ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেসরকারী ভার্সিটির বাইরের ক্যাম্পাস ও দারুল ইহসান বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৭ জুলাই ২০১৬

বেসরকারী ভার্সিটির বাইরের ক্যাম্পাস ও দারুল ইহসান বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেপরোয়া সনদ বাণিজ্য, মালিকানার বিরোধ, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে অবশেষে বেসরকারী দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। একই সঙ্গে সকল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাসও বন্ধ ঘোষণা করে আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশে সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে এই আদেশ জারি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। দেশে বর্তমানে ৯৫ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারী অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা সঙ্কট, অনিয়ম, দুর্নীতি ও আউটার ক্যাম্পাসের মাধ্যমে ‘সনদ বাণিজ্য’ বন্ধ করাসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ২০১০ সালের অক্টোবরে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজী এবাদুল হককে প্রধান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিটি করে সরকার। ২০১৩ সালের মার্চে বিচার বিভাগীয় সেই কমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দেয়, যাতে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সুপারিশ করা হয়। এর পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি তথা আচার্যকে সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দারুল ইহসানসহ ১২ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ ক্যাম্পাসে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সতর্ক করে দেয়। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিলেও উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। সম্প্রতি হাইকোর্টের রায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে যাওয়ায় বিতর্কিত ওই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেয়া হলো। এদিকে সকল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস সরকারী ঘোষণা অনুসারে বন্ধই থাকার কথা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি এমনকি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়েরও আইন অনুসারেও এসব বৈধ নয়। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েক দফা ঘোষণার পরও অন্তত ১৫টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আদালতে গিয়ে সরকারের আদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আছে সনদ বাণিজ্যের ব্যাপক অভিযোগ। আবার অনেকে রাজধানীর মধ্যে আউটার ক্যাম্পাস তৈরি করে দাবি করে এটা তা নয়। এটা হলো ‘এনেক্স ভবন’। ভাড়া বাড়িতে একটি কক্ষ নিয়ে শিক্ষা বাণিজ্য। এমন অবস্থায় মঙ্গলবার আবার সব বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। হাইকোর্টের সম্প্রতি এক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে বলে তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইনে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা বলা হলেও তারা কালক্ষেপণ করে আদালতের স্টে অর্ডার নিয়ে আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনা করছিল। পরে আদালতের আদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ নির্দেশ দেয়। আর দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের নিজেদের মধ্যে বিভেদ থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। উল্লেখ্য, বেসরকারী ১২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮টি শাখা ক্যাম্পাসে ভর্তিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সতর্ক করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোÑ দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি,অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আরও আছে দি পিপলস ইউনিভার্সিটি, আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, কুইন্স ইউনিভার্সিটি ও শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনটির কোন কোন ক্যাম্পাস অননুমোদিত, কোনটির ক্যাম্পাসের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ এবং কোনটির ক্যাম্পাসের অনুমোদন বাতিল হলেও আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যেসব ক্যাম্পাসে ভর্তির ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে তাদের ঠিকানাও প্রকাশ করে ইউজিসি। ইউজিসি বলেছিল, আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ইউজিসির ওই আদেশের পর অনেকেই তাদের আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করেছে বলে ইউজিসিকে চিঠি দিয়েছে। অনেকে বন্ধের দাবি করলেও বাস্তবে সনদ বাণিজ্যের জন্য তা চালু রাখছে। আবার অনেকে সরকারের আদেশকে থোড়াই কেয়ার করে চলছে।
×