ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে ত্রাণ পাচ্ছে না বন্যাকবলিত সাড়ে তিন লাখ মানুষ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৭ জুলাই ২০১৬

কুড়িগ্রামে ত্রাণ পাচ্ছে না বন্যাকবলিত সাড়ে তিন লাখ মানুষ

রাজু মোস্তাফিজ, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমোর নদের দুর্গম চর-দ্বীপচরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে এসে ॥ ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চর কালীর আলগা। কুড়িগ্রাম ও তার আশপাশের এলাকায় টানা ৮ দিন পর মঙ্গলবার পরিষ্কার সূর্য উঠেছে আকাশে। যাত্রাপুর বাজার থেকে নৌকা পথে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর দিয়ে যেতে প্রায় এক ঘণ্টার মতো সময় লাগে কালীর আলগা গ্রামে যেতে। ব্রহ্মপুত্রের পানিতে তীব্র স্রোত। যেদিকে তাকাই শুধু পানি আর পানি। ঘড়ির কাঁটায় তখনও ১২টা বাজেনি। এই গ্রামের গৃহবধূ রহিমা বেগম স্বামী মোঃ কোরবান আলী। ৫ সন্তান তাদের। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দুপুর বেলা রহিমা বেগম একা বাড়িতে বসে আছেন। ঘরে তখন এক হাঁটু আর বাড়ির আঙ্গিনায় এক কোমর পানি। পানির তীব্র স্রোত দেখে সকাল থেকে তার সন্তানরা কাঁদছিল। কান্না সহ্য করতে না পেরে ওদের বাবা কোরবান আলী তাদের পাশর্^বর্তী বেগম রোকেয়া আবাসন কেন্দ্রে রাখতে গিয়েছে ফেরেনি তখনও। সকাল থেকে একটি দানাও পেটে পড়েনি তার। একটু বাসি ভাত ছিল তাই সন্তানদের খেতে দিয়েছিল। ঘরে যে চাল মজুদ ছিল তাও শেষ হবার উপক্রম হয়েছে। ধার-দেনা করে চলছে কোনরকমে। সন্তানদের বাঁচানোর তাগিদেই স্বামী-স্ত্রী নিজেরাই কম খেয়ে চাল বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করছে। শুধু রহিমা বেগম নন, পশ্চিম কালীর আলগার সাইদ আলী, কেফাত আলী, নুর ইসলাম, মতিয়ারসহ পশ্চিম কালীর আলগা গ্রামের ৮০টি পরিবারের একই অবস্থা। অধিকাংশ ঘর তলিয়ে রয়েছে বন্যার পানিতে। এবারের পানির যে স্রোত এক দশকে তাও দেখেনি চর-দ্বীপচরের মানুষরা। যেখানে গিয়েছি শুধু অভিযোগ কেউ ত্রাণ পায়নি। তারা রিলিফ পাচ্ছে না ভিক্ষাতেও নামছে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে কিভবে যে এরা বাঁচবে নিজেরাও জানে না। কুড়িগ্রামের বন্যা দুর্গত এলাকার এই শ্রেণীর মানুষদের সংখ্যাই শতকরা ৬০ ভাগ। একটি ক্ষুদ্র অংশের বিত্তবান ছাড়া বাদবাকিরা দিনমজুর ও অতিঅভাবী মানুষ। মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি করতেই কয়েকদিন সময় লেগে যায়। তার পরও জেলায় এ পর্যন্ত ১শ’ ৯২ টন জিআর চাল বিতরণ করা হয়েছে। আর ৮ লাখ ৭৫ হাজার বিতরণ করা হয়েছে। যা মাথাপিছু বরাদ্দ ৯৬০ গ্রাম চাল ও ৪ টাকা ৩৭ পয়সা। ফলে প্রতিদিন জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে বাড়ছে ভুখা মানুষের ভিড়।
×