ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ চাই ॥ এমপিদের শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৭ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ চাই ॥ এমপিদের শেখ হাসিনা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে এখন থেকেই আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য এমপিদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের আর মাত্র দুই বছর তিন মাস বাকি আছে। তাই এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য এলাকায় গিয়ে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোরও নির্দেশ দেন তিনি। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের নবম তলার সরকারী দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের জরুরী বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশ দেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে সজাগ ও সতর্ক থেকে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদবিরোধী জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সব অঞ্চলে শুধু জঙ্গীবাদবিরোধী কমিটি গঠন করলেই চলবে না, এসব কমিটিগুলোকে কার্যকর করে নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গী-সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। সর্বত্র এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের মধ্যে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশে যেন শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে, মানুষ যেন নিরাপদে থাকে- সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংসদ সদস্যদেরও পদক্ষেপ নিতে হবে। নিজ নিজ এলাকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে সারাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ কমিটি গঠনে দলীয় সংসদ সদস্যদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে সংসদ নেতা আরও বলেন, দেশের দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে এই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলতে হবে। এগুলোকে সত্যিকার অর্থেই কার্যকর করে তুলতে হবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িতদের পাশাপাশি এদের কারা মদদ দিচ্ছে, বিপথে চালিত করছে, অর্থ-অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে সেসব মূল হোতাদের আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের উৎস খুঁজে বের করে একে পুরোপুরি দমন করতে চায়। এজন্য অন্য সবার মতো সংসদ সদস্যদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। বৈঠক সূত্র আরও জানিয়েছে, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্যও দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে যে অভিন্ন খুতবা দেয়া হয়েছে, সেটি সব মসজিদে সঠিকভাবে পাঠ করা হচ্ছে কিনাÑ সেটি নিশ্চিত করতে হবে। ‘বর্তমানে যে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ চলছে, সেটি প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা নয়’Ñ শোলাকিয়ার খতিব ফরিদ উদ্দীন মাসঊদের নেতৃত্বে দেশের এক লাখ আলেমের যৌথ বিবৃতিও দেশজুড়ে প্রচার করতে হবে। এটি নিশ্চিত করতে সংসদ সদস্যদেরও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কেউ আর যাতে ইসলামের নামে জঙ্গীবাদে যুক্ত না হয়, বিপথে না যায়- অভিভাবক ও শিক্ষকদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সংসদ সদস্যদের কার্যকর ভূমিকা পালনেরও নির্দেশ দেন তিনি। দলীয় সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সংসদ অধিবেশন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে মনোযোগী হতে হবে। এলাকার মানুষের পাশে থেকে তাদের সাহস যোগাতে হবে। চলমান উন্নয়ন কাজগুলো তদারকি করে এগুলো এগিয়ে নিতে হবে। আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে বর্তমান সরকারের আমলে নিজ নিজ এলাকার উন্নয়ন কর্মকা-গুলো বুকলেট আকারে ভোটারদের সামনে ব্যাপকভাবে তুলে ধরার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, সরকারের যেসব উন্নয়ন কাজ হয়েছে, আরও কি কি উন্নয়ন কাজ করা হবেÑ সেগুলো বার বার জনগণের মাঝে ভালভাবে তুলে ধরতে হবে। নির্বাচনের তিন মাস আগেই দলকে পুরোপুরি প্রস্তুত রাখতে হবে। সেজন্য এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। এ সময় এমপিদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা গ্রুপিং সৃষ্টি না করার নির্দেশ দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের জন্য কাজ করার তাগিদ দেন। এছাড়া সভায় জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন আইন অনুযায়ী হবে, এ বছরই হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সংরক্ষিত আসনের নারী এমপিদের নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা তৈরি না করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, নারী এমপিরা দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। মহিলা আসনে যেসব এমপি আছেন, তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকা তৈরি করার দরকার নেই। তাদের আমি মনোনয়ন দেব না। আপনাদের যেজন্য এমপি বানিয়েছি সেই সংগঠন গোছানোর কাজ করুন। নিজে নিজে এমপি প্রার্থী হওয়া যাবে না, মনোনয়ন দেব আমি। কে মনোনয়ন পাবে সেটা আমি দেখব। আপনারা সংগঠনের জন্য কাজ করুন। নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা তৈরি করতে গিয়ে আমাদের আসনগুলো নষ্ট করলে কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে অল্প সময়ের মধ্যে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটলেও সরকার এ পর্যন্ত সফলভাবেই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলা করছে। যে কোন ঘটনা ঘটার পর পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বল্পতম সময়ে সেগুলো দমন করেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সঠিকভাবে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে। তারা এসব ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এ তদন্তের অগ্রগতিও হচ্ছে। ঢাকার কল্যাণপুরে জঙ্গী দমনের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, সারারাত ধরেই জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘেরাও করে রেখেছিল। রাতে অভিযান চালালে নিরপরাধ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, এজন্য সকালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সফলভাবেই অভিযান চালিয়ে এসব জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের দমন করে। দলীয় সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি নারী সংগঠনগুলোকে চাঙ্গা করার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এখন পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ছে। তাই সারাদেশে এদের প্রতিরোধে নারী সংগঠনকে শক্তিশালী করে নারী সমাজের মাঝেও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে হবে। বৈঠকে সরকারদলীয় কয়েকজন সংসদ সদস্যও বক্তব্য দেন। তাঁরা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
×