ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাখাল চন্দ্র মিত্র

জঙ্গীবাদকে না বলুন

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৮ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীবাদকে না বলুন

জঙ্গীবাদ সুস্থতার লক্ষণ নয়। অসুস্থতার বহির্প্রকাশ। এটি একটি মনোবিকারিক অবস্থা। একটি ভাইরাস। এ ভাইরাস দ্বারা একবার আক্রান্ত হলে মানুষের সব সুকুমার বৃত্তি নষ্ট হয়ে যায়। শুভ-অশুভ, ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ, আলো-ছায়া, ধর্ম-অধর্ম বোধের বিলুপ্তি ঘটে। বিবেক বুদ্ধি মরে যায়, শুকিয়ে যায়। যে কোন উগ্রতা ও নির্মমতা পেয়ে বসে। প্রকৃতই এটি একটি ইবলিসীয় আদর্শ যা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনের সর্বক্ষেত্রে আতঙ্ক ছড়িয়ে সবকিছুকে অস্থির ও অস্থিতিশীল করে তুলতে উদ্যত হয়েছে। এটি একেবারে নতুন বা অভাবিত কিছু নয় কিন্তু। নতুন বোতলে পুরনো মদের ন্যায় এটি সাম্প্রতিক বৈশ্বিক চেহারা নিয়ে সমাজের সামনে আবির্ভূত হয়েছে মাত্র। মানবিকতা, সভ্যতা, শিক্ষা, সংস্কৃতি সবকিছুর মূলে আঘাত হানতে ধেয়ে আসছে যেন। নানাবিধ কারণে আধুনিক যুব সমাজের একটি অংশ (উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত, উচ্চ শিক্ষিত, মাদ্রাসা পড়ুয়া) ইহজাগতিক ভবিষ্যত সম্পর্কে অস্থিরতা এবং হতাশায় ভুগছে। বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের পক্ষ থেকে আখেরাতে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে। কিন্তু তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার বদলে কুশিক্ষার মাধ্যমে মগজধোলাই করে বেহেস্ত লাভের লোভ দেখিয়ে শুধু অন্যের প্রাণঘাতী নয় আত্মঘাতী হওয়ায় প্ররোচিত করা হচ্ছে। যারা এভাবে আত্মঘাতের পথে পা বাড়াচ্ছে তাদের বোঝাতে হবে এটি সঠিক পথ নয়। পিতা-মাতা-অভিভাবক, শিক্ষাগুরু-ধর্মগুরু, সমাজপতি, রাষ্ট্রনায়কসহ সকলকে এ দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। পাশাপাশি মদদদাতা, মন্ত্রণাদাতা (মগজ ধোলাইকারী) অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারী, পরিকল্পনাকারী, প্রযোজনাকারী অর্থাৎ নেপথ্যের কুশীলব গডফাদার-গডমাদার, বড় ভাইদের চিহ্নিত করে কঠিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায় বিচার ও মানবাধিকারের ধুয়া তুলে তাদের কোন রকম ছাড় দেয়া যাবে না। যারা জঙ্গী-সন্ত্রাসী, যারা অন্যের প্রাণহরণকারী, যারা সত্য-সুন্দরের আদর্শ অবমাননাকারী। তাদের কোন ক্ষমা বা স্থান এ দেশে হতে পারে না। তবে ক্রসফায়ার এনকাউন্টারের নাম করে তাদের হত্যা করে অপরাধ ও অপরাধীর নেপথ্য যোগসূত্র বিচ্ছিন্ন ও তথ্যসূত্র আড়াল করা সমীচীন হবে না। কোন জঙ্গী বা তাদের ছাতাধারী নেপথ্যের কোন কুশীলব একবার ধরা পড়লে যাতে আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে জামিন বা ছাড়া না পায় তার আইনী ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তদন্ত ও অনুসন্ধানকারী এবং বিচারিক কর্তৃপক্ষকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালকদেরও এ ক্ষেত্রে দায়-দায়িত্ব রয়েছে। দলীয় রাজনীতির ছত্রছায়ায় কাউকে আড়াল বা রক্ষা করা চলবে না। জঙ্গীর কোন রাজনীতি, কোন ধর্ম থাকতে পারে না। নেই যে তা তো প্রমাণিত। ধর্ম ও জিহাদের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে যুব সম্প্রদায়ের যে মগজ ধোলাই করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ইসলামী চিন্তাবিদ আলেম-ওলামাদের সোচ্চার হতে হবে এবং সঠিক ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তদের সুপথে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে ইসলামী শিক্ষার বাস্তবসম্মত এবং যুগোপযোগী সংস্কার সাধন করতে হবে। পৃথিবীর কোথাও কোন অমুসলিম থাকবে না। অমুসলিমদের কোন রাষ্ট্র থাকবে না। সারা বিশ্ব এক খেলাফত ও এক খলিফার অধীনস্থ থাকবে এ চিন্তা বাস্তবসম্মত কি? কোরান-হাদিসে এরূপ কোন নির্দেশ পাওয়া যাবে কি? তা যদি সম্ভব হতো তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমানরা এক জাতি এক রাষ্ট্রে পরিণত হত। তা যে হয়নি সেটাই সত্যি। জঙ্গীবাদ যে একটি রোগতুল্য সমস্যা তা পরিষ্কার। এ রোগ প্রতিরোধে জনগণকে এবার সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। গুটিকয়েক জঙ্গীর কারণে কোটি জনতার স্বাভাবিক জীবনযাত্রার গতি রুদ্ধ হয়ে যাবে তা হতে পারে না। হতে দেয়া যায় না। দল ও নেতাদের এবং দলদাস কতিপয় সুশীল নামধারী আসলে দুঃশীল সমাজের স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবীর জাতীয় ঐক্যের জিগির নয়, সাধারণ জনতার ঐক্যের ব্যানারে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ কৃষক-শ্রমিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক, প্রতিষ্ঠানের কর্মীবৃন্দ, ধার্মিক চিন্তাবিদ সকলে রাস্তায় নেমে সমবেতভাবে জঙ্গীবাদকে না বলতে হবে। জঙ্গীবাদ রাষ্ট্র, জাতি, সমাজ ও মানুষের জন্য অশনিসঙ্কেত। জঙ্গীবাদকে পরাস্ত করেই জাতীয় জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের এটাই হোক আজকের অঙ্গীকার ও শপথ। শান্তিবাগ, পটুয়াখালী থেকে
×