ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উৎকোচ সমাচার

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২৮ জুলাই ২০১৬

উৎকোচ সমাচার

কোন দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের মূলে থাকে সে দেশের দক্ষ জনশক্তি। কিন্তু কোন দেশের নাগরিকরা যদি যোগ্যতা এবং মেধার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ না পায় তাহলে উন্নয়নের স্বাভাবিক ধারা ব্যাহত হয়, দেশের প্রবৃদ্ধির গতি কমে যায়। বিভিন্ন সময়ে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে ঘুষ এবং দুর্নীতি নামক সামাজিক ব্যাধির প্রকোপকে। ঘুষ এবং দুর্নীতির শিকার বিশ্বের উন্নত, উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত প্রায় সব দেশই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে এই ঘুষ লেনদেন প্রক্রিয়ায় বিশ্বে প্রতিবছরে গড়ে দুই থেকে তিন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয়। যা বিশ্ব জিডিপির ২ ভাগের সমান। ‘দুর্নীতি : খরচ ও নির্মূলের কৌশল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে নির্দিষ্ট কোন দেশের দুর্নীতি কিংবা ঘুষের হিসাব উল্লেখ করা হয়নি। প্রতিবেদনটি মূলত ক’জন অর্থনীতিবিদ এবং দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়েছে। এতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় ঘুষ এবং দুর্নীতি উন্নয়নের যথার্থ পথকে বিঘিœত করে যা কোন দেশের দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির ধারাকে নানাভাবে ব্যাহত করে। সুষ্ঠু নীতিমালা, দক্ষ জনশক্তি এবং সঠিক নেতৃত্ব একটি দেশের সমৃদ্ধির পথে সহায়ক চালিকাশক্তি হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। এর অন্যথা হলে উন্নয়নের গতিধারা ব্যাহত হয়। পরিণতিতে সত্যিকার অর্থে দেশ পিছিয়ে যায়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ঘুষ এবং দুর্নীতি নামক রোগে আক্রান্ত। অতীতে ঘুষ আর দুর্নীতিতে বাংলাদেশের ‘শ্রেষ্ঠত্ব’ প্রমাণ হয়েছে একাধিকবার। তবে বর্তমানে অবস্থার উন্নতি হলেও বাংলাদেশ এখনও যথার্থ অর্থে এই বিরূপ অবস্থা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এই ব্যাধি দেশের সর্বস্তরে এমনভাবে জড়িয়ে আছে যা কোন দেশের নাজুক অবস্থা তৈরি করার জন্য যথেষ্ট। দেশের সরকারী, বেসরকারী, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই ঘুষ কিংবা উৎকোচ ছাড়া কাজ হয় না বললেই চলে। অবসরপ্রাপ্ত কোন সরকারী কর্মচারী পেনশন নিতে গেলেও তার এক কালের সহকর্মীকেই ঘুষ দিয়ে ফাইল নাড়াতে হয়। এর চেয়ে দুঃসহ অবস্থা আর কি হতে পারে? অর্থনীতির সচল চাকাকে এই ঘুষ নামক অশুভ শক্তি নানামাত্রিকে শিথিল করে দেয়, প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার গতি রুদ্ধ করে। ফলে দেশের সার্বিক অর্থনীতি চাপের মুখে পড়ে। বেকারত্ব বাড়ে, কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, দক্ষ ও যোগ্য জনসাধারণ তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়। ঘুষ লেনদেনের কারণে কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগে অনিয়মের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। যোগ্য ব্যক্তি তার যথার্থ অবস্থানে টিকতেও পারে না। এর মাসুল গুনতে হয় পুরো জাতিকে। দেশের উৎপাদনশীল খাত হুমকির মুখে পড়ে, শিক্ষার মান কমে যায়, দক্ষ জনশক্তি গড়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায় তৈরি হয়। যা পুরো দেশের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ। আইএমএফের প্রতিবেদনে ঘুষ ও দুর্নীতির বিরূপ প্রভাব, অর্থনৈতিক গতিশীলতা কমে যাওয়া এবং দেশের সামগ্রিক মানোন্নয়নে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াসহ আরও কিছু কারণকে এই অলিখিত অনিয়মের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। এই সর্বনাশা অব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হিসেবে সততা, দক্ষতা এবং নীতি- নিষ্ঠতার ওপর জোর দেয়া আবশ্যক। আমাদের এই ব্যাধি থেকে মুক্ত হয়ে দেশকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে সততা এবং কর্মদক্ষতার ওপর নির্ভর করে।
×