ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তার চরে ফুড বাস্কেট লণ্ডভণ্ড

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৭ জুলাই ২০১৬

তিস্তার চরে ফুড বাস্কেট লণ্ডভণ্ড

তাহমিন হক, তিস্তার ফ্লাড বাইপাস ঘুরে এসে ॥ তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস ঘিরে উজানের ঢলের পানির চাপ বাড়ছে। এটি বিধ্বস্ত হলে তিস্তা নদীর গতিধারা আরেক দফা পাল্টে যেতে পারে এমনই আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। ফলে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ফ্লাড বাইপাস এলাকায় সর্তকতা জারি করা হয়েছে। এদিকে উজানের প্রচ- ঢলে তিস্তার বিভিন্ন চরে উৎপাদিত ফসলের ভা-ার ওই ফুড বাস্কেট আজ ল-ভ- হয়ে গেছে। গত ১৫ দিন যাবত উজান থেকে ধেয়ে আসছে তিস্তায় ঢল। তিস্তা নদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও বাংলাদেশের নীলফামারীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর বাংলাদেশে প্রবেশ করে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। সিকিম হিমালয়ের ৭০,২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চিতামু হ্রদ থেকে এ নদীটির সৃষ্টি। এটি দার্জিলিংয়ে অবস্থিত শিভক গোলা নামে পরিচিত একটি গিরিসঙ্কটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দার্জিলিং পাহাড়ে তিস্তা একটি বন্য নদী এবং এর উপত্যকা ঘন বনে আচ্ছাদিত। পার্বত্য এলাকায় এর নিষ্কাশন এলাকার পরিমাণ মাত্র ১২,৫০০ বর্গকিলোমিটার। পার্বত্য এলাকা থেকে প্রথমে প্রবাহটি দার্জিলিং সমভূমিতে নেমে আসে এবং পরে পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) আলীদুয়ার সমভূমিতে প্রবেশ করে। অষ্টাদশ শতকের প্রায় শেষ পর্যন্ত এ ধারাটি বিভিন্ন নদীপ্রবাহের মাধ্যমে গঙ্গা নদীতে প্রবাহিত হতো। ১৭৮৭ সালের অতিবৃষ্টি একটি ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি করেছিল এবং তখন নদীটি গতিপথ পরিবর্তন করে নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলমারী নদীবন্দরের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদে পতিত হয়। তিস্তা নদীর সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৩১৫ কি.মি, তার মধ্যে ১১৫ কি.মি বাংলাদেশ ভূখ-ে অবস্থিত। আর ২০০ কি.মি ভারতে। তিস্তা এক সময় করতোয়া নদীর মাধ্যমে গঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এবং এর অংশবিশেষ এখনও বুড়ি তিস্তা নামে পরিচিত। গত বছর পর্যন্ত নদীটি ভারতের মেখলিগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালীগঞ্জ জিরো পয়েন্ট সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে দীর্ঘদিন ধরে প্রবাহিত হয়ে আসছিল। কিন্তু গত ১৫ দিনের উজানের ঢলে পাল্টে দিয়েছে বাংলাদেশ অংশের তিস্তার গতিপথ। তিস্তা এখন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডান তীর ছেড়ে বাম তীরে সরে গেছে। ফলে জনবসতিপূর্ণ চরখড়িবাড়ি ও পূর্বখড়িবাড়ি মৌজার সাতটি চর গ্রাম, হাটবাজার-স্কুল, আবাদি জমি এখন সব তিস্তা নদীতে পরিণত হয়েছে। তিস্তার চরে ভুট্টা আবাদ থেকে অনেক কিছুই উৎপাদন হয়ে থাকে। তিস্তার চর হয়ে ওঠে ফুড বাস্কেট। নদীর পাড়ের জীবনধারা ভিন্ন। ধীরে ধীরে তিস্তাপাড়ের চর ও চর গ্রামের মানুষজনের জীবনমান পাল্টে যায়। খাদ্য সঙ্কট দূর হয়। চরের পুকুরে মাছ চাষ যেন তাদের লাখোপতি বানিয়ে দেয়। অন্ধকার চরের প্রতিটি বাড়ি, হাটবাজারে জ্বলে ওঠে সোলার প্যাানেলের ঝলমলে আলো। তিস্তাপাড়ের পরিবারগুলোর শিশুরাও বড় হয়ে ওঠে মাছে-ভাতে। আজ ওই এলাকাগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে তিস্তার রুদ্রমূর্তি ধারণে। তিস্তার বাঁধে আশ্রয় নেয়া চরখড়িবাড়ি গ্রামের শাহার আলী জানায়, আমরা শেষ হয়ে গেছি। আমাদের চার ভাইয়ের প্রায় এক শ’ বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। ঘরের মধ্যে রাখা প্রায় এক শ’ মণ ভুট্টা, ২৫ মণ বাদাম, ১৫ মণ মরিচসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল ভেসে গেছে। শুধু ঘরের কিছু টিনের চাল ছাড়া কিছুই নিতে পারিনি। আমরা নিঃস্ব হয়েছি। শুধু শাহার আলী ও তার চার ভাই নয়, ১৬ গ্রামের হাজারো পরিবারের একই দশা বলে জানাল ওই সব গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন।
×