ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাজ্জিল

মিডওয়েস্টে জয় পেতে ট্রাম্প এখন মরিয়াৎ

প্রকাশিত: ০৭:১০, ২৭ জুলাই ২০১৬

মিডওয়েস্টে জয় পেতে ট্রাম্প এখন মরিয়াৎ

রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে বেশি ভোট টানবেন? সম্প্রতি তিনি এই রাজ্যগুলো বেশ গুরুত্ব দিয়ে সফর করেছেন। বক্তৃতা দিয়েছেন আক্রমণাত্মকভাবে। মুক্ত বাণিজ্যের অভিশাপে বেকারত্ব সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি আমেরিকার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। বলেছেন যে বিশ্বায়নের জোয়ারে আমেরিকার মধ্যবিত্ত শ্রেণী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। মিডওয়েস্ট ট্রাম্পের কাছে গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে । তার প্রার্থিতার কারণে প্রচলিত হিসাবগুলো বার বার ওলট পালট হয়ে গেছে। প্রাইমারীর আগে অধিকাংশ আমেরিকান নিশ্চিত ছিলেন যে পার্টির এমন একজনকে মনোনয়ন দেয়া দরকার যিনি হিসপ্যানিক ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন। কিন্তু মেক্সিকানদের অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ঠেকাতে ট্রাম্প দু’দেশের সীমান্তে দেয়াল তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাবের কারণে কলরাডোর মতো বরাবরের দোদুল্যমান রাজ্যগুলো বিগড়ে গেছে। আবার বিপুলসংখ্যক হিসপ্যানিক অধ্যুষিত ফ্লোরিডা ট্রাম্পের জন্য বৈরী ভূখ-ে পরিণত হয়েছে। এই শক্তি পুষিয়ে নেয়ার জন্য ট্রাম্পের এখন প্রয়োজন সেই রাজ্যগুলোকে আবার রিপাবলিকানদের পক্ষে টেনে আনা যেগুলোতে প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০১২ সালে জয়লাভ করেছিলেন। ট্রাম্প আমেরিকার এই প্রাণকেন্দ্রে জয়লাভ করতে পারেন এমন সম্ভাবনা কতখানি? উত্তর ইন্ডিয়ানার ৫০ হাজার লোক অধ্যুষিত শহর এলকহার্টের মতো জায়গাগুলো থেকে সেই উত্তর পাওয়া যেতে পারে। আর তা থেকেই ব্যাখ্যা পাওয়া যেতে পারে কেন ট্রাম্প মিডওয়েস্টকে নিজের জন্য এত অনুকূল ক্ষেত্র বলে ভাবছেন। আমেরিকার পুরনো শিল্প-কারখানা অঞ্চলগুলো রয়েছে এই মিডওয়েস্টে। এই অঞ্চলগুলোর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত যে সব শহর রয়েছে তার অন্যতম হলো এই এলাকাটি। মন্দার আঘাতে এখানে ২৪ হাজার লোক চাকরি হারিয়েছিল। বিনোদন যানের অন্যতম সর্ববৃহৎ প্রস্তুতকারক এলকহার্টের শ্রমশক্তির ২০ শতাংশের বেশি বেকার হয়ে পড়েছিল। দ্বিতীয়ত নির্বাচিত হওয়ার পর ওবামা প্রথম সফরে গিয়েছিলেন এই এলকহার্টে। পরেও একাধিকবার যান। সেখানকার পরিস্থিতি উন্নয়নে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দেন। গত জুন মাসে এলকহার্টের অর্থনৈতিক অগ্রগতির মূল্যায়ন করে দেখা যায় যে, বেকারত্ব নেমে এসেছে ৪.১ শতাংশে। হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েটের হার লাফ মেরে ৮৮ শতাংশে পৌঁছেছে। মর্টগেজের হার হ্রাস পেয়ে ৩.৭ শতাংশে নেমেছে। কিন্তু তার পরও এলকহার্টের মানুষ তাদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য ওবামাকে তেমন একটা কৃতিত্ব দিতে নারাজ। তাই দেখা যায় যে, প্রাইমারীতে তারা দলে দলে ট্রাম্প ও অপর বিদ্রোহী প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্সের পক্ষে ভোট দিয়েছে। গ্রেটার এলকহার্ট চেম্বার অব কমার্সের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ওবামার কোন ভূমিকা ছিল না। এই পুনরুদ্ধার আমরা নিজেরাই করেছি।’ তবে তিনি স্বীকার করেন যে ওবামার প্রণোদনা তহবিল অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়ক হয়েছিল। এলকহার্টের অনেক মানুষের পক্ষে জীবনধারণ করাটা এখনও নৈরাজ্যজনকভাবে কঠিন। ট্রাম্পকে তাদের পছন্দ হওয়ার এটাও এক মস্ত কারণ। ওখানে এখন প্রচুর কাজ আছে, চাকরি আছে। কিন্তু বেশিরভাগ কম বেতনের কিংবা পার্টটাইম কাজ। এক সমীক্ষায় দেখা যায় সেখানে মাঝারি গোছের পারিবারিক আয় ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে যা এক নিদারুণ নিরানন্দ চিত্র। এলকহার্ট হলো ইন্ডিয়ানার অংশ। এই ইন্ডিয়ানা রিপাবলিকানদের একটা স্তম্ভ। ২০১২ সালে মিট রমণী এ রাজ্যে জয়ী হয়েছিলেন। ট্রাম্পের মিডওয়েস্ট স্ট্র্যাটেজির লক্ষ্য হলো এ অঞ্চলের এ ধরনের সকল রাজ্যই জয়ী হওয়াÑ যেমন ড্যাকোটাস, নেব্রাস্কা, ক্যানসাস ও মিসৌরি। তার সঙ্গে ওহাইও, আইওয়াও মিশিগানেরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটারকে টানা। তবে মিশিগানে জয় পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। শেষবার রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এখানে জয়ী হয়েছিলেন ১৯৮৮ সালে। রক্ষণশীল বিশেষজ্ঞদের হিসাবে মিডওয়েস্ট ট্রাম্পকে জয়ী হতে হলে রমণী যত ভোট পেয়েছিলেন তার প্রায় সবই এবং ওবামা ভোটের প্রায় ৫ শতাংশ পেতে হবে। মিডওয়েস্ট কারখানা শিল্পের বেশ পুরনো অঞ্চল। ফলে শিল্প-কারখানাগুলোও ইতোমধ্যে বেশ পুরনো হয়ে গেছে। অঞ্চলটিতে শ্বেতাঙ্গরা সংখ্যায় বেশি, তুলনামূলকভাবে কম শিক্ষিত এবং এলাকাটি দেশের বাকি অংশের চেয়ে পুরনো। ২০০০ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত এই অঞ্চলের শিল্প-কারখানায় ৬০ লাখ লোক চাকরি হারিয়েছিল। সেই বিপর্যয়গুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা এখনও চলছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বেআইনী অভিবাসন এবং কর্পোরেট আউট সোর্সিংয়ের সমালোচনা করে ট্রাম্প যে বক্তব্য রেখেছেন তা এ অঞ্চলের মানুষের কাছে আবেদন সৃষ্টি করেছে। অর্থনৈতিক আত্মসমর্পণের যুগ চূড়ান্তরূপে শেষ হয়ে যাবে। ট্রাম্পের এই বক্তব্য সাড়া ফেলেছে তাদের মধ্যে। এখন দেখা যাক সত্যিই মিডওয়েস্টে জয়ী হতে পারবেন কিনা তিনি।
×