কোন ব্যক্তিই যে কোন উপায়ে হামলা চালাতে পারে। লন্ডনের রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ রাফায়েলো প্যান্টুসি বলেন, সন্ত্রাসবাদের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। আমরা এভাবে হামলা চলতে থাকতে দেখছি। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। প্যান্টুসি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী এরই মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। আপনারা তা দীর্ঘকাল বজায় রাখতে পারবেন না। লোকজন ক্লান্ত হয়ে পড়বে। প্রেসিডেন্ট ওলাঁদের সঙ্কল্প ॥ ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফাঁসোয়া ওলাঁদ তার দেশে ধর্মযাজক হত্যার ঘটনার পর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার সঙ্কল্প ব্যক্ত করেছেন। জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে তিনি বলেন, গির্জায় হামলা করা, ধর্মযাজককে হত্যা করা প্রজাতন্ত্রকে অপবিত্র করারই নামান্তর। তিনি দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা আমাদের বিভক্ত করতে, আমাদের একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিতে চায়। আমরা এ যুদ্ধে জয়ী হব। ফ্রান্সের এক সময়কার প্রধানমন্ত্রী জ্যাঁ পিয়ারে রাফারিন আইএসকে কোন ধর্মযুদ্ধ উসকে দিতে দেয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দেন। ব্রিটেনের অন্যতম সিনিয়র রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজক ফাদার হ্যামেলের হত্যাকা-কে ‘বেদনাদায়ক’ বলে অভিহিত করেন। হামলাকারীরা এ হত্যাকা-ের ছবি তুলেছিল। দু’ঘাতক পরে পুলিশের গুলিতে মারা যায়। ঐ ঘটনা উপাসনালয়ের অরক্ষিত অবস্থা নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারণ আক্রান্ত গির্জাটি আইএসের হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্যস্থল ছিল বলে শনাক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার ব্রিটেনের পুলিশ সেদেশের খ্রীস্টানদের গির্জায় উপাসনালয় যোগ দেয়ার সময় সতর্ক থাকতে বলেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রার্থনালয়গুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য আরও ২৪ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে। ডেপুটি এ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার নেইল বাসু বলেন, যুক্তরাজ্যে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের ওপর হামলার সম্ভাবনা নিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য নেই। তবে আমরা দেখেছি, দায়েশ (আইএস) ও অন্যান্য সন্ত্রাসী দল পাশ্চাত্যে ও অন্যত্র খ্রীস্টান, ইহুদী ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়েছে। ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ঘটনার পর আমরা খ্রীস্টান উপাসনালয়গুলোকে বারবার নিরাপত্তা সম্পর্কিত পরামর্শ দিয়ে এসেছি এবং আজ সুনির্দিষ্ট পরামর্শ প্রচার করেছি। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঐ হত্যাকা- থেকে বোঝা যায় যে, জিহাদীরা মধ্যপ্রাচ্যে খ্রীস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা কৌশলগুলো ইউরোপে আমদানি করার চেষ্টা করছে।
×